শেষ সময়ে বাবার পাশে ছত্রধর। —নিজস্ব চিত্র।
শেষ ফাল্গুনের বাতাসে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। শনিবার মধ্য রাতে লালগড়ের আমলিয়া গ্রামে তখনও উৎসাহী জনতার ভিড়। চার বছর পর ফের লাল ধুলো উড়িয়ে পুলিশের গাড়ি এসে থামল মাটির দোতলা বাড়িটার সামনে। সে বার প্যারোলে ছাড়া পেয়ে ভাইয়ের শেষকৃত্যে যোগ দিতে এসেছিলেন। এবার এলেন বাবার শেষকৃত্যে। সাদা ফতুয়ার উপর হলুদ-লাল ডুরে কাটা নীল রঙের কম্বল জড়ানো। ছাই রঙা মাফলারে কান ঢাকা। চোখে স্টিল ফ্রেমের পাওয়ার চশমা। প্রিজন ভ্যান থেকে নামলেন জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতো।
বাড়ির উঠোনে বরফের উপ রাখা ছিল অশীতিপর বাবা আশুতোষ মাহাতোর নিথর দেহ। পাশে বসে থাকা মা বেদনবালাদেবী বড় ছেলেকে দেখে ডুকরে কেঁদে বলে ওঠেন, “তোর আন্দোলনের সাথীরা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গেল। আর তুই এখনও জেলে পচছিস। তোর বাবা তোকে শেষ বারের মতো দেখতে পেলেন না।” মাকে জড়িয়ে ধরে প্রথমে কেঁদে ফেলেন ছত্রধর। তারপর কোনও জবাব না দিয়ে বাবার দেহে হাত বুলিয়ে চোখের জল ফেলতে থাকেন। কুর্মি প্রথা অনুযায়ী বাবার শরীরে হলুদ, তেল ও চন্দন মাখিয়ে দেন ছত্রধর। শেষ যাত্রায় বাঁশের খাটিয়ায় আশুতোষবাবুর দেহ কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে যান ছত্রধর ও তাঁর ছোট ভাই অনিল এবং ছত্রধরের ছোট ছেলে দেবীপ্রসাদ ও পরিজনরা। পুলিশের কড়া পাহারায় বাবার মুখাগ্নি করেন ছত্রধর। চিতা না নেভা পর্যন্ত শ্মশানেই বসে ছিলেন তিনি। ভোরের আলো ফোটার পরে দুই ছেলের হাত ধরে বাড়ি ফিরে প্রথামতো পা ধুয়ে পোষাক বদলান ছত্রধর। বাড়ির একতলার ঘরে পুলিশি প্রহরায় আত্মীয় পরিজনদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ চায়ে চুমুক দিয়ে পুলিশের গাড়িতে ওঠেন ছত্রধর।
২০০৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হওয়ার পর টানা সাড়ে পাঁচ বছর জেলবন্দি রয়েছেন ছত্রধর। তবে চার বছর আগে ২০১১ সালের মার্চে মেজ ভাই মাওবাদী শীর্ষ নেতা শশধর মাহাতোর শেষকৃত্য, ঘাট ও শ্রাদ্ধে যোগ দিতে প্যারোলে ছাড়া তিন বার আমলিয়া গ্রামে এসেছিলেন ছত্রধর। তখন তাঁর ঠিকানা ছিল মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেল। ছত্রধর এখন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি। শুক্রবার রাতে আমলিয়া গ্রামের বাড়িতে আশুতোষবাবুর মৃত্যু হয়। বাবার শেষকৃত্যে বড় ছেলে ছত্রধর যাতে যোগ দিতে পারেন, সে জন্য শনিবার ঝাড়গ্রাম দ্বিতীয় এসিজেএম আদালতে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী কৌশিক সিংহ। ছত্রধরের আইনজীবী কৌশিক সিংহ বলেন, “ক্ষৌরকর্ম ও শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যাতে ছত্রধর যোগ দিতে পারেন, সেই আবেদন জানাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy