Advertisement
E-Paper

অনুমতি ছাড়াই সভা, শো-কজ সন্তোষ রাণাকে

অনুমতি না নিয়ে কেশপুরে সভা করার জন্য নির্বাচন কমিশনের শো-কজের মুখে পড়তে হল ঘাটাল কেন্দ্রের বাম প্রার্থী সন্তোষ রাণাকে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে শো-কজ নোটিস পাঠিয়ে তিন দিনের সন্তোষবাবুর জবাব তলব করা হয়েছে। কমিশনের বক্তব্য, বাম প্রার্থী কেশপুরে বিমান বসুদের নিয়ে যে সভা করেছেন, তার কোনও অনুমতি ছিল না। অনুমতি না নিয়ে সভা করার ফলে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। শোকজের সদুত্তর না মিললে বাম প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪৮
২১ মার্চ কেশপুরের কলাগ্রামের সভায় বাম নেতৃত্ব। —ফাইল চিত্র।

২১ মার্চ কেশপুরের কলাগ্রামের সভায় বাম নেতৃত্ব। —ফাইল চিত্র।

অনুমতি না নিয়ে কেশপুরে সভা করার জন্য নির্বাচন কমিশনের শো-কজের মুখে পড়তে হল ঘাটাল কেন্দ্রের বাম প্রার্থী সন্তোষ রাণাকে।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে শো-কজ নোটিস পাঠিয়ে তিন দিনের সন্তোষবাবুর জবাব তলব করা হয়েছে। কমিশনের বক্তব্য, বাম প্রার্থী কেশপুরে বিমান বসুদের নিয়ে যে সভা করেছেন, তার কোনও অনুমতি ছিল না। অনুমতি না নিয়ে সভা করার ফলে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। শোকজের সদুত্তর না মিললে বাম প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। বামেদের অবশ্য দাবি, কেশপুরে কোনও সভাই হয়নি। বামফ্রন্টের এক প্রতিনিধি দল এলাকায় গিয়েছিল। নেতৃত্বকে দেখে স্থানীয় মানুষ জড়ো হন। কিছু অভিযোগও জানান। শুক্রবার সন্তোষবাবুও বলেন, “ওই দিন কেশপুরে আমরা কোনও সভা করিনি। ফ্রন্টের এক প্রতিনিধি দল কয়েকটি এলাকায় গিয়েছিল। স্থানীয় মানুষ তাঁদের দেখে ভিড় করেন। নিজেদের বক্তব্য জানান। ফ্রন্ট নেতৃত্বও তাঁদের বক্তব্য জানিয়েছেন। এটুকুই।” বস্তুত, এই প্রথম শোকজের মুখে পড়তে হল বাম প্রার্থীকে।

গত ২১ মার্চ বামফ্রন্টের এক প্রতিনিধি দল কেশপুরে গিয়েছিল। দলে ছিলেন রাজ্য ফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু, সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার, বিদায়ী সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত প্রমুখ। কেশপুর এলাকাটি ঘাটাল লোকসভার অন্তর্গত। ঘাটালের বাম প্রার্থী তথা সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণাও দলে ছিলেন। রাজ্যে পালাবদলের পরও কেশপুরের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কখনও সংঘর্ষ হয়েছে সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যে। কখনও তৃণমূলেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। জখম হয়েছেন বহু মানুষ। গেল ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দলের জোনাল কার্যালয় ‘জামশেদ ভবন’-এও তৃণমূলের লোকজন হামলা করে বলে অভিযোগ। বোমাবাজি হয়। মার্চে আবার গরগজপোতা-সহ বেশ কিছু এলাকায় গোলমাল হয়েছে। দলীয় সূত্রে দাবি, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতেই বাম প্রতিনিধি দল কেশপুর সফরে গিয়েছিল। কেশপুরে এসে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কলাগ্রাম, মহিষদা এবং রঘুনাথবাটি এলাকায় যান। ঘাটালে এ বার তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন অভিনেতা দীপক অধিকারী অর্থাৎ দেব। টলিউড সুপারস্টারের দেশের বাড়ি এই মহিষদাতেই।

প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই দিন বিমানবাবুদের কর্মসূচির ভিডিওগ্রাফি করে পুলিশ। পরে কেশপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি পুলিশ সুপার মনোরঞ্জন ঘোষ জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকে এ নিয়ে এক রিপোর্ট দেন। নিজের রিপোর্টে ডেপুটি পুলিশ সুপার জানান, ওই দিন কেশপুরের ওই তিন এলাকায় সভা করার কোনও অনুমতি বামেদের ছিল না। বামেদের পক্ষ থেকে এমন অনুমতি চাওয়াই হয়নি। কলাগ্রামে আবার ছাউনি দিয়ে সভা হয়েছে। সভার ভিডিও ফুটেজও জমা দেন তিনি। পরে জেলা পুলিশ সুপার এই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারিকে। জেলাশাসকই জেলা নির্বাচনী আধিকারিক (ডিইও)। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে জেলাশাসক ওই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন ঘাটাল কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার (আরও) তথা পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (নির্বাচন) সুশান্ত চক্রবর্তীর কাছে। এরপর রিটার্নিং অফিসারই সন্তোষবাবুকে শোকজ করেন। চলতি সপ্তাহের গোড়ায় বাম প্রার্থীকে শোকজ নোটিস পাঠানো হয়।

বিমানবাবুদের ওই সভা নিয়ে অবশ্য তৃণমূল সহ বাম-বিরোধী দলগুলো কোনও অভিযোগ জানাননি। ভিডিও ফুটেজ দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করে নির্বাচন কমিশনই। কেন অনুমতি না নিয়ে সভা করা হল? শুক্রবার সন্তোষবাবু বলেন, “আমরা কোনও সভাই করিনি তো অনুমতি নেওয়ার প্রশ্ন আসে কী করে? কলাগ্রামে একটা ছাউনি হয়েছিল, এটা ঠিক। ওই ছাউনিও আমরা করিনি। কাউকে করতেও বলিনি। স্থানীয় একজন চড়া রোদ দেখে নিজে থেকেই ত্রিপলের ছাউনি করেন। একটি বাঁধানো পুকুরপাড়ের পাশে ওই ছাউনি করা হয়েছিল।” দলীয় সূত্রে খবর, শোকজের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত জবাবও পাঠিয়েছেন সন্তোষবাবু। যেখানে তিনি এই দাবিই করেছেন।

দলীয় সূত্রে খবর, কেশপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে দাবি করে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) সুনীল গুপ্তর কাছে এক অভিযোগপত্র পাঠিয়েছিলেন সন্তোষবাবু। কমিশন তার যা জবাব দিয়েছে, তাতে হতাশ তিনি। এ নিয়ে নিজের অসন্তোষ তিনি গোপনও করছেন না। প্রশাসন সূত্রে খবর, মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ওই অভিযোগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন জেলা নির্বাচনী আধিকারিক অর্থাৎ জেলাশাসককে। পরে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে এক রিপোর্ট পাঠান। সন্তোষবাবুর কাছে আসা জবাবে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন, জেলাশাসক তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছেন, বর্তমানে কেশপুর এলাকায় শান্তির পরিবেশ রয়েছে। প্রতিদিন রুটমার্চও চলছে। শুক্রবার সন্তোষবাবু বলেন, “এত গোলমাল, এত অশান্তি। কেশপুরে এখন কী চলছে, সকলেই তা জানেন। সর্বত্র সন্ত্রাসের পরিবেশ। অথচ, প্রশাসন বলছে, সর্বত্র শান্তির পরিবেশ রয়েছে। এটা ভাবা যায়!”

যদিও তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক মৃগেন মাইতিরও দাবি, “কেশপুরের সর্বত্র এখন শান্তির পরিবেশ রয়েছে। উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে।” তিনি বলেন, “ওরা শান্তি চায় না। উন্নয়ন চায় না। তাই কেশপুরকে ফের অশান্ত করার চেষ্টা করছে। তবে ওরা যদি মনে করে, আবার কেশপুর দখল করব, অশান্তি করব, তা আর হবে না। মানুষই আর এ সব ওদের করতে দেবে না।”

santosh rana keshpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy