Advertisement
০১ মে ২০২৪

জমিজটে সুইমিং পুলের টাকা ফেরতের আশঙ্কা

এই জমিতেই সুইমিং পুল তৈরি হওয়ার কথা ছিল।—নিজস্ব চিত্র।

এই জমিতেই সুইমিং পুল তৈরি হওয়ার কথা ছিল।—নিজস্ব চিত্র।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫০
Share: Save:

উন্নয়নের টাকা পেতে কালঘাম ঝরাতে হয়। আর মেদিনীপুর কলেজের ক্ষেত্রে উলটপুরাণ। টাকা পেয়েও তা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা!

সুইমিং পুল তৈরির জন্য প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা পেয়েছিল মেদিনীপুর কলেজ। ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এই টাকা দিয়েছিল। কিন্তু এখনও সুইমিং পুল তৈরি করা যায়নি। জমিজটেই এই পরিস্থিতি। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যে জমিতে সুইমিং পুল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, সেখানে প্রশাসনিক অনুমতি মেলেনি। প্রশাসনের বক্তব্য, লিজের জমিতে সুইমিং পুল তৈরির অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।

মেদিনীপুর কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুধীন বাগ বলেন, “হস্টেলের পাশে আমাদের যে খেলার মাঠ রয়েছে সেখানে সুইমিং পুল বানাতে চেয়েছিলাম। কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু পরে প্রশাসন জানিয়ে দেয়, ওখানে সুইমিং পুল করা যাবে না।” জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরিন্দম দত্তের বক্তব্য, “ওই খেলার মাঠটি কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুলের নামে। আলাদা করে কারও নামে জমির এলাকা চিহ্নিতও করা নেই। তাছাড়াও লিজে পরিষ্কার উল্লেখ করা রয়েছে যে, হস্টেল ও খেলার মাঠের জন্যই ওই জমি দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে লিজের ওই জমিতে কী ভাবে সুইমিং পুল করার অনুমতি দেওয়া যায়।”

যা অবস্থা তাতে টাকা ফেরত দেওয়া ছাড়া গতি নেই। মার্চ মাস ফুরোলেই টাকা ফেরত দিতে হবে। আর তা হলে ভবিষ্যতে কলেজের নতুন উন্নয়ন প্রকল্পে টাকা পেতেও সমস্যা হবে। মেদিনীপুর কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, “আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই ইউজিসিকে চিঠি দিয়ে আবেদন জানাব, যাতে অন্য প্রকল্পে এই টাকা খরচের অনুমতি দেয়। তাহলে সুইমিং পুলের পরিবর্তে অন্য কোনও কাজ করতে পারব। যদি অনুমতি না দেয় তাহলে টাকা ফেরত দিতে হবে।”

এখন প্রশ্ন, জমি লিজের শর্ত না জেনে কেন সুইমিং পুল তৈরির জন্য টাকা চেয়েছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ? পরিবর্তে অন্য কোনও উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ চাইলে এই সমস্যা হত না। কলেজ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর শহরের কেন্দ্রস্থলে কলেজ মাঠের মতো এত বড় মাঠ আর নেই। এই মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সভা হয়। সরকারি-বেসরকারি মেলা, যাত্রা, বিচিত্রানুষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-ক্লাবের ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও এখানে হয়। সুইমিং পুল হলে মাঠের পরিসর বেশ কিছুটা কমে যাবে। জানা গিয়েছে, কলেজ মাঠের একাংশে সুইমিং পুল তৈরির খবর পেয়ে নামে-বেনামে বহু লোক প্রশাসনের কাছে প্রতিবাদ জানান। তারপরই প্রশাসন এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে। জমির দলিল খতিয়ে দেখে বোঝা যায়, জমিটি লিজের। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই জমির জন্য কোনও কর লাগে না। লিজে জমি নিষ্কর সম্পত্তি হতে পারে না। নিশ্চয়ই জমির মালিকানা কলেজের।

প্রশাসনের অবশ্য দাবি, ১৯৬৮ সালে ওই জমি লিজ দেওয়ার সময় কোনও কর ধার্য করা হয়নি। তত্‌কালীন কালেক্টর কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজের পরিচালন সমিতিতে ছিলেন। ফলে নিষ্কর লিজ দিয়েছিলেন। তবে সাফ জানানো হয়েছিল, হস্টেল ও খেলার মাঠের জন্যই জমি দেওয়া হয়েছে। তাই প্রশাসন কোনওভাবে সুইমিং পুল করতে দিতে রাজি নয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, হস্টেলের পাশে, জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসের পিছনে সুইমিং পুল তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কলেজের যুক্তি, খেলার মাঠের জন্য জমি দেওয়া হলে কেন সুইমিং পুল হবে না। সুইমিংও তো খেলারই অঙ্গ। তাছাড়াও ওখানে করলে মাঠের সামনের অংশে কোনও সমস্যা হওয়ার কথাও ছিল না। তবু কেন প্রশাসন, এ বিষয়ে একটু নমনীয় ভাব দেখাল বুঝতে পারছি না। তাহলে এতগুলি টাকা ফেরত যেত না। প্রশাসন অবশ্য এ বিষয়ে অনড়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

swimming pool suman ghosh medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE