Advertisement
০৪ মে ২০২৪

উন্নয়নের টাকা পড়ে, বিক্ষোভে সামিল টিএমসিপি

কলেজের উন্নয়নে বরাদ্দ সাড়ে ৫৭ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে না। এই অভিযোগে বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকের সুবর্ণরেখা মহাবিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখাল টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ। সকাল এগারোটা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত, ঘণ্টা তিনেকের ওই আন্দোলনে এ দিন পঠন পাঠন ব্যাহত হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অবস্থান-বিক্ষোভ ওঠে। তবে, এ দিন টিএমসিপির পতাকা ছাড়াই এই আন্দোলন হয়।

কলেজ চত্বরে ছাত্রদের অবস্থান।— নিজস্ব চিত্র।

কলেজ চত্বরে ছাত্রদের অবস্থান।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

কলেজের উন্নয়নে বরাদ্দ সাড়ে ৫৭ লক্ষ টাকা খরচ করা হচ্ছে না। এই অভিযোগে বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকের সুবর্ণরেখা মহাবিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখাল টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ। সকাল এগারোটা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত, ঘণ্টা তিনেকের ওই আন্দোলনে এ দিন পঠন পাঠন ব্যাহত হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে অবস্থান-বিক্ষোভ ওঠে। তবে, এ দিন টিএমসিপির পতাকা ছাড়াই এই আন্দোলন হয়।

কলেজ সূত্রে খবর, টানা কয়েক মাস পরিচালন সমিতির বৈঠক না হওয়ায় ওই জটিলতা তৈরি হয়েছে। তার ফলেই বরাদ্দ টাকা খরচ করা যায়নি। কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দীনেশ কুইলার অভিযোগ, কলেজে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। কলেজের পড়ুয়া প্রায় দু’হাজার। অথচ পানীয় জলের জন্য বরাদ্দ একটি তিরিশ লিটারের কুলার। সে জল পরিস্রুতও নয়। তা পান করে মাঝে মধ্যেই পড়ুয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিয়মিত পঠন পাঠনও হয় না। সাইকেল স্ট্যান্ড ও নতুন ভবন আদৌ তৈরি হবে কি না তা নিয়ে আমরা সংশয়ে রয়েছি। গত বছর ইউজিসি-র দেওয়া ২৪ লক্ষ টাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ সময়মতো খরচ করতে না পারায়, ওই টাকার পুরোটা ফেরত চলে গিয়েছিল। সাধারণ সম্পাদকের দাবি, “এ বারও সেই পরিস্থিতি হতে চলেছে।”

কলেজের টিচার-ইনচার্জ রতনকুমার সামন্ত বলেন, “পরিচালন সমিতির বৈঠকে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মনোনীত সদস্যরা না এলে কী ভাবে সিদ্ধান্ত নেব?” তিনি জানান, বিষয়টি পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা নয়াগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক দুলাল মুর্মুকে একাধিকবার জানিয়েছি। রতনবাবু বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমিই বার বার ছাত্রছাত্রীদের বিরাগভাজন হচ্ছি। তাই টিচার-ইনচার্জের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছি।”

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন ভবন তৈরি-সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক খাতে ইউজিসি ও রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দফতর এই কলেজকে সব মিলিয়ে প্রায় ৫১ লক্ষ টাকা দিয়েছে। সাইকেল স্ট্যান্ড তৈরির জন্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ দিয়েছে আরও সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা। গত ফেব্রুয়ারির পরে পরিচালন কমিটির এজেন্ডা-ভিত্তিক বৈঠক হয়নি। ফলে, টাকা থাকা সত্ত্বেও উন্নয়ন কাজের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মাস তিনেক আগে পরিচালন কমিটির দুই সদস্য খগেন্দ্রনাথ মাণ্ডি ও উদয় চৌধুরীকে ‘বহিরাগতেরা’ অপমান করেছিলেন বলে কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে। তার পর থেকে কলেজে বৈঠক ডাকা হলে পরিচালন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ওই দুই সদস্য আসেন না। পরিচালন কমিটির গর্ভমেন্ট নমিনি হলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী খগেন্দ্রনাথ মাণ্ডি এবং ইউনির্ভাসিটি নমিনি হলেন জামবনির সেবাভারতী কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক উদয় চৌধুরী। খগেন্দ্রনাথবাবু কলেজের পারচেজ় সাব-কমিটির সদস্য। উদয়বাবু ফিনান্স সাব-কমিটিতে রয়েছেন। তাঁদের অনুপস্থিতির ফলে কলেজে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। উন্নয়ন কাজের সিদ্ধান্তও নেওয়া যাচ্ছে না। সেই কারণেই কলেজে পানীয় জলের সঙ্কটও মেটানো যাচ্ছে না।

কলেজ সূত্রের খবর, ওই দুই সদস্য ‘অপমানিত’ হওয়ায় আরও কিছু সদস্য পরিচালন কমিটির বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছেন। খগেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “বহিরাগত কিছু লোকজন পরিচালন কমিটির কাজকর্ম প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। বৈঠক চলাকালীন তাঁরা কলেজে ঢুকে আমাদের অপমান করেন। তাদের কথা না-শুনলে ‘মাসল পাওয়ারের’ হুমকি দেন। এই পরিস্থিততে ওখানে যাওয়া সম্ভব নয়।” ওই সদস্যেরা জানিয়ে দিয়েছেন, পরিচালন কমিটির সভাপতির তরফ থেকে উপযুক্ত নিরাপত্তার আশ্বাস না পেলে তাঁরা কলেজে বৈঠকে যাবেন না। ওই কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি হলেন নয়াগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক দুলাল মুর্মু। পড়ুয়াদের একাংশের ক্ষোভ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধেও। দুলালবাবু বিষয়টি নিয়ে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ। দুলাল মুর্মুর অবশ্য দাবি, “কিছু কারণে পরিচালন কমিটির বৈঠক করা যায়নি। দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE