Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
ঝেঁতল্যায় মৃত কিশোর

সাপের ছোবল বুঝলে হয়তো মরতে হত না

লোডশেডিংয়ের সময় গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছিল কিশোর ছেলেটা। তখনই পায়ে ছোবল পারে সাপ। কিন্তু সে তা বুঝতে পারেনি। কোনও পোকা কামড়ছে ভেবে আমলই দেয়নি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৭ ০২:১৯
Share: Save:

লোডশেডিংয়ের সময় গ্রামের রাস্তায় হাঁটতে বেরিয়েছিল কিশোর ছেলেটা। তখনই পায়ে ছোবল পারে সাপ। কিন্তু সে তা বুঝতে পারেনি। কোনও পোকা কামড়ছে ভেবে আমলই দেয়নি। যখন বোঝা গেল ওটা সাপের ছোবল, তখন দেরি হয়ে গিয়েছে। ফলে, হাসপাতালে নিয়ে গিয়েও আর বাঁচানো যায় কেশপুরের ঝেঁতল্যার বাসিন্দা অমিত খান (১৬)। ঝেঁতল্যা হাইস্কুলের ছাত্র অমিত এ বারই মাধ্যমিক দিয়েছিল।

অকালে এই কিশোরের মৃত্যু আরও একবার প্রমাণ করে দিল, গাঁ-গঞ্জে সাপের ছোবল নিয়ে সচেতনতায় এখনও ফাঁক রয়েছে। অমিত যেখামে পড়ত, সেই ঝেঁতল্যা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নারায়ণপ্রসাদ চৌধুরী বলছিলেন, “সাপের ছোবল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। না হলে এ ভাবেই বেঘোরে আরও প্রাণ চলে যেতে পারে।” পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও মানছেন, “এটা ঠিক, সর্প দংশনে কী করণীয়, সেই সম্পর্কে সকলে সমান সচেতন নন। বেশি নড়াচড়া করলেও সর্পদষ্টের মৃত্যু হতে পারে। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সব রকম চেষ্টা করছি আমরা।”

কেশপুরের ঝেঁতল্যার জুয়েরা গ্রামে বাড়ি অমিতের। শুক্রবার রাতে লোডশেডিংয়ের সময় গরম লাগায় বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিল সে। হাঁটতে হাঁটতে বেশ কিছুটা চলে গিয়েছিল। তখনই পায়ে ছোবল মারে সাপ। অমিত ভেবেছিল, পোকা কামড়েছে। শরীরে কোনও উপসর্গও দেখা দেয়নি। তাই বাড়ি ফিরে কাউকে কিছু বলেওনি সে। খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। শনিবার ভোরে তার পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। সকালে পরিজনেরা অমিতকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করান। শনিবার গভীর রাতে মেডিক্যালের আইসিইউ-তেই মৃত্যু হয় ওই কিশোরের। ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন অমিতের বাবা স্বপন খান। তিনি বলেন, ‘‘পেটে ব্যথা শুরুর আগে আমরা তো কিছুই বুঝিনি। যদি বোঝা যেত ওটা সাপের ছোবল, তাহলে ছেলেটাকে এ ভাবে হারাতে হত না।’’

জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলছিলেন, “কয়েক ঘন্টা কেন, একদিন-দু’দিন পরেও অনেক সর্পদষ্টের উপসর্গ দেখা হয়। চোখ বুজে আসে, গলা শুকিয়ে আসে, পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়।” তাই সামান্য কিছু হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি বলেই স্বাস্থ্যকর্তাদের মত।

রবিবার দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যালের মর্গে ওই কিশোরের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। পরে তার দেহে ফেরে গ্রামে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তরতাজা ছেলেটার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। অমিতকে শেষ দেখা দেখতে ভেঙে পড়ে গোটা গ্রাম। পড়শি থেকে বন্ধু সকলের চোখে জল। সকলেই বলছেন, ‘‘এমন মিষ্টি স্বভাবের ছেলেটার এই পরিণতি হল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Snake Bite Keshpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE