Advertisement
০৫ মে ২০২৪

অধিকাংশ ব্যাঙ্কেই নেই রক্ষী, শিকেয় নিরাপত্তা

ব্যাঙ্ক-ডাকাতিতে যুক্ত সন্দেহভাজন দুষ্কৃতীদের স্কেচ প্রকাশ করল পুলিশ। বুধবার সকালে তমলুক শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ জাতীয় সড়ক সংলগ্ন রাধামনি বাজারে দু’টি দাবিদারহীন মোটর বাইকও উদ্ধার হয়েছে।

অভিযুক্তদের স্কেচ প্রকাশ করল পুলিশ। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

অভিযুক্তদের স্কেচ প্রকাশ করল পুলিশ। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০০:২৬
Share: Save:

ব্যাঙ্ক-ডাকাতিতে যুক্ত সন্দেহভাজন দুষ্কৃতীদের স্কেচ প্রকাশ করল পুলিশ। বুধবার সকালে তমলুক শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ জাতীয় সড়ক সংলগ্ন রাধামনি বাজারে দু’টি দাবিদারহীন মোটর বাইকও উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের দাবি, ওই বাইক দু’টিই তমলুকের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ডাকাতিতে কাজে লাগানো হয়েছিল। তবে ডাকাতিতে জড়িত চার দুষ্কৃতীকে ধরতে পারেনি পুলিশ। তবে, ডাকাতির পরে শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন ব্যাঙ্ককর্তরাও।

মঙ্গলবার সকালে তমলুক শহরের হাসপাতাল মোড়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় হানা দিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দেয় চার সশস্ত্র দুষ্কৃতী। ব্যাঙ্কের আধিকারিক, কর্মী ও গ্রাহকদের মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন ডাকাতির ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। তমলুকের যে ব্যাঙ্কে ডাকাতি হয়েছিল, সেখানে কোনও নিরাপত্তারক্ষী ছিল না। দুষ্কৃতীরা বিনা বাধায় ব্যাঙ্কে ঢুকেছিল। অবাধে ডাকাতির পরেও বিনা বাধায় বেরিয়ে যায়। এই ঘটনা শহরের বেশ কিছু ব্যাঙ্কের শাখায় নিরাপত্তার খামতি নজরে এনেছে। ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কের নিরাপত্তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার শুরু করেছেন ব্যাঙ্ককর্তারা। পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “ব্যাঙ্কের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

তমলুকের ব্যাঙ্কে নেই নিরাপত্তারক্ষী।

বুধবার তমলুকের হাসপাতাল মোড়, মানিকতলা, নিমতলা এলাকার বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ ব্যাঙ্কের প্রবেশ পথেই কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। প্রহরীবিহীন সেই সব শাখাগুলিতে গ্রিলের বা কাঁচের দরজা খুলে অবাধে ভিতরে যাতায়াত চলছে। হাসপাতাল মোড়ের যে ব্যাঙ্কের শাখায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল তার ঠিক উল্টো দিকে, খালের পাশেই আর একটি ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়েও দেখা যায় সেখানে কোনও নিরাপত্তা রক্ষী নেই। হাসপাতাল মোড়ের একশো মিটার দক্ষিণে আর একটি ব্যাঙ্কের শাখাতেও নেই কোনও নিরাপত্তারক্ষী।

তবে, শহরের নিমতলা এলাকার দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় নিরাপত্তারক্ষী ছিল। মানিকতলা এলাকায় রয়েছে একাধিক ব্যাঙ্কের শাখা। সেখানকার বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতেও নিরাপত্তারক্ষী ছিল। অথচ কাছেই অন্য একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ছিল না কোনও রক্ষী। ওই ব্যাঙ্কের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, “আগে আমাদের এখানে রক্ষী ছিল। মাস দু’য়েক আগে তা তুলে নেওয়া হয়। রক্ষী ফেরাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবেদন করেছি।” তবে তিনি যে নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তা-ও স্পষ্ট করেছেন।

জেলা পুলিশ ও ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কে নিরাপত্তারক্ষী রাখার বিষয়টি কয়েক’টি মাপকাঠির উপরে নির্ভর করে। সেগুলি হল বিগত কয়েক বছরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ব্যাঙ্কের অবস্থান থেকে প্রধান সড়ক, লোকালয়, বাজার প্রভৃতির অবস্থান ইত্যাদি। খতিয়ে দেখা হয় শহরের দুষ্কৃতী কার্যকলাপের ইতিহাসও। আইনশৃঙ্খলার দিক থেকে তমলুক অনেকটাই নিরাপদ বলেই এখানকার বেশ কিছু ব্যাঙ্কের শাখায় নিরাপত্তারক্ষী কোনও রক্ষী রাখা হয়নি বলে ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের একাংশের দাবি। সাম্প্রতিক কালে তমলুক শহরের বুকে ব্যাঙ্কে এ ভাবে ডাকাতির কোনও ঘটনাও ঘটেনি।

কিন্তু, মঙ্গলবারের ব্যাঙ্ক-ডাকাতি সেই আপাত নিরাপদ শহরের নিরাপত্তায় বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের পাশাপাশি এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন ব্যাঙ্ককর্তরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bank tamluk no security guards ananda mondal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE