Advertisement
১৯ মে ২০২৪
প্রহৃত তৃণমূল ব্লক সভাপতিও

পাঁশকুড়া কলেজে টিএমসিপির সংঘর্ষ, জখম ৬

শিক্ষাঙ্গন রণক্ষেত্র নয় এবং কলেজে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে সকদলের ছাত্র সংগঠনকে সতর্ক করেছেন খোদ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সেই বার্তা যে আখেরে তৃণমূল ছাত্র নেতাদের মধ্যে প্রভাব ফেলছে না, ফের একবার তার প্রমাণ মিলল। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে।

ছাত্রদের এমন রণমূর্তিই দেখল বনমালী কলেজ। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

ছাত্রদের এমন রণমূর্তিই দেখল বনমালী কলেজ। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৯
Share: Save:

শিক্ষাঙ্গন রণক্ষেত্র নয় এবং কলেজে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে সকদলের ছাত্র সংগঠনকে সতর্ক করেছেন খোদ রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু সেই বার্তা যে আখেরে তৃণমূল ছাত্র নেতাদের মধ্যে প্রভাব ফেলছে না, ফের একবার তার প্রমাণ মিলল। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে।

অনুপ্রবেশকারীদের উপস্থিতিতে কলেজের পরিচালন সমিতির নির্বাচন ঘিরে বৃহস্পতিবার কলেজ প্রাঙ্গণেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি)র দুই গোষ্ঠী। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক-সহ উভয়পক্ষের মোট ৬ জন আহত হন। এর মধ্যে রয়েছে তিনজন বহিরাগতও। পাঁশকুড়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জখমদের উদ্ধার করে পাঁশকুড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তির ব্যবস্থা করে পুলিশই। জেলা পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, “পাঁশকুড়া কলেজের ক্যাম্পাসে গোলমাল হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। তবে এ বিষয়ে থানায় কোনও পক্ষ অভিযোগ জানায়নি।” এ দিনের ঘটনার পর কলেজের অধ্যক্ষ নন্দ ভট্টাচাযেরর্র্ সঙ্গে ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। আর এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রও।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১৪ অগস্ট কলেজের পরিচালন সমিতির শিক্ষক-অশিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনের দিন রয়েছে। বুধবার এ বিষয়ে কলেজে নোটিস টাঙানো হয়। কলেজের ছাত্র সংসদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে পাঁশকুড়ার তৃণমূল নেতা জাইদুল খানের অনুগামীদের হাতে। কলেজের ছাত্র সংসদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জাইদুল খানের সঙ্গে পাঁশকুড়ার আর এক তৃণমূল নেতা তথা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি আনিসুর রহমানের বিরোধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা নাগাদ কলেজের ক্যাম্পাসের মধ্যে ওই দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে আক্রমণের পাশাপাশি ছাত্র সংসদের অফিসে এ দিন ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। সংঘর্ষে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হারুন আলি খান, পরিচালন সমিতি ছাত্র প্রতিনিধি সদস্য আকাশ গোস্বামী-সহ উভয় পক্ষের মোট ৬ জন জখম হন।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা শুভেন্দু ভক্তা বলেন, “এ দিন সকালে কলেজের ক্লাস শুরুর কিছক্ষণ পরই একদল বহিরাগত যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে কলেজের ছাত্র সংসদের অফিসে এসে ভাঙচুর চালায়। তারপর সেখানে থাকা ছাত্রদেরও মারধর করা হয়। যখন কয়েকজন ওই যুবকদের বাধা দিতে যায়, তাদের মারধর করা হয়।” কলেজের দলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে জাইদুল খানের অভিযোগ, “কলেজের পরিচালন সমিতির নির্বাচনের আগে জোর করে ছাত্র সংসদের দখল নিতে এ দিন আনিসুর রহমানের লোকজন সংসদের অফিসে হামলা চালায়। সংসদের অফিসে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ও নথিপত্র ছিড়ে নষ্ট করেছে ওরা।” জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি আনিসুর রহমান অবশ্য বলেন, “আমি যুব সংগঠনের কাজ জড়িত। কলেজের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নই। অভিযোগ মিথ্যা।”

আবার কলেজের এই গোলমালের পরই এ দিন সন্ধ্যায় তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক সভাপতি দীপ্তি জানাকে মারধরের অভিযোগ উঠল আনিসুর গোষ্ঠীর চারজনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা হল নুরে আলম, শেখ মুজিবর, শেখ সাবির ও শেখ আলম। দীপ্তিবাবুর অভিযোগ, “মোটরবাইকে চেপে বাড়ি ফেরার পথে পাঁশকুড়া পুরাতন বাজারের কাছে আমাকে মারধর করা হয়। অভিযুক্তরা আনিসুরের ঘনিষ্ঠ।” আনিসুর রহমান অবশ্য দাবি করেন, “আমি কলকাতায় আছি। ঘটনার কথা জানি না।”

এ দিন ছাত্র সংঘর্ষের জেরে পণ্ড হয়ে যায় কলেজের ক্লাস। গোলমালের জেরে এ দিন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশনের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের দুই গোষ্ঠীর গোলমালের জেরে কলেজের পঠন-পাঠন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় রাজ্যের শাসক দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

panskura banamali college tamc conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE