হলদে ছোপ পাতায়। —নিজস্ব চিত্র।
হলুদ বৃষ্টি আর কিছুই নয়। আসলে তা ফুলের রেণু। সম্প্রতি কোলাঘাটের মেশেড়া গ্রামে হলুদ বৃষ্টির পর নমুনা সংগ্রহ করে এমনটাই জানাচ্ছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কোলাঘাট থানা এলাকার মেশেড়া গ্রামে হঠাৎ হলুদ বৃষ্টির দেখা মেলে! বাড়ির ছাউনিতে, রাস্তায়-সর্বত্রই ফোঁটা ফোঁটা হলুদের ছোপ দেখতে পাওয়া যায়। যা দেখে বিস্ময়ের সীমা ছিল না এলাকাবাসীর। মনে আতঙ্কও ছিল। কারণ, যেখানে হলুদ বৃষ্টির দাগ রয়েছে তার চার পাশে হালকা কালো রঙের ছোপও যে রয়েছে! খবর পেয়ে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের গবেষকরাও সেখানে হাজির হন। ঘটনার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর দেখেন, এই হলুদ বৃষ্টি আসলে ফুলের রেণু ছাড়া আর কিছুই নয়।
কিন্তু ফুলের রেণু এল কী করে?
গবেষক অমলকুমার মণ্ডল জানান, পরাগ মিলনের পর মৌমাছিরা রেণু মৌচাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পিছনের পায়ে একটি পকেট তৈরি করে। অনেক সময় সেই পকেটে অতিরিক্ত রেণু গোল পাকিয়ে থেকে যায়। তা-ই অনেক সময় পড়ে যায়। এক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে। তাহলে হলুদ ফোঁটাগুলির পাশে কালো রঙের ছোপ এলো কী করে? অমলবাবুর কথায়, “পরাগ মিলনের সময় এক ধরনের লালা নিসৃত হয়। সেই লালাতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড থাকে। তা থেকেই ওই কালো ছোপ।” তবে ওই অ্যাসিডের মাত্রা খুব কম থাকায় তা ক্ষতি করতে পারে না বলেই গবেষকরা জানিয়েছেন। তবে আরও একটি প্রশ্ন কিন্তু পিছু ছাড়ছে না। একই জায়গায় বৃষ্টির ফোঁটার মতো এত ফোটা হল কেন? তারও যুক্তিগ্রাহ্য জবাব দিয়েছেন অমলবাবু। তাঁর কথায়, “কোলাঘাট অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ফুল চাষ হয়। তাই মৌমাছিরা দল বেঁধে সেখানে যায় পরাগ মিলনের জন্য। সাধারণত তারা একই পথ দিয়ে যাতায়াত করে। তাতেই এমন হয়েছে। মৌমাছির যাতায়াতের পথ ধরে আরও খুঁজলে বিভিন্ন জায়গায় এমন মিলতে পারে। কিন্তু মাঠে বা জঙ্গলে বলে তা সকলের নজর এড়িয়ে যায়। এটি গ্রামের মধ্যে পরিষ্কার জায়গায় হয়েছে বলেই মনে নানা সন্দেহ হয়েছে।”
শুধু মেশেড়া নয়, খড়্গপুর, কেশপুর সহ পশ্চিম মেদিনীপুর একাধিক গ্রামেও কিছু জায়গায় এমন হলুদ ফোঁটার সন্ধান মিলেছে। ফি বছরই বসন্তকালে এমন দৃশ্য দেখা যায়। গবেষকরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ১৯৭০ সালে সাউথ ইস্ট এশিয়াতে হওয়া অ্যাসিড বৃষ্টির কথা। তাই এক্ষেত্রে সত্যি ঘটনা কী তা খতিয়ে দেখতে অমলবাবুর নেতৃত্বে দুই গবেষক ছাত্র শিল্পা দিন্দা ও শিবদাস মাইতি ঘটানস্থলে যান। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর জানিয়ে দেন, ওই ফোঁটার মধ্যে অতি ক্ষুদ্রাকারে রয়েছে ফুলের রেণু। যাতে মৌমাছির লালা লাগায় চটচটে। এক একটি ফোঁটার নমুনায় দেখা গিয়েছে ১০-১৩ ধরনের রেণু রয়েছে। একটি মৌমাছি একাধিক ধরনের ফুলে ফুলে ঘুরে তা সংগ্রহ করেছে। যা মৌচাকে ফেরার সময় পড়ে গিয়েই রূপ নিয়েছে হলুদ বৃষ্টির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy