Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পাহাড় কেটে হবে রাস্তা, স্বস্তিতে ঢাঙিকুসুম

জঙ্গলমহলে মাওবাদী প্রভাবিত দুর্গম এলাকায় বাসিন্দাদের চলার পথ তৈরি করতে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ।

চলছে রাস্তা তৈরির কাজ। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

চলছে রাস্তা তৈরির কাজ। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

কিংশুক গুপ্ত
বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৪ ০০:৫২
Share: Save:

জঙ্গলমহলে মাওবাদী প্রভাবিত দুর্গম এলাকায় বাসিন্দাদের চলার পথ তৈরি করতে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। এর ফলে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি ব্লকের শিমূলপাল পঞ্চায়েতের ঢাঙিকুসুম, পূর্ণাপানি, ঢাঙিচুয়া, চিরুগোড়া, চিতাজুড়ির মতো সাত-আটটি গ্রামের প্রায় তিন হাজার বাসিন্দা উপকৃত হবেন। পাশাপাশি, ওই এলাকা থেকে ঝাড়খণ্ড রাজ্যে যাওয়াও সহজ হবে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “জঙ্গলমহলে আস্ত পাহাড় কেটে এ ধরনের রাস্তা তৈরির উদ্যোগ এই প্রথম। পরিবেশের ভারসাম্যের যাতে ক্ষতি না হয়, সেদিকে নজর রেখেই রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজন ভিত্তিক পাহাড় কাটা হচ্ছে।”

বছর দশেক আগে বেলপাহাড়ির ওদলচুয়া-কাঁকড়াঝোর রাস্তা তৈরির সময় রাস্তা লাগোয়া পাহাড়ের কিছু কিছু অংশ সামান্য কাটতে হয়েছিল। তবে এবার ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানা লাগোয়া বেলপাহাড়ির ঢাঙিকুসুম গ্রাম থেকে চিতাজুড়ি পর্যন্ত ৫৬০ মিটার রাস্তাটি তৈরি হচ্ছে আস্ত একটি পাহাড় কেটে। পাহাড়টির নামও ঢাঙিকুসুম। ওই পাহাড় কাটার পরে কংক্রিটের ঢালাই রাস্তা তৈরি হবে। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম ওই এলাকায় স্থায়ী রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তিপ্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা। পাহাড় কাটার আগে এলাকার একটি খালের উপর আইএপি প্রকল্পে কালভার্ট তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করতে প্রকল্পটির জন্য খরচ ধরা হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। এর মধ্যে পাহাড় কাটার জন্য জেলা পরিষদ দিয়েছে ১৫ লক্ষ টাকা। প্রথম পর্যায়ে ঢালাই রাস্তা তৈরির জন্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ বরাদ্দ করেছে ২৫ লক্ষ টাকা। দু’টি পর্যায়ে আরও ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হবে বলে জানান পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি জানান, বেলপাহাড়ি ব্লকের বাঁশপাহাড়ি, শিমূলপাল ও ভুলাভেদা এই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকার দুর্গম গ্রামগুলিতে যোগাযোগের স্থায়ীপথ করতে কংক্রিটের ঢালাই রাস্তা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জোড়াম-সহ কয়েকটি গ্রামে ঢালাই রাস্তা তৈরির কাজ অনেকটাই হয়ে গিয়েছে। ঢাঙিকুসুমের বাসিন্দা মুখি শবর, নিত্যানন্দ পাত্র, মালতী শবরদের কথায়, “পাহাড়ি পাথুরে পথ দিয়ে যাতায়াতে ভীষণ সমস্যা হয়। বর্ষাকালে পিছলপথে যাতায়াত করতে গেলে পদে পদে বিপদ। কেউ অসুস্থ হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে চর্তুদোলায় ঝুলিয়ে নিয়ে যেতে হয়।” বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির স্থানীয় সদস্য ইন্দিরা মুর্মু বলেন, “এলাকায় আগে রাস্তা বলতে কিছুই ছিল না। পাহাড় কেটে রাস্তাটি তৈরি হলে দীর্ঘদিনের সমস্যা মিটবে।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় ঢালাই রাস্তা তৈরির কাজ প্রথম শুরু হয় ঝাড়খণ্ড রাজ্যে। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুর্গম গ্রামগুলিতে ঢালাই রাস্তা রয়েছে। এ ধরনের রাস্তার সুবিধা অনেক। প্রথমত, দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না। পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টির ফলে মাটি বা মোরামের রাস্তা ধুয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ঢালাই রাস্তা অনেক বেশি নিরাপদ। এমন রাস্তা হলে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলপাহাড়ি ব্লকে বিভিন্ন ধরনের রাস্তা তৈরির জন্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের বরাদ্দ করা এক কোটি টাকা খরচ করে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার মোরাম রাস্তা করা হয়েছে। ঢালাই রাস্তার খরচ বেশি বলে যে সব গ্রাম অত্যন্ত দুর্গম, কেবলমাত্র ওই এলাকাগুলিতে ঢালাই রাস্তা তৈরি হবে। বেলপাহাড়ির বিডিও সর্বোদয় সাহা জানান, বাঁশপাহাড়ি, শিমুলপাল ও ভুলাভেদা এই তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় দশ কিলোমিটার ঢালাই রাস্তা তৈরি হবে। কয়েকটি রাস্তা তৈরি হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE