Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চোদ্দো বছর পরে মা-ছেলের মিলন

স্বামী মারা গিয়েছেন। ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু কিছুই জানতে পারেননি নদিয়ার হরিণঘাটার বৃদ্ধা বুলু চক্রবর্তী। দীর্ঘ চোদ্দো বছর আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ভারসাম্যহীন এই মহিলা। বহু খুঁজেও পরিজনেরা সন্ধান পাননি। ৬৭ বছরের সেই বুলুদেবীই ছেলেদের সঙ্গে নিজের সংসারে ফিরলেন শুক্রবার।

কাঁথিতে ছেলেদের সঙ্গে বুলু চক্রবর্তী। ছবি: সোহম গুহ।

কাঁথিতে ছেলেদের সঙ্গে বুলু চক্রবর্তী। ছবি: সোহম গুহ।

সুব্রত গুহ
কাঁথি শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০১:৩১
Share: Save:

স্বামী মারা গিয়েছেন। ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু কিছুই জানতে পারেননি নদিয়ার হরিণঘাটার বৃদ্ধা বুলু চক্রবর্তী। দীর্ঘ চোদ্দো বছর আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন ভারসাম্যহীন এই মহিলা। বহু খুঁজেও পরিজনেরা সন্ধান পাননি। ৬৭ বছরের সেই বুলুদেবীই ছেলেদের সঙ্গে নিজের সংসারে ফিরলেন শুক্রবার।

এতগুলো বছর নানা জায়গায় ঘুরে বেরিয়েছেন বুলুদেবী। চেয়েচিন্তে কেটেছে দিন। ঘুরতে ঘুরতে গত ৬ মে তিনি কাঁথিতে এসে পৌঁছন। শহরের ক্যানাল-পাড়ে ‘ক্লাব জেনারেশন’-এর সামনে আধমরা অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। ক্লাবের ছেলেরাই তাঁকে উদ্ধার করে শুশ্রূষার ব্যবস্থা করে। ক্লাব সদস্য শৌভিক নন্দ জানান, দীর্ঘ দিন অভুক্ত থাকায় বুলুদেবী তখনও ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না। কোনওরকমে তিনি জানান, তাঁর বাড়ি নদিয়া জেলার রানাঘাট থানা এলাকায়। সেই সূত্র ধরে বেশ কিছু দিন চেষ্টার পর অবশেষে বুলুদেবীর বাড়িতে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। কাঁথিতে পৌঁছন বৃদ্ধার তিন ছেলে গৌরাঙ্গ, নিত্যানন্দ এবং বিজয় চক্রবর্তী। বড় ছেলে গৌরাঙ্গ বলেন, “সেই ২০০০ সালে মা আচমকাই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও হদিস পাইনি। আমরা তো মাকে ফিরে পাওয়ার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।” মাকে ফেরত পাওয়ার জন্য কাঁথির ওই ক্লাবের সদস্যদের কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেননি বুলুদেবীর তিন ছেলে।

বুলুদেবী যখন কাঁথিতে পৌঁছন তখন তিনি রীতিমতো অসুস্থ। চোখে ছানি পড়ায় স্পষ্ট দেখতেও পাচ্ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে কথা বলে ক্লাবের সদস্যরা বুঝতে পারেন, বৃদ্ধা ভারসাম্যহীন। প্রাথমিক শুশ্রূষার পরে ক্লাব প্রাঙ্গণেই তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়। চোখের ছানি অপারেশনের জন্য বুলুদেবীকে স্থানীয় চক্ষু হাসপাতালেও নিয়ে যান ক্লাব সদস্যরা। তবে অস্ত্রোপচারের জন্য টাকার জোগাড় করতে পারেননি ক্লাবের সদস্যরা। অবশেষে কাঁথির পুরপ্রধান সৌমেন্দু অধিকারীর হস্তক্ষেপেই ফরিদপুর বিবেকানন্দ লোকশিক্ষা নিকেতনের বৃদ্ধাবাসে বুলুদেবীকে রাখা হয়।

এ দিকে, বাড়ির ঠিকানা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি বুলুদেবী। শুধু বলেছিলেন নদিয়া ও রানাঘাট শব্দ দু’টি। সেই সূত্র ধরেই ক্লাব সদস্যরা রানাঘাট থানায় যোগাযোগ করেন। জানা যায়, বৃদ্ধার স্বামীর নাম কিশোরীমোহন চক্রবর্তী। বাড়ি প্রস্তাবিত হরিণঘাটা পুরসভার সিমহাট মাঝেরপাড়ায়। সেখান থেকে বুলুদেবীকে নিতে বৃহস্পতিবার কাঁথিতে আসেন তাঁর তিন ছেলে। শুক্রবার তাঁরা বাড়ি রওনা দেন। কাঁথি স্টেশনে এ দিন বৃদ্ধাকে বিদায় জানাতে এসেছিলেলেন কাঁথির ওই ক্লাবের সদস্যরাও। বৃদ্ধাকে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিতে পারে খুশি তাঁরা। তবে বিদায় মুহূর্তে ক্লাব সদস্যের চোখও চিকচিক করে উঠল। এই ক’দিনে বুলুদেবী যে তাঁদের আপনজন হয়ে উঠেছিলেন।

এ দিন সন্ধ্যায় বাড়ি পৌঁছন বুলুদেবী। দীর্ঘ দিন পরে তাঁকে কাছে পেয়ে পরিজনেরা তো বটেই, খুশি পাড়া প্রতিবেশীরাও। তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য উত্তম সাহা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণেই হারিয়ে গিয়েছিলেন বুলুদেবী।

(সহ প্রতিবেদন: সৌমিত্র শিকদার)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE