Advertisement
০৯ মে ২০২৪

বিরোধীদের অস্তিত্ত্বই নেই, দাবি মুকুলের

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের জেলা সফরের ঠিক এক দিন পরেই পশ্চিম মেদিনীপুরে সভা করে গেলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়। রাহুলবাবু যেখানে সভা করেছিলেন সেই নয়াগ্রাম ও খড়্গপুর গ্রামীণের মাতকাতপুরেই এ দিন ছিল মুকুলের সভা। দু’জায়গাতেই অবশ্য বিরোধীদের কার্যত অস্তিত্বহীন বলে দাবি করেন তৃণমূলের এই শীর্ষ নেতা। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যে যখন বামেরা ক্ষয়িষ্ণু এবং উত্থান হচ্ছে বিজেপির, তখন বিজেপিকে উপেক্ষার বার্তা দিয়ে মুকুলবাবু পরোক্ষে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ রাজ্যে বিজেপিই তাঁদের মাথাব্যাথার কারণ।

খড়্গপুর গ্রামীণের মাতকাতপুরে মুকুল রায়ের সভা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

খড়্গপুর গ্রামীণের মাতকাতপুরে মুকুল রায়ের সভা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

দেবমাল্য বাগচি
মাতকাতপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৪ ০০:৫৯
Share: Save:

বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের জেলা সফরের ঠিক এক দিন পরেই পশ্চিম মেদিনীপুরে সভা করে গেলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়। রাহুলবাবু যেখানে সভা করেছিলেন সেই নয়াগ্রাম ও খড়্গপুর গ্রামীণের মাতকাতপুরেই এ দিন ছিল মুকুলের সভা। দু’জায়গাতেই অবশ্য বিরোধীদের কার্যত অস্তিত্বহীন বলে দাবি করেন তৃণমূলের এই শীর্ষ নেতা। রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যে যখন বামেরা ক্ষয়িষ্ণু এবং উত্থান হচ্ছে বিজেপির, তখন বিজেপিকে উপেক্ষার বার্তা দিয়ে মুকুলবাবু পরোক্ষে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এ রাজ্যে বিজেপিই তাঁদের মাথাব্যাথার কারণ।

এ দিন প্রথম সভা ছিল নয়াগ্রামে। নয়াগ্রামের সভায় মুকুলবাবু বক্তব্যের একটা বড় সময় তিনি ব্যয় করেন বিজেপির সমালোচনায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “কেন্দ্র উস্কানি দিচ্ছে বলেই রায়দিঘিতে আমাদের ৪ জন কর্মী খুন হয়ে গেলেন। দিল্লি থেকে প্রতিনিধি দল আসছে। কিন্তু, ওই দল কী দেখছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। দেশের মধ্যে সবথেকে শান্তিপূর্ণ জায়গা এই বাংলা।” ভুল বুঝে যাঁরা বিজেপিতে গিয়েছেন, তাঁরাও ফের ফিরে আসবেন বলে এ দিন দাবি করেন মুকুলবাবু। এ দিন নয়াগ্রামের সভায় সিপিএম-বিজেপি ছেড়ে বেশ কয়েকজন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলছুটদের মধ্যে রয়েছেন নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্য আশালতা সিংহ। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ, জেলা তৃণমূল নেতা শৈবাল গিরি প্রমুখ।

নির্ধারিত সময়ের প্রায় ঘণ্টা দু’য়ের পর খড়্গপুর গ্রামীণের মাতকাতপুরে সভা করেন মুকুলবাবু। এখানের সভায় মিনিট সাতেকের বক্তব্যে তিনি বলেন, “পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে তিনটি আসনে আপনারা আমাদের দলের প্রার্থীদের জয়ী করেছেন। তাঁরা দিল্লি গিয়ে রাজ্যের সম্প্রীতি রক্ষার কাজ করবেন।” এ দিন কংগ্রেস ও বিজেপিকে কটাক্ষ করে তাঁর বক্তব্য, “৮ শতাংশ ভোট পেয়ে কংেগ্রেসের অবস্থা এখন তলানিতে। আর দেশের ৩১ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি ও এনডিএ জোট। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এই দুই দলেরই কোনও গুরুত্ব নেই। এখানে তো ওদের জামানত জব্দ হয়েছে।” বিরোধী দলের প্রসঙ্গে মুকুলবাবু বলেন, “রাজ্যে বিরোধী নেই, যা আছে তা কল্পনা মাত্র। তবে কোনও কোনও দল এমন হাবভাব করছে যেন এখনই তাদের দল রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে। তবে তা কখনও সম্ভব নয়। কারণ বাংলার মানুষ উন্নয়নের পক্ষে রয়েছেন।” আরএসপির দুই পঞ্চায়েত সদস্য সাবরেন্নেসা বিবি ও মিলি কালিন্দি এধিন তৃণমূলে যোগ দেন। সিটু ছেড়ে আইএনটিটিইউসিতে আসেন গুণধর দাস ও সুমি হালদার। এ দিনের সভায় হাজির ছিলেন জেলা সভাপতি দীনেন রায়, জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ, রাজ্য যুব সভাপতি সৌমিত্র খান প্রমুখ।

দিন কয়েক আগে নয়াগ্রামে এসেছিল রাজ্য বিজেপির এক প্রতিনিধি দল। গত ২৬ মে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন অর্ধেন্দু পাত্র। অর্ধেন্দুবাবু তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই দিন তৃণমূলের হাজার দেড়েক কর্মী-সমর্থকও দল ছাড়েন। বিজেপির অভিযোগ, এরপর থেকেই তৃণমূল সন্ত্রাসের মাত্রা বাড়িয়েছে। সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতেই নয়াগ্রামে আসে রাজ্য বিজেপির এক প্রতিনিধি দল। গত রবিবার জেলা সফরে এসে নয়াগ্রাম এবং খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকায় সভা করেছেন রাহুলবাবু। তৃণমূলের এক সূত্রে অবশ্য খবর, রাহুলবাবু জেলা ছাড়ার পর তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়েই মুকুলবাবুর সভার আয়োজন করেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার বিজেপির ভোট বেড়েছে। জেলার সর্বত্র বিজেপির তেমন সংগঠন নেই। কার্যত বিনা সংগঠনেই এ বার লোকসভায় গড়ে ১০ শতাংশ ভোট পেয়েছে দল। বিজেপির এই ভোটপ্রাপ্তিকে মোটেও লঘু করে দেখতে চাইছেন না অনেকেই। দলের ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতেই নেতৃত্বের এই তৎপরতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debmalya bagchi matkatpur mukul roy bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE