Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ভাগ্নের সঙ্গে সম্পর্ক, যুগলকে চুল কেটে শাস্তি

স্বামী মারা যাওয়ার পর ভাগ্নের সঙ্গে একসাথে থাকতেন মহিলা। কিন্তু এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মাতব্বররা। তাই ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে ওই যুগলের চুল কেটে গ্রামে ঘোরানোর অভিযোগ উঠল ওই মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে দাঁতন-১ ব্লকের শালিকোটা গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর আড়বোনা গ্রামের ঘটনা।

দাঁতনের ঘটনায় ধৃতেরা মেদিনীপুর আদালতে।

দাঁতনের ঘটনায় ধৃতেরা মেদিনীপুর আদালতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০১:০০
Share: Save:

স্বামী মারা যাওয়ার পর ভাগ্নের সঙ্গে একসাথে থাকতেন মহিলা। কিন্তু এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মাতব্বররা। তাই ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে ওই যুগলের চুল কেটে গ্রামে ঘোরানোর অভিযোগ উঠল ওই মাতব্বরদের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে দাঁতন-১ ব্লকের শালিকোটা গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর আড়বোনা গ্রামের ঘটনা। ওই নিগৃহীতার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রামের মোড়ল মন্টু মাণ্ডি, সাহেব বাস্কে-সহ ৮ জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর জেলা আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তিনজনকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন মঞ্জুর করেন। বাকি ৫ জনকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর আড়বোনা গ্রামের বাসিন্দা বছর বত্রিশের ওই মহিলার স্বামী মাস তিনেক আগে টিবিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ওই দম্পতির তিনটি মেয়ে রয়েছে। ওই মাতব্বরদের অভিযোগ, স্বামী অসুস্থ থাকাকালীন ভাগ্নের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ওই মহিলার। তাই স্বামীর মৃত্যুর পরেই বছর বাইশের ভাগ্নের সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তিনি। দিন পনেরো আগে ফের তাঁরা গ্রামে ফেরেন। ওই যুগলের পরিবারের সদস্যরা এই সম্পর্ক মানলেও আদিবাসী পাড়ার এই সম্পর্ক মানেনি।

বুধবার সন্ধ্যায় অশান্তির মীমাংসা করে দেওয়ার নাম করে সালিশি সভা ডাকা হয়। নিগৃহীতার অভিযোগ, সেই সভায় নেতৃত্ব দেন সিপিএমের নেতা মন্টু মাণ্ডি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভূতা বেসরা, কুঁয়ার বাস্কে, গুরুবারি বাস্কে, গোপাল মাণ্ডি, টুনু বাস্কে-সহ কয়েকজন মাতব্বর। মীমাংসার বদলে ওই যুগলের কপালে জোটে অপমান। আর তাঁদের মাথার চুল কেটে গ্রামের বাজারে শুকনো মালা পরিয়ে ঘোরানোর নিদান দেওয়া হয়। রাতেই ঘটনায় খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছায় দাঁতন থানার পুলিশ। নিগৃহীতা মহিলা ১২জনের নামে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ দুই মহিলা-সহ ৮জনকে গ্রেফতার করে। তবে বাকিরা পলাতক।

মহিলার অভিযোগ, “স্বামী মারা যাওয়ার পর ভাগ্নের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ায় আমরা একসঙ্গে থাকতাম। কিন্তু সমাজ তা মানেনি। সেই কারণেই সালিশি সভা ডেকে আমাদের অপমান করা হয়েছে। চুল কেটে সারা গ্রাম ঘুরতেও বাধ্য করা হয়েছে আমাদের।” খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ৮ জনকে ধরা হয়েছে। তবে বাকিদের খোঁজ চলছে।”

তবে দাঁতনে সালিশি সভার এমন ঘটনা নতুন নয়। গত ২১ মার্চ এই ব্লকেরই পাঁচরোল গ্রামে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে এক শবর মহিলাকে মারধর করে চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। অপমানে ওই মহিলার মা বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হন। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিষয়টি নিয়ে উত্তাল হয় রাজনীতি। বুধবারের এই ঘটনায় ফের বেআব্রু হল সমাজের লাগামহীন ঔদ্ধত্য। দাঁতন ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিক্রম প্রধান বলেন, “৩৪ বছর ধরে সিপিএম এই সালিশি ব্যবস্থাকে প্রশ্রয় দিয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিও সিপিএমেরই। দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।” সিপিএমের জোনাল কমিটির সম্পাদক অনিল পট্টনায়ক বলেন, “তৃণমূল পরিকল্পিতভাবে দোষীদের আড়াল করে প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ফাঁসিয়েছে। তবে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি পেতেই হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dantan illicit relationship punishment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE