নিকাশি নালার উপরেই দোকান। জমা জলে ভোগান্তি মেদিনীপুরের এলআইসি মোড় থেকে গাঁধী মোড় এলাকায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
বৃষ্টি নামতেই জলমগ্ন হল মেদিনীপুর শহর। নিকাশি নালা ছাপিয়ে রাস্তা দিয়ে বইল জলস্রোত। জেরবার হতে হল শহরবাসীকে। আর এই জলছবি প্রশ্ন তুলে দিল শহরের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে। শহরবাসীর আশঙ্কা গোটা বর্ষাকালটাই এ ভাবে ভুগতে হবে। যদিও পুরসভার বক্তব্য, বর্ষায় যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য আগেই নালা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তাহলে বুধবার মাত্র ঘন্টা দেড়েকের বৃষ্টিতে শহর ভাসল কী করে? পুরপ্রধান প্রণব বসুর কথায়, “নিকাশি নালা দখল করে যদি কেউ বসে যায়, তাহলে কী করা যাবে। ওই কারণেই জল নামছে না।”
বৃহস্পতিবারও দিনভর বৃষ্টি হওয়ায় শহরবাসীর ভোগান্তি আরও বেড়েছে। এই দুর্ভোগ থেকে রেহাই মেলার আপাতত কোনও আশা নেই বলেই মনে হচ্ছে। বর্তমানে যে ভাবে নিকাশি নালা বেদখল হয়ে রয়েছে, আগামী দিনে যে তার থেকে আরও বেশি বাড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, প্রতিদিনই রাস্তা দখল করে গড়ে উঠছে দোকান। শহরের একমাত্র নিকাশি খাল দ্বারিবাঁধ খালেরও বিভিন্ন অংশ বেদখল হয়ে যাচ্ছে। কেউ বাড়ি বানিয়ে নিচ্ছেন, কেউ বা আবর্জনা ফেলে বুজিয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে ভবিষ্যতে যে মেদিনীপুর শহরকে চরম সম্যায় পড়তে হবে তা সহজেই অনুমেয়। বিষয়টি পুর-কর্তৃপক্ষেরও অজানা নয়। পুরপ্রধান বলেন, “দারিবাঁধ খাল তো আবজর্না ফেলার জায়গা নয়। সমস্যা মেটাতে স্থানীয় মানুষ ও হকারদের নিয়ে আলোনায় বসেই পথ বের করতে হবে। নাহলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।”
জলে ভাসছে পঞ্চুরচকের রাস্তাও। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
এমনিতেই মেদিনীপুর শহরের নিকাশি ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। কারণ, শহরের উঁচু এলাকা অর্থাৎ রাঙামাটি থেকে শুরু করে পুলিশ লাইন, বিধাননগর, রবীন্দ্রনগর, বটতলাচক, জজকোর্ট, জগন্নাথ মন্দির, মানিকপুর, বড়বাজার এলাকার জল নিকাশির জন্য একটি খাল রয়েছে। কিন্তু সিপাইবাজারের নীচু অংশ থেকে শুরু করে গির্জা, বড় আস্তানা, কালিতেলিচক, হাঁসপুকুর, কর্নেলগোলা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার জন্য কোনও বড় নিকাশি নালা নেই। সেই জল গিয়ে ধর্মার কাছে জমিতে পড়ে। বর্তমানে দ্রুত শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে। ওই সব এলাকায় গড়ে উঠছে বসতি। কিন্তু নিকাশি না থাকায় এই সব এলাকার মানুষকে চরম বিপাকে পড়তে হয়। ভারী বর্ষায় বাড়ির একতলা চলে যায় জলের নীচে। সব জিনিসপত্র গুটিয়ে উঠতে হয় দোতলায়। যাদের দোতলা নেই, তাদের অবস্থা হয় দুর্বিষহ। বৃষ্টি হলেই এআইসি মোড়, পঞ্চুরচক, বটতলাচক, কেরানিতলা সব জায়গাতেই রাস্তার উপর দিয়ে জলের স্রোত বইতে থাকে।
এ সব পুরসভার অজানা নয়। তবু সমস্যার সমাধান হয় না। যাঁদের বিরুদ্ধে সব থেকে বেশি জবরদখলের অভিযোগ, সেই হকাররাও সমস্যার সমাধানই চান। মেদিনীপুর শহরের হকার নেতা শঙ্কর দাস বলেন, “আমিও চাই শহর সুন্দর হোক। কিন্তু যে সব গরিব মানুষ রাস্তার ধারে ব্যবসা করেছেন, তাঁদের কথা পুরসভা ভাবুক। যেখানে জায়গা রয়েছে সেখানে হকারদের জন্য দোকান করে দিক।” শহবাসীর মতে, অবিলম্বে এ ব্যাপারে পুরসভা উদ্যোগী না হলে অদূর ভবিষ্যতে সমস্যা ভয়ানক আকার নেবে। চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলর (নিকাশি) শিপ্রা মণ্ডলও বলেন, “আগামী বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। সমস্যা মেটানোর জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy