Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ফলের আগে কেউ ডুবে বইতে, কেউ গেলেন মন্দিরে

পরীক্ষার ফল বেরোবে আজ, শুক্রবার। স্বভাবতই টেনশন রয়েছে পরীক্ষার্থীদের। কারণ, পরীক্ষা যে দিল্লি যাওয়ার। লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের আগে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা অবশ্য প্রকাশ্যে উদ্বেগের কথা মানছেন না। মুখে বলছেন, চিন্তার কী আছে!

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৪ ০১:৪৬
Share: Save:

পরীক্ষার ফল বেরোবে আজ, শুক্রবার। স্বভাবতই টেনশন রয়েছে পরীক্ষার্থীদের। কারণ, পরীক্ষা যে দিল্লি যাওয়ার। লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের আগে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা অবশ্য প্রকাশ্যে উদ্বেগের কথা মানছেন না। মুখে বলছেন, চিন্তার কী আছে! তবে চাপা টেনশন যে রয়েছে, তা ধরা পড়ছে প্রার্থীদের চেহারায়। তা কাটাতে ফলপ্রকাশের আগের দিন কেউ ঘন ঘন চায়ে চুমুক দিচ্ছেন, কেউ ডুব দিয়েছেন বইয়ের পাতায়, কেউ আবার গল্প করে চাপ কমাতে চাইছেন।

টানা দু’মাস দিন-রাত এক করে ছিল প্রচারের ব্যস্ততা। ভোটের পরদিনও খুব একটা ফুরসত পাননি ঘাটালের বাম প্রার্থী সন্তোষ রাণা। সিপিআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন দলের কাজে। অভ্যাস মতো বৃহস্পতিবারও ভোরেই বিছানা ছাড়েন তিনি। চা-প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়েন পার্টি অফিসের দিকে। তারই ফাঁকে খবরের কাগজগুলোয় চোখ বুলিয়ে নেন। দলের জেলা কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে ফের আসে চা। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে দুপুরের খাওয়া সেরে সন্তোষবাবু ঘাটাল রওনা দেন।

এই গরমেও ঘন ঘন চা কেন? টেনশনে আছেন? সন্তোষবাবুর জবাব, “দুধ চা চলেই। টেনশনের কী আছে? ভোটে তো হার-জিত থাকবেই।” নিজের কেন্দ্রের ফল নিয়ে সন্তোষবাবুর বক্তব্য, “কেশপুর, ঘাটাল-সহ একাধিক এলাকায় ভোট লুঠ হওয়ায় ব্যবধান হয়তো কমবে। তবে জিতবই।”

মেদিনীপুর কেন্দ্রের বাম প্রার্থী প্রবোধ পণ্ডা এ দিন অনেকটা সময় বই পড়ে কাটিয়েছেন। তারই মাঝে দলীয় কর্মীদের থেকে নিজের নির্বাচনী এলাকার খোঁজখবর নিয়েছেন। ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস মোকাবিলায় কী করণীয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। ভোটের ফল নিয়ে উদ্বেগের কথা স্বীকার করলেন না প্রবোধবাবুও। তাঁর কথায়, “টেনশন হবে কেন? ভোট তো হয়ে গিয়েছে!” একই সঙ্গে জানালেন, সময় পেলেই বই পড়েন, লেখালেখি করেন। এটা তাঁর অভ্যাস। এতে নতুন কিছু নেই।

মেদিনীপুর লোকসভার বিজেপি প্রার্থী প্রভাকর তিওয়ারিও এ দিন বইয়ের পাতায় ডুব দিয়েছিলেন। তারই ফাঁকে সকালে খড়্গপুরে গিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কী হবে ভোটের ফল? প্রভাকরবাবু বলেন, “মেদিনীপুরের ফল নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। তবে ভোটারদের কথা যদি ধরতে হয়, তাহলে বিজেপি ভাল ফলই করবে। আমরা আশাবাদী।”

এই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী বিমল রাজ এ দিনও ব্যস্ত ছিলেন নিজের কাজে। চিকিত্‌সক এই প্রার্থী রোজকার মতোই অনেকটা সময় কাটিয়েছেন চেম্বারে রোগীদের সঙ্গে। ভোটের রেজাল্টের টেনশন কাটাতে নিজের কাজে ডুব দেওয়ার থেকে ভাল ওষুধ যে আর হয় না! ঘাটালের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়ার দিনটা অবশ্য একটু অন্য ভাবে কেটেছে। দিনভর তিনি খোশমেজাজে ছিলেন। সকালে মেদিনীপুরে এসে সস্ত্রীক বটতলাচক কালীমন্দিরে পুজো দেন। তারপর জেলা কংগ্রেস অফিসে গিয়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা সারেন। তারপর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে গল্প জুড়ে দেন। তখন মানসবাবুকে দেখে বোঝার জো নেই যে তিনি একজন প্রার্থী এবং এক দিন পরেই ভোটের ফলপ্রকাশ! গল্পের ফাঁকে তিনি জানালেন, তাঁর ভুতের ভয় আছে। কংগ্রেস প্রার্থীর কথায়, “রাতে ভয় পেলে আমি আলো জ্বেলে ঘুমোই।” কী হবে ভোটের ফল? মানসবাবু বলেন, “প্রার্থী হিসেবে আমার নাম অনেক পরে ঘোষণা হয়েছিল। সময় কম পেলেও মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ভোট করেছি। রিগিং, ছাপ্পা হলেও আশা করি আমিই জিতব।”

ঘাটাল কেন্দ্র যাঁর কল্যাণে নজরকাড়া, তৃণমূলের সেই তারকা প্রার্থী দেব ভোট মিটতেই শু্যটিংয়ে ফিরেছেন। তাঁর জয় নিয়ে দলীয় নেতৃত্ব নিশ্চিত। ভোটের দিন দেবও বলেছেন, “প্রচারে ভাল সাড়া পেয়েছি। মানুষ নিজের ভোট নিজেই দিয়েছেন। তাই আমার দলই জিতবে।” তবে কিছুটা টেনশন আছে টলিউডের সুপারস্টারেরও। তৃণমূল সূত্রের খবর, ভোটের পর কলকাতায় ফিরে দেব ফোন করেছিলেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়কে। জানতে চেয়েছেন, “দীনেনদা, আমি জিতব তো?”

ঝাড়গ্রামে জয় নিয়েও নিশ্চিন্ত তৃণমূল। বলা ভাল, কত ব্যবধানে উমা সরেন জিতবেন এখন তারই অপেক্ষায় রয়েছে জঙ্গলমহল। উমা নিজে বলছেন, “জঙ্গলমহলে শান্তি ও উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে মানুষ সাড়া দিয়েছেন। জয়ের ব্যাপারে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত।” অন্য দিকে গতবারের জয়ী সিপিএম প্রার্থী পুলিনবিহারী বাস্কের বক্তব্য, “সন্ত্রাস ও ছাপ্পার ভোট হয়েছে। আমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও বুথেই পুনর্নির্বাচন হয় নি। ফলে, আগাম কিছু আর বলতে চাই না।”

অবাধ ভোট হয়নি অভিযোগ করে ফল নিয়ে আগাম মন্তব্য করতে চাননি ঝাড়গ্রামের কংগ্রেস প্রার্থী অনিতা হাঁসদাও। আর বিজেপি প্রার্থী বিকাশ মুদি বলেন, “কেন্দ্রে স্থিতিশীল সরকার ও জঙ্গলমহলের উন্নয়নের স্বার্থে মানুষের কাছে আবেদন রেখেছিলাম। ভোটের ফলেই বোঝা যাবে সেই আবেদনে মানুষ সাড়া দিলেন কিনা। তবে লড়াইয়ে থাকব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE