Advertisement
০৮ মে ২০২৪
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়

আজ সমাবর্তন, জানা নেই অনেক পড়ুয়ারই

প্রথমবারেই বিতর্ক। এ বারই প্রথম বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহে সমাবর্তন অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যদিও ইচ্ছে থাকলেও সকল ছাত্রছাত্রী সমাবর্তনে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, তাঁরা সমাবর্তনের কথা জানতেই পারেননি। আবার কেউ কেউ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের কথা জানলেও এর জন্য যে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে তা জানতেন না।

প্রস্তুতি চলছে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের। বুধবার।—নিজস্ব চিত্র।

প্রস্তুতি চলছে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের। বুধবার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২৫
Share: Save:

প্রথমবারেই বিতর্ক। এ বারই প্রথম বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহে সমাবর্তন অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যদিও ইচ্ছে থাকলেও সকল ছাত্রছাত্রী সমাবর্তনে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, তাঁরা সমাবর্তনের কথা জানতেই পারেননি। আবার কেউ কেউ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের কথা জানলেও এর জন্য যে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে তা জানতেন না।

তাঁদের প্রশ্ন, ওই অনুষ্ঠানে যদি ছাত্রছাত্রীরা না থাকে, তাহলে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অনুষ্ঠান করার প্রয়োজনটা কোথায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দীর কথায়, “আমরা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন জমা দিতে বলেছিলাম। তার মধ্যে যাঁরা সমাবর্তনে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তাঁদের নাম রয়েছে।”

ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, নোটিসে (বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগে বিভাগে ও ওয়েবাসইটে) সমাবর্তন হবে এবং যে কারণে এই সময়ে যাতে শিক্ষকেরা ছুটি না নেন ও সহযোগিতা করেন সে কথা উল্লেখ করা রয়েছে। তবে সমাবর্তনে থাকার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ‘রেজিস্ট্রেশন’ করার কথা উল্লেখ ছিল না। ফলে এই কয়েক বছর মিলিয়ে ডিগ্রি ও পদক প্রাপকের সংখ্যা প্রায় ২ হাজারের বেশি হলেও আবেদন জমা পড়েছে মাত্র ৩০৮ জনের! এমনকি বিভিন্ন বিভাগের ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ছাত্রছাত্রীরাও পর্যন্ত সমাবর্তনে থাকতে পারছেন না।

কেন ছাত্রছাত্রীদের জানানোর ব্যবস্থা করা হয়নি?

কর্তৃপক্ষের সাফ কথা, ওয়েবসাইটে নোটিস দেওয়া হয়েছে, খবরের কাগজেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। তবু ছাত্রছাত্রীরা না রেজিস্ট্রেশন করলে তাঁদের কিছু করার নেই। আর ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, সুকৌশলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ চাইছিলেন না, সকল ছাত্রছাত্রী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিক। কারণ, এ বারই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অডিটোরিয়ামে সমাবর্তন হবে। যেখানে আসন বড় জোর সাড়ে সাতশো। সমস্ত ছাত্রছাত্রী আবেদন জানালে, ওই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান করা যাবে না।

এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির কথায়, “এটা নিন্দনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয় ব্যক্তি নানা জটিলতা তৈরি করছেন। আমরা বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকেও জানাব।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পান্ডাও বলেন, “রাজ্য যে ভাবে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলছে, তেমনি রাজ্যের সমস্ত ক্ষেত্রেই একই অবস্থা।” আর অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের রাজ্য সম্পাদক কিশোরকুমার বর্মণের বক্তব্য, “ছাত্রছাত্রীদের এড়িয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান হতে পারে ভাবতেই পারছি না! বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী তা হলে ছাত্রছাত্রীদের ভয় পাচ্ছেন! নতুবা ছাত্রছাত্রীদের এড়িয়ে চলছেন কেন?”

২০১১ সালে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছিলেন নন্দীগ্রামের বাসিন্দা ববিতা দাস। সমাবর্তন অনুষ্ঠান থেকে তাঁর পদক নেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ পাননি। ববিতাদেবীর কথায়, “সমাবর্তনে থাকতে হলে যে আবেদন করতে হবে, সে কথা জানানোই হয়নি! যখন জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন তখন কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, আবেদন জানানোর সময় শেষ হয়ে গিয়েছে! পরে এসে পদক নিয়ে যাবেন!” তাঁর আক্ষেপ, “সমাবর্তনে থাকতে পারব না ভাবতেই গা শিউরে উঠছে। মনে হচ্ছে আমি যেন বেঁচে নেই। বাবার কাছে মুখ দেখাব কী করে। এ সুযোগ যে আর মিলবে না।”

আজ অর্থাৎ বুধবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান। ২০১২ সালের পর এ দিনই হচ্ছে ১৭ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানে ২০১১-২০১৩, তিন বছরের স্নাতকোত্তর ছাত্রছাত্রীদের হাতে ডিগ্রি তুলে দেওয়ার কথা। কৃতিদের পদক দেওয়ারও কথা। আর ২০১২-২০১৩, এই দু’বছরের স্নাতকের কৃতী ছাত্রছাত্রীদের হাতেও পদক তুলে দেওয়ার কথা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। এ বার থাকছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে শিক্ষামন্ত্রী থাকার ঘটনা এটাই প্রথম বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানের কথা জানতে পারেননি ২০১৩ সালে পদার্থবিদ্যায় এমএসসি পাশ করা পুলক পাল। তিনি ওই বছর ৮১ শতাংশ নম্বর পেয়ে বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন। পুলকবাবুর কথায়, “বিভাগের প্রথম ছাত্রকেও জানানো উচিত বলে মনে করেননি কর্তৃপক্ষ। যখন জানতে পেরে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম, তখন জানিয়ে দিল, আর উপায় নেই। সমাবর্তনে থাকা যাবে না। অনুনয় বিনয় করতে গিয়ে মিলেছে দুর্ব্যবহার।”

স্নাতক স্তরের অর্থনীতির ছাত্রী অন্বেষা দাস দ্বিতীয় হয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “কতটা খারাপ লাগছে বোঝাতে পারব না। এ সুযোগ কী দ্বিতীয় বার মিলবে।” ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন, ৭-৮ বছর আগে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে এই অডিটোরিয়াম তৈরির কথা ছিল। আসন থাকার কথা ছিল ১২০০। কয়েকদিন আগে সেই অডিটোরিয়াম তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। অথচ, আসন সংখ্যা কমে দাঁড়াল সাড়ে ৭০০ তে। অথচ সেখানে সব ছাত্রছাত্রীদের স্থান সঙ্কুলান হবে না জেনেও সমাবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল! কর্তৃপক্ষ অবশ্য, ছাত্রছাত্রীরা আবেদন জানায়নি এই অজুহাত দেখিয়েই নিজেদের দায়িত্ব সারছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

convocation vidyasagar university
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE