Advertisement
০৩ মে ২০২৪

দ্বন্দ্ব মেটাতে বৈঠকই সার, দোলা ফিরতেই মারামারি

রেল ইযার্ডে দীর্ঘ দিন ধরে চলা সমস্যার সমাধান করতে এসেছিলেন শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী। সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকও করেন। স্পষ্ট বার্তা দেন, ‘সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে’। কিন্তু নেত্রী বেরিয়ে যেতেই নির্দেশের পরোয়া না করে খড়্গপুর রেল ইয়ার্ডে ফের মারামারিতে জড়ালেন তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী এবং প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পালের অনুগামীরা।

আহত দুলাল কিস্কু।—নিজস্ব চিত্র।

আহত দুলাল কিস্কু।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৪ ০১:১৪
Share: Save:

রেল ইযার্ডে দীর্ঘ দিন ধরে চলা সমস্যার সমাধান করতে এসেছিলেন শ্রমিক সংগঠনের নেত্রী। সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকও করেন। স্পষ্ট বার্তা দেন, ‘সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে’। কিন্তু নেত্রী বেরিয়ে যেতেই নির্দেশের পরোয়া না করে খড়্গপুর রেল ইয়ার্ডে ফের মারামারিতে জড়ালেন তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী এবং প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পালের অনুগামীরা। ঘটনায় আহত হলেন দু’পক্ষের চারজন।

রবিবার সকালে খড়্গপুরে জাতীয় সড়কের ধারে এক হোটেলে শ্রমিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন। উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সভাপতি তথা জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি দীনেন রায়, তৃণমূলের শহর সভাপতি, জেলা কোর কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পালেরা। এঁদের মধ্যে শহর সভাপতির সঙ্গে প্রাক্তন পুরপ্রধানের গোষ্ঠী বিবাদ প্রায় সর্বজনবিদিত। এলাকায় সংগঠনের রাশ কার হাতে থাকবে এই নিয়ে গোষ্ঠী সমর্থকদের নিয়ে মারামারি-গুলি বিনিময় নতুন নয়। এরই মধ্যে মাস দেড়েক আগে রেল ইয়ার্ডের কাজ থেকে বাদ পড়েন দেবাশিস অনুগামী ২২ শ্রমিক। তারপর থেকেই বিবাদ চরমে পৌঁছায়। জানা গিয়েছে, এর মীমাংসা করতেই রবিবার জেলায় এসেছিলেন সংগঠনের নেত্রী দোলা সেন।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে দোলা এসে স্পষ্ট নিদান দেন, বাদ যাওয়া ২২ জনকে পুনর্বহাল করতে হবে এবং এস শ্রীনিবাস রাওকে দলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত থেকে দূরে রাখতে হবে। শ্রীনিবাস রাও দেবাশিস অনুগামী বলে পরিচিত। আবার দেবাশিসবাবুদের অভিযোগ ছিল, জহরবাবুদের কারসাজিতেই ছাঁটাই করা হয়েছে ২২ জনকে। ফলে দু’পক্ষকেই কিছুটা খুশি করে দ্বন্দ্ব সামাল দিতে চেয়েছিলেন আইএনটিটিইউসি নেত্রী।

কিন্তু, সে চেষ্টা এবারের মত নিস্ফলাই রইল। কেননা, সংগঠনের বিড়ম্বনা বাড়িয়ে নেত্রী দোলা বেরিয়ে যেতেই মারামারিতে জড়ান দু’গোষ্ঠী। হাতাহাতির অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী। দোলার জবাব, জেলা সভাপতি ও সমস্ত পদাধিকারীদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে যে সমস্যাগুলি ছিল, তার সমাধান হয়েছে। এর পরে কোনও ঘটনা ঘটলে নেতাকর্মীরা ফোন করতেন। তবে হাতাহাতির অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ। তিনি বলেন, “নিমপুরা রেল ইয়ার্ডের সমস্যা ধীরে ধীরে মিটিয়ে ফেলা হবে বলে ওই বৈঠকে স্থির হয়েছে। সেই বার্তা হয়তো এখনও শ্রমিকদের কাছে যায়নি। তাই কিছু গণ্ডগোল হয়েছে বলে শুনেছি।”

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বৈঠকের পরেই দু’পক্ষের হাতাহাতি শুরু হয়। ভাঙচুর হয় দেবাশিস চৌধুরী অনুগামীদের ৬টি মোটর বাইক। মাথায় আঘাত লাগে দেবাশিস অনুগামী দুলাল কিস্কুর। তাঁকে খড়্গপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বাঁ-পায়ে আঘাত লেগে জখম হন জহর অনুগামী অমিত দাস। দুলালের অভিযোগ, “বৈঠকে ২২ জনকে কাজে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়। এটা জহরলালের লোকেরা মেনে নিতে পারেননি। তাই ওরা আমাদের ওপরে হামলা করেছে।” জহর অনুগামী অমিত দাস বলেন, “কাজে আসার সময়ে একা পেয়ে ওঁরাই আগে আমায় মারে। তারপরে রেক সাইডিং থেকে সবাই ছুটে গেলে ওঁরা পালায়।”

হতাহাতির খবরে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে এলাকায় পৌঁছন খড়্গপুরের এসডিপিও অজিত সিংহ যাদব, আইসি দীপক সরকার। এই ঘটনায় তৃণমূল শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যা বলার জেলা সভাপতি বলবেন বলে তিনি দায় এড়ান। জহরলাল পাল অবশ্য বলেন, “মিটিং ইতিবাচক হয়েছে। সংগঠনের কোনও কাজে শ্রীনিবাস রাও হস্তক্ষেপ করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।” সেই আক্রোশেই শ্রীনিবাস রাও দুষ্কৃতী নিয়ে শ্রমিকদের ওপর চড়াও হয়ে মারধর করে বলেও জহরবাবুদের তরফে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছে দেবাশিস অনুগামীরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kharagpur railway labour clash dola sen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE