Advertisement
০৪ মে ২০২৪

আইনজীবীদের কর্মবিরতি, শুনানি পিছনোয় দুর্ভোগ

জেল হেফাজতে থাকা বিচারাধীন বন্দীদের নিম্ন আদালতে বাতিল জামিনের আবেদন গ্রহণ, মহকুমা আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কিত ও গাড়ি দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ মামলা জেলা আদালতেও গ্রহণ করা ও জেলাস্তরে সমস্ত ট্রাইব্যুনাল আদালত চালুর দাবি তুলে সোমবার কর্মবিরতি পালন করলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতের আইনজীবীরা। সোমবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতের ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতের বিভিন্ন এজলাস খোলার পর মামলার শুনানির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

তমলুক জেলা আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি। নিজস্ব চিত্র।

তমলুক জেলা আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩১
Share: Save:

জেল হেফাজতে থাকা বিচারাধীন বন্দীদের নিম্ন আদালতে বাতিল জামিনের আবেদন গ্রহণ, মহকুমা আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কিত ও গাড়ি দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ মামলা জেলা আদালতেও গ্রহণ করা ও জেলাস্তরে সমস্ত ট্রাইব্যুনাল আদালত চালুর দাবি তুলে সোমবার কর্মবিরতি পালন করলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতের আইনজীবীরা। সোমবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতের ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতের বিভিন্ন এজলাস খোলার পর মামলার শুনানির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু এ দিন সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সাময়িক কর্মবিরতি পালন করেন জেলা আদালতের আইনজীবীরা। ফলে ওই সব এজলাসে শুনানির কাজ ব্যাহত হয় বলে অভিযোগ। পরে অবশ্য যথারীতি ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতের বিভিন্ন এজলাসে মামলার শুনানির কাজ চলে। যদিও জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে মামলার শুনানিতে অংশ নেননি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতের আইনজীবীরা। যদিও এ দিন জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে অন্য দিনের মতোই মামলার শুনানি শুরু হয়।

জেলা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে আদালতের কাজ শুরুর পরেই জেলা ও দায়রা বিচারক মধুমতি মিত্রের এজলাসে একটি মামলায় আগাম জামিনের আবেদন নিয়ে শুনানিতে অংশ নেন অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী শুভজিৎ দাস। সেই সময় পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট বার এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক যুগল কিশোর মেটলা এজালসের মধ্যে ওই আইনজীবীকে শুনানিতে অংশ নিতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। যুগলবাবুর অবশ্য দাবি, “জেলা আদালতের দুই বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এ দিন জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে আইনজীবীরা মামলার শুনানিতে অংশ নেবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তাই তিনি ওই আইনজীবীকে শুনানিতে অংশ না নিতে বলেছিলেন। তবে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।’’ যদিও ওই জামিনের আবেদন নিয়ে শুনানি হয়েছে বলে জেলা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই আইনজীবী অবশ্য জানান, শুভজিতবাবু বারাসত আদালতের আইনজীবী। একটি মামলায় তাঁর মক্কেলের আগাম জামিনের আবেদন নিয়ে শুনানির জন্য তিনি এখানে এসেছিলেন। এখানে আইনজীবীদের কর্মবিরতির কথা জানতেন না।

সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে আইনজীবীদের কর্মবিরতির জেরে দুর্ভোগের শিকার হন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিচারপ্রার্থীরা। নন্দীগ্রামের একটি মামলায় এ দিন জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসে আসা অভিযুক্তপক্ষের এক ব্যক্তি বলেন, “আদালতে মামলার শুনানিতে আমাদের পক্ষের আইনজীবী অংশ না নেওয়ায় শুনানির দিন ফের পিছিয়ে গেল।” এ দিন তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ও মহকুমা আদালতের বিভিন্ন এজালাস অন্য দিনের মত খোলা ছিল। কিন্তু আদালতের কাজ শুরুর কিছু সময় পরেই জেলা ও দায়রা বিচারকের এজালসের সামনে মঞ্চ বেঁধে সভা শুরু করেন জেলা ফৌজদারি ও দায়রা আদালতের আইনজীবীরা। এ দিন ওই সভায় বক্তব্য রাখেন পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক যুগলকিশোর মেটলা, সভাপতি কমল দাস, আইনজীবী হিরণকুমার ভট্টাচার্য, গৌতম চৌধুরী, সমীর ঘোড়ই ও ডিস্ট্রিক্ট সিভিল বার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বরা। সভায় যুগলকিশোর মেটলা অভিযোগ করে বলেন, “এক্তিয়ার থাকা সত্বেও ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৮ ও ৪৩৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী মামলায় অভিযুক্ত আসামীদের জামিনের আবেদন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতে গ্রহণ করা হচ্ছে না। এছাড়া জেলার বিভিন্ন মহকুমা আদালতের এক্তিয়ার ভুক্ত বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত ও গাড়ি দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ মামলা গত প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে জেলা আদালতে গ্রহণ করা হচ্ছে না। এরফলে ওইসব মামলায় জেলার অন্য মহকুমার বিচারপ্রার্থীরা জেলা আদালতে বিচারের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছে না। এতে বিচারপ্রার্থীরাই বঞ্চিত হচ্ছে।” এ বিষয়ে প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন করার হুঁশিয়ারিও দেন তাঁরা।

যুগলবাবুদের দাবি, অন্য মহকুমার এইসব মামলা জেলা আদালতে গ্রহণ না করার ফলে জেলা আদালতের ভূমিকা খর্ব হচ্ছে। অন্য মহকুমা থেকে আসা বিচারপ্রার্থীদের এইসব মামলা জেলা আদালতে গ্রহণ করতে হবে। সভায় কলকাতা থেকে বিভিন্ন ট্রাইব্যুনাল আদালত জেলা আদালত চত্বরে স্থানান্তর করার দাবিও জানান তিনি। জেলা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশিকা অনুযায়ী রাজ্যের সব জেলাতেই যেসব মহকুমায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকে আছেন, সেখানে বিভিন্ন আপীল মামলা, বিবাহ সংক্রান্ত মামলা ও গাড়ি দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণের মামলার আবেদন করা যাবে। সেই অনুযায়ী পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি ও হলদিয়ায় মহকুমায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের আদালতে এইসব মামলা গ্রহণ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। এ দিন জেলা ও দায়রা বিচারকের এজলাসের সামনে আইনজীবীদের সভার সময় তাঁদের প্রতিনিধিদের ডেকে নিয়ে জেলা ও দায়রা বিচারক আলোচনায় বসেন। আগামী শনিবার পর্যন্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের আদালতে শুনানিতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনজীবীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE