Advertisement
২৩ মে ২০২৪

নিরাপত্তার দাবি, পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ সিপিএম

ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানো, বন্ধ দলীয় কার্যালয় খোলা-সহ একগুচ্ছ দাবি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দ্বারস্থ হল সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটি। দলের এক সূত্রে খবর, সোমবার রাতে জোনাল কমিটির তিন সদস্যের এক প্রতিনিধি দল ভারতীদেবীর সঙ্গে দেখা করেন। ঘরছাড়াদের নামের একটি তালিকাও তাঁরা এসপির হাতে তুলে দেন। প্রতিনিধি দলের ছিলেন কেশপুরের বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই, সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটির নবনির্বাচিত সম্পাদক তথা দলের জেলা কমিটির সদস্য মানিক সেনগুপ্ত, জোনাল কমিটির অন্যতম সদস্য তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:১৫
Share: Save:

ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানো, বন্ধ দলীয় কার্যালয় খোলা-সহ একগুচ্ছ দাবি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দ্বারস্থ হল সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটি।

দলের এক সূত্রে খবর, সোমবার রাতে জোনাল কমিটির তিন সদস্যের এক প্রতিনিধি দল ভারতীদেবীর সঙ্গে দেখা করেন। ঘরছাড়াদের নামের একটি তালিকাও তাঁরা এসপির হাতে তুলে দেন। প্রতিনিধি দলের ছিলেন কেশপুরের বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই, সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটির নবনির্বাচিত সম্পাদক তথা দলের জেলা কমিটির সদস্য মানিক সেনগুপ্ত, জোনাল কমিটির অন্যতম সদস্য তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম প্রমুখ। দাবিগুলো খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাসও দেন পুলিশ সুপার।

পুলিশ সুপারের কাছে সিপিএম নেতৃত্বের যাওয়া নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে। প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ করে কেন কেশপুরের সিপিএম নেতৃত্ব পুলিশ সুপারের কাছে সাক্ষাতের জন্য সময় চাইলেন। কেনই বা পুলিশ সুপার রাজিও হয়ে গেলেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, এ সবের পিছনেই রয়েছে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত। কেশপুরের মতো এলাকায় এখনও সে ভাবে বিজেপি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। তাই বিরোধী রাজনৈতিক পরিসরের জায়গাটুকু বিজেপির বদলে সিপিএমকে দিতে রাজি শাসক দলের একাংশ নেতাই।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “অনেকে ভাবছেন কেশপুরের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপির বেড়ে ওঠা কঠিন। এটা ভুল! বীরভূমের পাড়ুই থেকে এঁদের শিক্ষা নেওয়া উচিত!” শাসক দলের ওই নেতার কথায়, “প্রত্যেক এলাকাতেই বিরোধী রাজনৈতিক পরিসর থাকা উচিত। এটা তো ঠিক, সিপিএমের থেকে বিজেপি আরও ভয়ঙ্কর! আরও বড় বিপদ!” যদিও জেলা পুলিশের এক সূত্রের দাবি, যে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এমনকী, সাধারণ মানুষও পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। পুলিশ কখনওই পক্ষপাতমূলক আচরণ করে না। যে কোনও অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করে মাত্র।

সোমবার রাত ন’টা নাগাদ পুলিশ সুপারের অফিসে যান তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রায় এক ঘণ্টা পুলিশ সুপারের অফিসে ছিলেন কেশপুরের তিন সিপিএম নেতা। ঠিক কী কী দাবি জানানো হয়? দলের এক সূত্রে খবর, মূলত তিনটি দাবি জানানো হয়েছে। এক, ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করা। দুই, বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা দলীয় কার্যালয়গুলো খোলার পরিবেশ তৈরি করা। তিন, বেআইনি অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা। কেশপুরের সিপিএম বিধায়ক রামেশ্বর দোলুই বলেন, “আমরা চাই, এলাকায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরুক। পুলিশ সুপারের কাছেও এ কথা বলেছি।” সিপিএমের কেশপুর জোনাল সম্পাদক মানিক সেনগুপ্তের কথায়, “প্রায় পাঁচশো জন ঘরছাড়া রয়েছেন। ৪০ জন শিক্ষক স্কুলে যেতে পারেন না। সমস্ত লোকাল কমিটির অফিস, শাখা কমিটির অফিস বন্ধ। এই পরিস্থিতি আর কতদিন চলবে? পুলিশ সুপারের কাছেও আমরা এই প্রশ্ন রেখেছি।”

দাসেরবাঁধ কঙ্কাল মামলার অন্যতম অভিযুক্ত মানিকবাবু বলেন, “আমাদের কর্মী- সমর্থকদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা হচ্ছে। গত অক্টোবরে ওদের (তৃণমূল) গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এক জেলা পরিষদ সদস্যা খুন হলেন। আমাদের ২৬ জন নেতা- কর্মীর নামে মামলা হল। আমরা এই বিষয়টিও জানিয়েছি। অন্য দিকে, মারধর- লুঠপাট- তোলা আদায় তো চলছেই। আমাদের কর্মী-সমর্থকেরাই আক্রান্ত হচ্ছেন।” সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক মানিকবাবুর কথায়, “আমরা আমাদের বক্তব্য পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি। ঘরছাড়াদের নামের একটি তালিকাও দিয়েছি। উনি আমাদের সব কথাই শুনেছেন। দাবিগুলো খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি, কিছু সুরাহা হবে।”

যদিও এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের কোনও বক্তব্য জানা যায়নি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কেশপুরের এক সিপিএম নেতা বলেন, “পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে দাবি জানানোটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই পড়ে। এটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। আস্তে আস্তে জড়তা কাটছে। আমাদের মুখের কথায় যাঁরা ঘর থেকে বেরোচ্ছিলেন না, তাঁদের অনেকেই অভিজ্ঞতা থেকে বাইরে বেরোচ্ছেন। বুঝতে পারছেন, ঘরে বসে থাকলে বেঁচে থাকা মুশকিল! আশা করি, খুব কম সময়ের মধ্যেই কেশপুরে আমরা হারানো রাজনৈতিক পরিসর ফিরে পাবো।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

medinipur security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE