Advertisement
০১ মে ২০২৪

মাধ্যমিক স্কুলে অলচিকি নেই, বিক্ষোভ পড়ুয়াদের

প্রাথমিকে সাঁওতালি ভাষার অলচিকি হরফে পড়াশোনা করেছে আদিবাসী পড়ুয়ারা। কিন্তু ব্লকের কোনও স্কুলে মাধ্যমিক স্তরে সাঁওতালি ভাষার ওই পাঠ্যক্রম চালু না থাকায় বিপাকে পড়ুয়ারা। শুক্রবার নারায়ণগড়ের নেকুড়সেনী হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণি থেকে অলচিকি চালুর দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় তারা।

নারায়ণগড়ে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

নারায়ণগড়ে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০৯
Share: Save:

প্রাথমিকে সাঁওতালি ভাষার অলচিকি হরফে পড়াশোনা করেছে আদিবাসী পড়ুয়ারা। কিন্তু ব্লকের কোনও স্কুলে মাধ্যমিক স্তরে সাঁওতালি ভাষার ওই পাঠ্যক্রম চালু না থাকায় বিপাকে পড়ুয়ারা। শুক্রবার নারায়ণগড়ের নেকুড়সেনী হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণি থেকে অলচিকি চালুর দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় তারা। এ দিন পড়ুয়াদের বিক্ষোভে পাশে দাঁড়িয়েছে ‘আদিবাসী সোশিও এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’ বা ‘আসেকা’-ও। ২০১১ সাল থেকে ব্লকে পাঁচটি প্রাথমিক স্কুলে অলচিকি হরফের পাঠাক্রম চালু হয়েছে। কিন্তু কোনও মাধ্যমিক স্কুলে লচিকি না থাকায় স্কুল বন্ধ রেখে বিক্ষোভ চলে।

জেলার পিছিয়ে পড়া সাঁওতাল জনজাতির মাতৃভাষায় গুরুত্ব দিয়ে ২০১০ সালেবিভিন্ন প্রাথমিকে স্কুলে অলচিকি হরফে সাঁওতালি ভাষায় পাঠ্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত হয়। ২০১১ সালের শিক্ষাবর্ষ থেকেই নারায়ণগড় ব্লকের একতারপুর, নেকুড়সেনী, খটনগর, হলদিয়া, সুরিয়া- এই পাঁচটি প্রাথমিক স্কুলে ওই পাঠ্যক্রম চালু হয়। সেই সময় ওই প্রাথমিক স্কুলগুলিতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া আদিবাসী পড়ুয়ারা এ বছর চতুর্থ শ্রেণি পাশ করেছে। কিন্তু অলচিকিতে শিক্ষিত ওই পড়ুয়াদের জন্য ব্লকে একটিও মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। খটনগরের এক পড়ুয়ার অভিভাবক রামচন্দ্র টুডু, নেকুড়সেনীর এক পড়ুয়ার অভিভাবক নবীন মুর্মুদের কথায়, “আমরা যখন ছেলেমেয়েদের ভর্তি করেছিলাম, তখন জানতাম এই নেকুড়সেনী হাইস্কুলেই অলচিকিতে পঞ্চম শ্রেণি থেকে পড়া যাবে। কিন্তু চার বছর পর এখন ছেলেমেয়েরা চতুর্থ শ্রেণি পাশ করলেও তাঁদের অলচিকিতে পড়ার ব্যবস্থা নেই। তাহলে ওদের ভবিষ্যত্‌ কী অন্ধকারে তলিয়ে যাবে?”

অলচিকি হরফে সাঁওতালি ভাষার পাঠ্যক্রম চালুর দাবিতে নেকুড়সেনী হাইস্কুলের গেটে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয় আদিবাসী পড়ুয়ারা। এ দিন বেলা সাড়ে ১০টা থেকে চলা বিক্ষোভের জেরে শিক্ষকেরা স্কুলে ঢুকতে না পেরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সত্যজিত্‌ কর বলেন, “বিক্ষোভ যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু ওই বিক্ষোভের জেরে আমরা বই দিবস পালন করতে পারলাম না। আমি মহকুমাশাসকে বিষয়টি জানিয়েছি।” এ দিন পড়ুয়া-অভিভাবকদের সঙ্গে বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন ‘আসেকা’-র সদস্যরাও। ওই ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘আসেকা’-র জেলা সদস্য সূর্যকান্ত মুর্মু বলেন, “এখানের পাঁচটি প্রাথমিক স্কুলে আমাদের সংস্কৃতির বহু পড়ুয়া রয়েছে। নিজেদের মাতৃভাষায় পড়াশুনোর আগ্রহে তারা এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু তারা পঞ্চম শ্রেণিতে কোথায় পড়বে? তাই আমরা ওদের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের কাছে হাইস্কুলে অলচিকি চালুর দাবি জানাচ্ছি।” মহকুমাশাসকের হস্তক্ষেপে এ দিন বিকেল ৩টে নাগাদ বিক্ষোভ উঠে যায়। খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “আমি বিষয়টি জানতে পেরে আগামী মঙ্গলবার ওদের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছি। শিক্ষার বিষয়ে কোথাও যদি বাধা হয়, তবে আমি সেবিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করব। তবে স্কুল বন্ধ করে বিক্ষোভ করা ঠিক নয়।” অবশ্য বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার বিষয়ে সূর্যকান্ত মুর্মু বলেন, “মহকুমাশাসক বৈঠকে ডেকেছেন। তাই আমরা বিক্ষোভ স্থগিত রাখলাম।” দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

শুধু নারায়ণগড়ে নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়েই এই সমস্যা রয়েছে। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় অলচিকি শিক্ষকের অভাব এই সমস্যার একটি বড় কারণ। সারা জেলায় প্রথমে ৫৩টি প্রাথমিক স্কুলে অলচিকি চালু করা হলেও এখন মাত্র ৩৫টি স্কুলে ওই বিষয়ে পঠন-পাঠন চলছে। আবার গোটা জেলায় ১০টি হাইস্কুলকে অলচিকি পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত করা হলেও সেগুলিতেও কোনও স্থায়ী শিক্ষক নেই। প্রতিটি স্কুলে সাঁওতালি ভাষার অলচিকি হরফে পঠনপাঠন চালু করতে গেলে ন্যূনতম দু’জন করে স্থায়ী শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু সেই সংখ্যক শিক্ষক না থাকাতেই ব্যহত হচ্ছে পঠন-পাঠন। ‘আসেকা’-র জেলা সভাপতি অর্জুন হেমব্রম বলেন, “আমরা অলচিকি চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছি। যদিও ঘোষণার পরেও নেকুড়সেনী ও গোপীবল্লভপুরের মতো কয়েকটি হাইস্কুলে অলচিকি চালু হয়নি। এ নিয়ে বহুবার স্কুল শিক্ষা দফতরে জানালেও কাজ হয়নি।” তিনি বলেন, “স্কুলগুলিতে পঞ্চম শ্রেণি থেকে অলচিকি হরফে পাঠ্যক্রম চালু না হলে চতুর্থ শ্রেণি উত্তীর্ণ পড়ুয়ারা কোথায় যাবে? আমরা আন্দোলনে নামব।” জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমর শীল বলেন, “আমরা শিক্ষা দফতরে সমস্যার কথা জানিয়েছি। গোটা বিষয়টি প্রক্রিয়া স্তরে রয়েছে। আশা করছি, এই শিক্ষা বর্ষেই ওই সমস্ত হাইস্কুলগুলিতে অলচিকি চালু করা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ol chiki kharagpur agitation student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE