কাজ হয়নি। বিভিন্ন প্রকল্পে পড়ে থাকা এক কোটিরও বেশি টাকা ফেরত দিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের এক সূত্রে খবর, সম্প্রতি এই টাকা ফেরানো হয়েছে। পড়ে থাকা টাকা ফেরত দেওয়ার কথা মানছে জেলা পরিষদও। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের কথায়, “বিভিন্ন প্রকল্পে কিছু টাকা পড়েছিল। সব দিক খতিয়ে দেখে সেই টাকা ফেরানো হয়েছে।” জেলা সভাধিপতির বক্তব্য, “এখন আর জেলা পরিষদে তেমন কোনও টাকা পড়ে নেই।” জেলা পরিষদের সচিব প্রবীর ঘোষও মানছেন, “বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় না হওয়া কিছু অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে।”
বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয় নিয়ে আগেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদকে। জেলা পরিষদের তহবিলে মোটা অঙ্কের টাকা পড়ে থাকায় বছর দু’য়েক আগে এক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিল জেলা পরিষদ। মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, টাকা পড়ে থাকবে, অথচ কাজ হবে না, এটা চলবে না। এরপর পড়ে থাকা টাকা খরচে উদ্যোগী হয়েছিল জেলা পরিষদ। গত বছর জেলায় এসেও পড়ে থাকা কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেয়েছিলেন জেলার একাধিক প্রশাসনিক কর্তা। মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘কাজ ফেলে রাখা যাবে না। এমন চলতে থাকলে কিন্তু প্রশাসনের খোলনলচে বদলে দেবো।’ মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পরই নড়ে বসে জেলা পরিষদ।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তৃণমূলের এক সূত্রের মতে, এই জন্যই গ্রামস্তরে সরকারি পরিষেবা দ্রুত পৌঁছনো নিশ্চিত করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা পরিষদের এক সূত্রের দাবি, বছর খানেক ধরেই পড়ে থাকা টাকার পরিমাণ কমানোর চেষ্টা হয়েছে। সম্প্রতি পড়ে থাকা অর্থ ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয় রাজ্য। সরকারি নির্দেশ জেলায় এসে পৌঁছয়। নির্দেশ আসার পরই ফাইল ঘেঁটে আধিকারিকেরা দেখতে শুরু করেন, কোন প্রকল্পে কত টাকা পড়ে রয়েছে। পড়ে থাকা টাকা ফেরত পাঠানোর তোড়জোড়ও শুরু হয়।
জেলা পরিষদের এক সূত্রে খবর, বিভিন্ন প্রকল্পে পড়ে থাকা প্রায় ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। ওই সূত্রের দাবি, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা এসেছে। বরাদ্দকৃত অর্থের যে সবটা খরচ হয় তা নয়। কিছু টাকা পড়ে থাকেই। সেই ভাবেই একটু একটু করে এই টাকা জমে গিয়েছিল। বিভিন্ন প্রকল্প মঞ্জুর এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হতে এমনিতেই অনেক সময় লাগে। জেলা পরিষদের বরাদ্দ অর্থে কী কী কাজ হবে, সাধারণত তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয়। ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি হয়। সেই মতো কাজ এগোয়। সেখানে বরাদ্দকৃত টাকা ফেরানো নিয়ে জেলা পরিষদকে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা বিজেপি নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্যের কথায়, “সময় মতো কাজ হলে এ ভাবে টাকা পড়ে থাকত না। সেই টাকা ফেরাতেও হত না।কাজের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের তত্পরতার অভাব ছিল।” জেলা পরিষদের এক আধিকারিকের দাবি, “এ ক্ষেত্রে টাকা খরচ করতে না পারাটা ব্যর্থতা নয়। এমন কিছু প্রকল্পের টাকা পড়েছিল, যে প্রকল্পগুলো এখন বন্ধ।” তাঁর কথায়, “বেশির ভাগ প্রকল্পের ক্ষেত্রেই যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয় তার সবটা নাও খরচ হতে পারে। কারণ, বাকি টাকায় হয়তো কোনও প্রকল্প রূপায়ণই সম্ভব নয়। আবার এক খাতের টাকা তো অন্য খাতে খরচও করা যায় না। যে খাতে টাকা আসে সেই খাতেই খরচ করতে হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy