Advertisement
E-Paper

আনকোরা প্রার্থীতেও জয় নিয়ে ভাবনা নেই তৃণমূলে

বুধবারের বিকেল। কালীঘাটে তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছেন। টিভির পর্দায় ভেসে উঠছে এক-একটি নাম। মেদিনীপুর ফেডারেশন হলে তখন তৃণমূল নেতা-কর্মীর ভিড়। ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই এক জেলা নেতার মোবাইল বেজে উঠল। ফোনের ও প্রান্তে জঙ্গলমহলের এক নেতা জানতে চাইলেন, ‘‘দাদা, উমা সরেন কে আছে বটে?” জেলা নেতা অস্বস্তি কাটিয়ে কোনও রকমে বললেন, ‘নামটা শুনিনি, তবে চিনি। পরে সব বলছি।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৭:২১
মেদিনীপুর স্টেশন রোডে সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে দেওয়াল লিখন।

মেদিনীপুর স্টেশন রোডে সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে দেওয়াল লিখন।

বুধবারের বিকেল। কালীঘাটে তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছেন। টিভির পর্দায় ভেসে উঠছে এক-একটি নাম। মেদিনীপুর ফেডারেশন হলে তখন তৃণমূল নেতা-কর্মীর ভিড়। ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই এক জেলা নেতার মোবাইল বেজে উঠল। ফোনের ও প্রান্তে জঙ্গলমহলের এক নেতা জানতে চাইলেন, ‘‘দাদা, উমা সরেন কে আছে বটে?” জেলা নেতা অস্বস্তি কাটিয়ে কোনও রকমে বললেন, ‘নামটা শুনিনি, তবে চিনি। পরে সব বলছি।’’ পরে প্রার্থীর পরিচিতি জানতে ওই জেলা নেতাকেও কম ফোনাফোনি করতে হয়নি।

পশ্চিম মেদিনীপুরের তিনটি লোকসভা আসনের তিনটিতেই এ বার তৃণমূল এমন তিনজনকে প্রার্থী করেছে, যাঁরা প্রত্যক্ষ রাজনীতির লোক নন। ঘাটালে প্রার্থী হয়েছেন অভিনেতা দেব। মেদিনীপুরে অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। আর ঝাড়গ্রামে চিকিৎসক উমা সরেন। গত লোকসভা নির্বাচনে জেলার তিনটি আসনই দখল করেছিল বামফ্রন্ট। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “তিনটি আসনই এ বার আমরা পাব। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে সামনে রেখে, দলকে সামনে রেখে ভোট হবে। মানুষের উপর আমাদের আস্থা আছে।” প্রার্থী নিয়ে দলে কোনও সমস্যা নেই তো? জেলা সভাপতির জবাব, “কোনও ক্ষোভ নেই। সমস্যা নেই। দল যোগ্য মানুষদেরই প্রার্থী করেছে।” তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক মৃগেন মাইতি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক ভেবে প্রার্থী ঠিক করেছেন। আমাদের তিন প্রার্থীই জিতবেন।” একই কথা বলছেন দলের দুই জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ এবং প্রদ্যোৎ ঘোষ। প্রদ্যোৎবাবু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমাজের বিভিন্নস্তরের প্রতিষ্ঠিত মানুষদের প্রার্থী করেছেন। দিদির এই পদক্ষেপ প্রশংসাযোগ্য।” আর নির্মলবাবুর বক্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমাজের সব স্তরের মানুষের কথা ভেবেছেন।”

তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, তিনটি আসনেই সরাসরি রাজনীতির লোক প্রার্থী না হওয়ায় দলের অন্দরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। একাংশ নেতা-কর্মী প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, অন্তত একটি আসনে তো সাংগঠনিক কাউকে প্রার্থী করা যেত। তৃণমূলের অন্দরের খবর, প্রাথমিক ভাবে তেমন ভাবনাচিন্তাই হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছিল তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের নাম। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, মেদিনীপুরে প্রার্থী হবেন দীনেনবাবু, ঘাটালে অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় আর ঝাড়গ্রামে প্রার্থী হবেন উমা সরেন। বুধবারের বিকেলে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছেন, তখন দীনেনবাবু কলকাতা যাচ্ছিলেন। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ দীনেনবাবুকে ফোন করেছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুব্রত বক্সী। সুব্রতবাবু বিকেল ৩টের মধ্যে তাঁকে কলকাতায় ডেকে পাঠান। দীনেনবাবু জানিয়ে দেন, তিনি রওনা হচ্ছেন। তবে পৌঁছতে হয়তো কিছুটা দেরি হতে পারে। তবে, তৃণমূলনেত্রী সকলকে চমকে দেন দেবকে রাজি করিয়ে। এ দিন দেব তাঁর চূড়ান্ত মত জানান। এরপরই তালিকা ওলটপালট হয়ে যায়।

তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, ঘাটাল কেন্দ্রে সংখ্যালঘু কাউকে প্রার্থিপদ দেওয়া হবে। ঘাটাল থেকে পাঠানো হয়েছিল দু’জনের নাম আজিজুর রহমান এবং উত্তম মুখোপাধ্যায়। আজিজুর দাসপুরের রানিচক দেশপ্রাণ হাইস্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। আর বীরসিংহ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উত্তমবাবু খড়ারের পুরপ্রধান। কিন্তু উত্তমবাবুর নাম গৃহীত হয়নি। সেই জায়গায় নাম ওঠে কলেজ শিক্ষক ওয়াইদুর রহমানের। শেষমেশ অবশ্য সকলের নামই বাদ পড়ে। টেক্কা দেন বাংলা সিনেমার খোকাবাবু।

এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল গত লোকসভা নির্বাচনেও। ওই নির্বাচনে মেদিনীপুরে তৃণমূলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছিল মৃগেন মাইতির নাম। প্রার্থী ঘোষণার দিন সকালেও অনেকে জানতেন, মৃগেনবাবু প্রার্থী হবেন। তবে দুপুরে ছবিটা বদলে যায়। মেদিনীপুরের প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলনেত্রী দীপক ঘোষের নাম ঘোষণা করেন। অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার দীপকবাবু এক সময় অবিভক্ত মেদিনীপুরের জেলাশাসক ছিলেন। সে বার গোড়ায় ঠিক ছিল, দীপকবাবু যাদবপুর থেকে প্রার্থী হবেন, মেদিনীপুর থেকে মৃগেনবাবু। পরে ঠিক হয়, কবীর সুমন যাদবপুরে প্রার্থী হবেন। আর মেদিনীপুরে প্রার্থী হবেন দীপকবাবু। সেই সময় রাজনীতির বাইরের লোককে প্রার্থী করা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে কম জলঘোলা হয়নি। এমনিতেই, জেলার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল রয়েছে। মাঝেমধ্যে সংঘর্ষও ঘটে। তৃণমূলের অনেকের মত, যাবতীয় কোন্দল এড়াতেই জেলার তিন আসনে তিন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে প্রার্থী করেছেন মমতা। দলের এক জেলা নেতার কথায়, “নেত্রী হঠাৎ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দেননি।

অনেক ভাবনাচিন্তা করেছেন। সব দিক খতিয়ে দেখেছেন।” তবে তিনিও মানছেন, “অন্তত একটি আসনে ঘরের লোকের উপর ভরসা করলে বোধহয় ভাল হত।”

jhargram tmc new candidate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy