Advertisement
E-Paper

তরুণ ব্যবসায়ীর খোঁজ নেই, অন্ধকারে পুলিশ

ঝাড়গ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী সৌরভ অগ্রবালের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে ব্যবসায়িক কোনও কারণ রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের প্রাথমিক ধারণা, সৌরভকে অপহরণ করা হয়েছে।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০২:৩১
সৌরভ অগ্রবাল।—নিজস্ব চিত্র।

সৌরভ অগ্রবাল।—নিজস্ব চিত্র।

ঝাড়গ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী সৌরভ অগ্রবালের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে ব্যবসায়িক কোনও কারণ রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের প্রাথমিক ধারণা, সৌরভকে অপহরণ করা হয়েছে। কিন্তু স্পষ্ট কোনও কারণ পুলিশ এখনও জানতে পরেনি।

গত শুক্রবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান বছর পঁচিশের সৌরভ ওরফে রকি। অরণ্যশহরের বলরামডিহির বাসিন্দা সৌরভের বাবা পবনকুমার অগ্রবালের বাড়ি তৈরির সরঞ্জামের বড়সড় ব্যবসা রয়েছে। বাণিজ্যের স্নাতক সৌরভ তাঁর বাবার ব্যবসার সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। শনিবার দুপুরে ব্যবসায়িক কাজে মোটর বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সৌরভ। ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার জন্য সঙ্গে নগদ তিরিশ হাজার টাকা ছিল তাঁর সঙ্গে। যাওয়ার আগে ছোটবেলার বন্ধু দেবব্রত সেনকে সৌরভ জানিয়েছিলেন, কাজ সেরে ফিরে দুই বন্ধু মিলে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যাবেন। কিন্তু বিকেল গড়ালেও বাড়ি ফেরেননি সৌরভ। তাঁর মোবাইল ফোনটিও ‘সুইচড অফ’ ছিল। পরে শনিবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রামের সাপধরা গ্রামের রাস্তার ধার থেকে সৌরভের বাইকটি পাওয়া যায়।

কিন্তু রহস্যের বিষয় হল, মোটর বাইকটির নম্বর প্লেট খোলা ছিল। শনিবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন সৌরভের বাবা পবনকুমার অগ্রবাল। ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। সাপধরার প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরে এক যুবক ওই মোটর বাইকটি রেখে একটি সাদা রঙের বোলেরো গাড়িতে উঠে চলে যান। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা সৌরভের ছবি দেখার পরে পুলিশকে জানয়েছেন, যে যুবক মোটর বাইক রেখে সাদা গাড়িতে উঠে চলে গিয়েছিলেন তিনি সৌরভ নন। এই বিষয়টি পুলিশকে ভাবাচ্ছে। তদন্তকারীদের অনুমান, অপহরণকারীরা সৌরভের পূর্ব পরিচিত। বাড়ি থেকে সৌরভ বোরনোর পরই সম্ভবত তাঁকে অনুসরণ করে অপরহণ করা হয়। এরপর নম্বর প্লেট খুলে মোটর বাইকটিকে চালিয়ে অন্য কেউ সাপধরা পর্যন্ত নিয়ে যায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, সৌরভের মোবাইল ফোনটি শনিবার দুপুর ১২টা ৫১ মিনিট নাগাদ বন্ধ হয়ে যায়। তার আগে ওই দিন পবনবাবুর ব্যবসা সংস্থার কর্মী মহাদেব গরাই ব্যবসা সংক্রান্ত প্রয়োজনে সৌরভকে ফোন করেছিলেন। একটানা রিং বেজে গেলেও সৌরভ ফোন ধরেননি। তারপর ফোনটি ‘সুইচড অফ’ হয়ে যায়। সৌরভের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট ধরে এখনও পর্যন্ত সন্দেহ জনক কিছুই মেলেনি বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। তবে তদন্তের সূত্রে পুলিশের ধারণা, সৌরভকে পার্শ্ববর্তী ওড়িশা বা ঝাড়খণ্ড রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়ে থাকতে পারে। সৌরভ নিখোঁজ হওয়ার পর আটচল্লিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পবনবাবুর কছে মুক্তিপণ দাবি করে কোনও ফোন আসেনি। এই বিষয়টিও পুলিশকে ভাবাচ্ছে। সৌরভকে খঁুজে বের করার জন্য ঝাড়গ্রামের এসপি অলোক রাজোরিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল গড়া হয়েছে।

গত তিন দিনে সৌরভের আত্মীয়-পরিজন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মী, স্থানীয় বাসিন্দা ও সৌরভের একাধিক বন্ধু-বান্ধবীকে জেরা করেছে পুলিশ। কিন্তু, সন্দেহ জনক কিছুই মেলেনি। তবে পুলিশি তদন্তে জানা গিয়েছে, ব্যবসা নিয়ে সৌরভের বিশেষ আকর্ষণ ছিল। নিখোঁজ হওয়ার দিন সকালে সৌরভ ব্যবসার কজে লালগড়েও গিয়েছিলেন। এ ভাবেই ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়েতেন তিনি। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে ব্যবসায় যথেষ্ট দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন সৌরভ। ব্যবসার প্রসারও ঘটিয়েছিলেন অনেকটাই। কিন্তু কী কারণে এবং কারা সৌরভকে তুলে নিয়ে গিয়েছে তা নিয়ে পুরোপুরি ধোঁয়াশায় রয়েছে পুলিশ।

ছেলের শোকে মুহ্যমান পবনকুমারবাবু রবিবার বলেন, “ব্যবসাই ছিল সৌরভের ধ্যানজ্ঞান। কারও সঙ্গে আমার শত্রুতা নেই। কেন এমন হল বুঝতে পারছি না। একটাই আর্জি, ছেলেকে খঁুজে ফিরিয়ে দিক পুলিশ।” সৌরভের অন্তর্ধানে ভেঙে পড়েছেন তাঁর মা সত্যভামাদেবী। ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “আমরা সব রকম সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি। সৌরভের খোঁজ পেতে পুলিশের তরফে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে।”

পুলিশ সূত্রের খবর, সীমানাবর্তী ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার থানাগুলিকে জানানো হয়েছে। ঝাড়গ্রাম শহরের বিভিন্ন লজ-হোটেলের রেজিস্টার ঘেঁটে দেখা হচ্ছে, গত কয়েক দিনে বহিরাগত কারা অরণ্যশহরে এসেছিলেন। খোদ ঝাড়গ্রাম শহরে এমন ঘটনা ঘটায় শঙ্কিত শহরবাসী। তিন দিনেও সৌরভের সম্পর্কে পুলিশ কোনও তথ্য উদ্ধার করতে না-পারায় উদ্বেগ বাড়ছে পরিজনদের।

abduction businessman sourav agarwal kinshuk gupta jhargram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy