Advertisement
E-Paper

কন্যাশ্রী নিয়ে ক্ষোভ জেলাশাসকের

কন্যাশ্রী প্রকল্পের কাজ স্বাভাবিক গতিতে না এগোনোয় প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। বৃহস্পতিবার ছিল ‘জাতীয় শিশু কন্যা দিবস’। তারই উদ্যাপন অনুষ্ঠানে ছাত্রী এবং অভিভাবকদের উপস্থিতিতে জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রবীর সামন্তের কাছে জানতে চান, “যাদের কন্যাশ্রীর আওতায় আসার কথা, তাদের সকলে কেন আসছে না? সমস্যাটা হচ্ছে কোথায়?”

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৩
‘জাতীয় শিশু কন্যা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলাশাসক।—নিজস্ব চিত্র।

‘জাতীয় শিশু কন্যা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলাশাসক।—নিজস্ব চিত্র।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের কাজ স্বাভাবিক গতিতে না এগোনোয় প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। বৃহস্পতিবার ছিল ‘জাতীয় শিশু কন্যা দিবস’। তারই উদ্যাপন অনুষ্ঠানে ছাত্রী এবং অভিভাবকদের উপস্থিতিতে জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রবীর সামন্তের কাছে জানতে চান, “যাদের কন্যাশ্রীর আওতায় আসার কথা, তাদের সকলে কেন আসছে না? সমস্যাটা হচ্ছে কোথায়?” জেলাশাসকের এমন প্রশ্নের সামনে স্বাভাবিক ভাবেই বিড়ম্বনায় পড়েন প্রবীরবাবু। পাশেই ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) সুশান্ত চক্রবর্তী। তিনি দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েন। জেলাশাসক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “এ ভাবে চললে হবে না। বিডিওদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়ে দেব। সরকারি প্রকল্পের সুবিধে কেন ছাত্রীরা পাবে না? যাদের কন্যাশ্রীর আওতায় আসার কথা, তাদের সকলকেই এর আওতায় আনতে হবে।” পরে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে জেলাশাসক বলেন, “যা বলার অনুষ্ঠানেই বলেছি। নতুন করে কিছু বলার নেই।”

‘জাতীয় শিশু কন্যা দিবস’ উপলক্ষে এ দিন ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল মেদিনীপুরে কালেক্টরেটের সভাকক্ষে। জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) ছাড়াও ছিলেন জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক প্রবীর সামন্ত। ছিলেন কয়েকজন ছাত্রী এবং অভিভাবক। ছাত্রীদের একাংশ আবার সরকারি হোমের আবাসিক। বেলা সওয়া বারোটা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরু হয়। কিছুক্ষণ বাদে আসেন জেলাশাসক। বক্তব্য রাখার আগে উপস্থিত ছাত্রীদের ক’জন কন্যাশ্রীর আওতায় এসেছে, তা জানতে চান তিনি। সরাসরি ছাত্রীদের সঙ্গেই কথা বলতে শুরু করেন। দেখা যায়, নামমাত্র ছাত্রীই এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে। এরপরই অসন্তোষ প্রকাশ করেন জেলাশাসক। উপস্থিত একাংশ স্কুল শিক্ষিকা দাবি করেন, স্কুলকে যা নির্দেশ দেওয়া হয়, স্কুল সেই মতোই কাজ করে। জেলাশাসককে জানানো হয়, অনুষ্ঠানে যে সব ছাত্রী এসেছে, তাদের কেউ কেউ সপ্তম শ্রেণীতে পড়ত। এ বছর অষ্টম শ্রেণীতে উঠেছে। কারও কারও পরিবারে বার্ষিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার বেশি, তাই তারা কন্যাশ্রীর আওতায় আসেনি। এরপরই জেলাশাসক এক ছাত্রীকে উঠে দাঁড়াতে বলেন। জানতে চান, সে কোন শ্রেণিতে পড়ে। ছাত্রী জানায়, সে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। জেলাশাসক জানতে চান, তাঁর বাবা কী করেন। ছাত্রী জানায়, তাঁর বাবার শাড়ির ব্যবসা রয়েছে। এরপর জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিকের দিকে তাকিয়ে জেলাশাসক প্রশ্ন করেন, “এমন ছাত্রী কেন কন্যাশ্রীর আওতায় আসবে না?” প্রবীরবাবু এর কোনও জবাব দিতে পারেননি।

জাতীয় শিশু কন্যা দিবসের অনুষ্ঠানে এসে, ছাত্রী এবং অভিভাবকদের উপস্থিতিতে আচমকা কেন এ ভাবে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন জেলাশাসক? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “কন্যাশ্রী প্রকল্প নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ জেলায় আসছে। স্বাভাবিক গতিতে কাজ এগোচ্ছে না বলে খবর আসছে। কোথাও স্কুল কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছেন, কোথাও প্রশাসনের কর্তা-কর্মীরা গড়িমসি করছেন। আগেও জেলাশাসক সরকারি প্রকল্পসমূহের পর্যালোচনা সভায় এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পরিস্থিতির ততটা উন্নতি না- হওয়ায় ফের অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। বুঝিয়ে দিলেন, জেলায় যে ভাবে এই প্রকল্পের কাজ এগোচ্ছে, তাতে তিনি খুশি নন।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই কন্যাশ্রী প্রকল্পের সূচনা করেছেন এ রাজ্যে। গেল বছর থেকে কন্যাশ্রী দিবস পালনও শুরু হয়েছে। গত বছর ১৪ অগস্ট এই দিনটি পালন করা হয়। প্রকল্প অনুযায়ী, যে সব পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কম, সেই সব পরিবারের অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীরা এই প্রকল্পের আওতায় এলে বছরে ৫০০ টাকা করে পাবে। পরে এককালীন ২৫ হাজার টাকা পাবে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “মূলত নারী সমাজকে স্বীকৃতি দিতেই কন্যাশ্রী প্রকল্পের সূচনা। এক সময় মেয়েদের অবহেলা করা হয়েছে। কন্যা ভ্রুণ হত্যা করা হয়েছে। তা যাতে আর না হয়, প্রকল্পের সূচনা সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই। এরফলে ১৮ বছরের পরও পড়াশোনা করে অনেকে স্বনির্ভর হতে পারবে।” এদিন যখন জেলাশাসক সভাকক্ষে ঢোকেন, তখন দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত)। বোঝাচ্ছিলেন, কেন ছেলেমেয়ের সমানাধিকার জরুরি। জেলাশাসক ঢোকার কিছু পরেই তাল কাটে। সরকারি প্রকল্পের সুবিধে কেন ছাত্রীরা পাবে না, সেই প্রশ্ন রেখেই সভাকক্ষ ছাড়েন তিনি।

পরে অবশ্য জেলাশাসক বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় দেড় লক্ষ ছাত্রী কন্যাশ্রীর আওতায় এসেছে। গত বছর আমাদের জেলার পারফরম্যান্স ভালই ছিল।”

district magistrate jagdish prasad meena kanyashree prakalpa kanyashree
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy