হাতে গোনা দু’-একজনকে বাদ দিয়ে সাফাইকর্মী থেকে আধিকারিক অফিসের সবাইকে বদলি করে দেওয়া হল। এমনই ঘটনা ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খাদ্য দফতরের খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম মহকুমার ক্ষেত্রে। আর সেই শূন্যস্থান পূরণে রাজ্য জুড়ে বদলি হলেন ১৪৭ জন কর্মী-আধিকারিক! নির্দেশিকাটি গত ৬ জানুয়ারির। দুই মহকুমা খাদ্য দফতরে তা পৌঁছয় বৃহস্পতিবার। গণ-বদলির প্রতিবাদে এ দিন খড়্গপুর মহকুমা খাদ্য নিয়ামকের অফিসের সামনে পতাকা ছাড়াই বিক্ষোভ দেখান কো-অর্ডিনেশন ও ফেডারেশনের সদস্য কর্মী-আধিকারিকেরা।
খড়্গপুর মহকুমা খাদ্য দফতরের কর্মী ছিল ৪৯ জন। ৪৩ জনকেই বদলি করা হয়েছে। রয়েছেন কেবল মহকুমা খাদ্য নিয়ামক, এক জন সহ পরিদর্শক, তিন জন করণিক ও এক জন টাইপিস্ট। বদলি হওয়া কর্মীদের মধ্যে সার্কেল ইনস্পেক্টর, সহ-পরিদর্শক, করণিক, নাজির থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী সকলেই আছেন। আর ঝাড়গ্রাম মহকুমা খাদ্য দফতরের ৩২ জনের মধ্যে বদলি হয়েছে ৩০ জন। রয়েছেন কেবল মহকুমা খাদ্য নিয়ামক ও একজন করণিক। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের জেলায় ছাড়া বদলি করা যায় না। ফলে তাঁদের অন্য মহকুমায় বদলি করা হলেও আধিকারিকদের কাউকে বদলি করা হয়েছে মুর্শিদাবাদে তো কাউকে কোচবিহারে।
হঠাৎ এই কেন বদলি? খাদ্য দফতরের কেউ এ নিয়ে মুখ খোলেননি। তবে দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কেরোসিন দুর্নীতি রুখতেই এই পদক্ষেপ। ২০০৪ সাল থেকে জেলার খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম মহকুমায় অতিরিক্ত কেরোসিন বরাদ্দ হয়ে আসছিল। দু’টি মহকুমায় বাড়তি বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫৬৯ কিলোলিটার (১ কিলোলিটার অর্থাৎ ১ হাজার লিটার)। তা সাধারণ মানুষের মধ্যে বন্টন করার কথা বলা হলেও খোলাবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হত বলে অভিযোগ। এই দুর্নীতি বন্ধে পদক্ষেপ করাতেই খড়্গপুরের মহকুমা খাদ্য নিয়ামক পঞ্চানন মুর্মুুকে খুন হতে হয় বলেও অভিযোগ। ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে অফিসের শৌচাগারেই তাঁর নলিকাটা দেহ মেলে। দুর্নীতির অভিযোগেই গত বছর ঝাড়গ্রামের মহকুমা খাদ্য নিয়ামক স্বপন তরফদার ‘সাসপেন্ড’ হন। তবু দুর্নীতি বন্ধ না হওয়ায় তদন্ত শুরু করে রাজ্য সরকার। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসে কেরোসিন দুর্নীতির সঙ্গে শুধু কেরোসিন ডিস্ট্রিটিউবাররা নন, যুক্ত রয়েছেন এই দুই মহকুমার একাধিক কর্মী-আধিকারিকেরাও। তার জেরেই এই বদলির পদক্ষেপ বলে জানা গিয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেয়ে খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম মহকুমায় কেরোসিনের বরাদ্দ কমানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাস থেকেই তা কার্যকর হবে।
এই গণ-বদলিতে ক্ষুব্ধ ফেডারেশন ও কো-অর্ডিনেশন দু’পক্ষই। কো-অর্ডিনেশন কমিটির খড়্গপুর মহকুমার সম্পাদক তথা মহকুমা খাদ্য নিয়ামক অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী লক্ষ্মণচন্দ্র সিংহ বলেন, “এ ভাবে সকলের বদলি মানা যায় না। যদি দুর্নীতির জন্যই বদলি হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে কারা যুক্ত তা দেখা হোক।” ফেডারেশনের খড়্গপুর মহকুমার কোর কমিটির সদস্য তথা খড়্গপুর খাদ্য নিয়ামক অফিসের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী তপনকুমার মেইকাপেরও বক্তব্য, “দুর্নীতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করে বদলি করা উচিত ছিল।”
(সহ প্রতিবেদন: কিংশুক গুপ্ত, দেবমাল্য বাগচি)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy