Advertisement
E-Paper

বিধিতে থমকে রাস্তা সংস্কার, ভোটের মুখে শুরু চাপানউতোর

প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পে তৈরি পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১১টি রাস্তা সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এর মধ্যে ৫৪টি রাস্তাই গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেহাল রাস্তা সংস্কারের দাবিতে স্থানীয় গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েতে দরবার করছেন। কিন্তু, আশ্বাস ছাড়া কিছুই মিলছে না। কারণ, রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজনীয় অর্থ জেলায় নেই। ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় নতুন করে অর্থ বরাদ্দেরও প্রশ্ন নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০৩:১৬

প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পে তৈরি পশ্চিম মেদিনীপুরের ১১১টি রাস্তা সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, এর মধ্যে ৫৪টি রাস্তাই গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেহাল রাস্তা সংস্কারের দাবিতে স্থানীয় গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েতে দরবার করছেন। কিন্তু, আশ্বাস ছাড়া কিছুই মিলছে না। কারণ, রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজনীয় অর্থ জেলায় নেই। ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় নতুন করে অর্থ বরাদ্দেরও প্রশ্ন নেই।

এখন উপায়?

জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “সমস্যার কথা আমাদের অজানা নয়। বিষয়টি রাজ্যকেও জানানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি রাস্তার পরিস্থিতি সত্যিই খুব খারাপ। আমরা মোরাম ফেলে অস্থায়ী ভাবে মেরামতের চেষ্টা করছি।” ভোটের মুখে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। জেলা পরিষদে নতুন ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটের আগে কোনওমতে রাস্তা সারিয়ে মানুষের মন পেতে চাইছে তারা। দীর্ঘ দিন জেলা পরিষদের সভাধিপতির দায়িত্ব সামলানো সিপিএম নেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “জেলা পরিষদ চাইলে আগেই উদ্যোগী হয়ে রাস্তা মেরামত করতে পারত। ভোটের জন্য তা আটকে যেত না।” একই সঙ্গে অন্তরাদেবীর মত, “ভোটের মুখে যা হোক করে রাস্তা সারিয়ে মানুষের মন পাওয়া যাবে না।” অস্থায়ী ভাবে রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগের সঙ্গে ভোট-রাজনীতির কোনও সম্পর্ক রয়েছে বলে অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ। পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবালবাবুর বক্তব্য, “মানুষের প্রয়োজনেই রাস্তা মেরামতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্য কিছু নেই।”

জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, কয়েক সপ্তাহ আগে কলকাতায় গিয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখাও করে এসেছে জেলা পরিষদের এক প্রতিনিধি দল। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরিরা গিয়ে পরিস্থিতির কথা পঞ্চায়েতমন্ত্রীকে জানিয়ে এসেছেন। এ দিকে, লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় লাগু হয়েছে আচরণবিধি। এই বিধির গেরোয় থমকে গিয়েছে রাস্তা সংস্কার। এখন নতুন করে কাজই শুরু করা যাবে না। যে সব প্রকল্পের কাজ নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগে শুরু হয়েছে, শুধু সেগুলো চলবে। তবে, জরুরি ভিত্তিতে কিছু মেরামতের প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে তা করতে হবে।

গ্রামীণ সড়ক যোজনার রাস্তা ৫ বছরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকেই তা মেরামত করতে হয়। ৫ বছরের পরে রাস্তা সংস্কার হলে রাজ্য সরকার অর্থ বরাদ্দ করে। তবে রাস্তার ক্ষতি যদি বন্যায় হয়, সে ক্ষেত্রে ঠিকাদারের কিছু করণীয় থাকে না। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, ৫ বছরেরও বেশি আগে তৈরি হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার এমন ৮৫টি রাস্তা সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। এর মধ্যে গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৮টি রাস্তা। সব মিলিয়ে দৈর্ঘ্য ১৪৬.২৬ কিলোমিটার। আর সাধারণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭টি রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩৫৪.৪৯ কিলোমিটার। ৫ বছরের মধ্যে তৈরি হওয়া যে ২৬টি রাস্তা সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে, তার প্রতিটিই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। এর দৈর্ঘ্য ১৭৮.৫৫ কিলোমিটার।

অতিবৃষ্টি এবং জলাধার থেকে জল ছাড়ায় গত অক্টোবরে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। ২৯টি ব্লকের মধ্যে ২৬টিতে কমবেশি দুর্যোগের প্রভাব পড়ে। টানা কয়েকদিন জল জমে থাকায় বহু গ্রামীণ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিস্থিতি দেখে রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগী হয় জেলা পরিষদ। কিন্তু, বাধ সাধে অর্থ। জেলা পরিষদেরই এক সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় তৈরি ১১১টি রাস্তার সঙ্গেই জেলার ৪৫টি গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ সড়কেরও সংস্কার প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে বিনপুর ১ ব্লকের সালুকা থেকে রামগড়, বিনপুর-২ এর চাকাডোবা থেকে বাঁশপাহাড়ি, দাঁতন ২ ব্লকের গড়হরিপুর থেকে এগরা সীমানা, দাসপুর ১ ব্লকের রাজনগর থেকে বেলতলা, ডেবরার চন্দনপুর থেকে ঘোষপুর, ঝাড়গ্রামের কলাবনি থেকে আগুইবনি, কেশপুরের আমড়াকুচি থেকে মহিষদা, মেদিনীপুর সদরের শিয়ালসাই থেকে হরিপুর, পিংলার গোবর্ধনপুর থেকে পিণ্ডরুই, সবংয়ের মোহাড় থেকে বিষ্ণুপুর, শালবনির ভাদুলতা থেকে কর্ণগড় প্রভৃতি। এই ৪৫টি রাস্তার দৈর্ঘ্য সব মিলিয়ে ২৫৫.৫ কিলোমিটার। এ ক্ষেত্রে মেরামতে প্রয়োজন ২০০ কোটি টাকা। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে ইতিমধ্যে ‘আরআইডিএফ ফান্ড’ থেকে অর্থ চেয়ে রাজ্যের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে অনুমোদন মেলেনি।

বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গত বছরের অক্টোবরে জেলায় এসেছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী। গিয়েছিলেন ঘাটাল-দাসপুরে। তখনই সুব্রতবাবু প্রতিশ্রুতি দেন, ‘বন্যার জল নেমে গেলে এক ইঞ্চি রাস্তাও কাঁচা থাকবে না। সব পিচের হবে। জেলায় পরিকল্পনা হবে। আমার দায়িত্ব অর্থ জোগান দেওয়া। আমি সব রকম চেষ্টা করব।’ কিন্তু, কোথায় কী! জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, রাজ্যও সমান তৎপর। ভোটপর্ব মিটলেই অর্থ বরাদ্দ হবে। তারপরই দ্রুত রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যাবে।

pradhan mantri gram sadak yojana medinipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy