Advertisement
০৪ মে ২০২৪

মেয়ে মৃত, বলছেন অভিযুক্ত কিশোরীর বাবা

দুই পরিবারের কাছেই নেই তাদের একমাত্র মেয়ে! এক পরিবারের মেয়ে খুন হয়েছে। অন্য পরিবারের মেয়ে সেই খুনেই অভিযুক্ত হয়ে মেদিনীপুর শহরের একটি হোমে রয়েছে। সেই পরিবারও নিজেদের মেয়েকে ‘মৃত’ বলেই মানছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানার কোটবাড় গ্রামে একটি ষোলো বছরের মেয়ের খুন হওয়া এবং সেই ঘটনায় তারই সহপাঠিনীর ধরা পড়ার পরে এমনই ছবি দু’টি পরিবারে।

মেদিনীপুর আদালতে শেখ রফিজুল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

মেদিনীপুর আদালতে শেখ রফিজুল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

সুব্রত গুহ
পটাশপুর শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২২
Share: Save:

দুই পরিবারের কাছেই নেই তাদের একমাত্র মেয়ে!

এক পরিবারের মেয়ে খুন হয়েছে। অন্য পরিবারের মেয়ে সেই খুনেই অভিযুক্ত হয়ে মেদিনীপুর শহরের একটি হোমে রয়েছে। সেই পরিবারও নিজেদের মেয়েকে ‘মৃত’ বলেই মানছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানার কোটবাড় গ্রামে একটি ষোলো বছরের মেয়ের খুন হওয়া এবং সেই ঘটনায় তারই সহপাঠিনীর ধরা পড়ার পরে এমনই ছবি দু’টি পরিবারে।

রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরে বেলদার বড়মাতকাতপুরে একটি নয়ানজুলি থেকে নিহত মেয়েটির দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ দাবি করে, মেয়েটিকে খুনের পরিকল্পনা করেছে তারই সহপাঠিনী। সে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। নিহত মেয়েটির দাদার সঙ্গে অভিযুক্ত মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ভেঙে যায়। পুলিশের দাবি, সেই আক্রোশেই বর্তমান প্রেমিকের সঙ্গে সহপাঠিনীকে খুনের পরিকল্পনা করে সে। খুন করার আগে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছিল সে, পুলিশের জেরার মুখে এ কথাও কবুল করেছে অভিযুক্ত কিশোরীর প্রেমিক শেখ রফিজুল।

মঙ্গলবার নিহত মেয়েটির বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ঘরে পড়ে রয়েছে তার ব্যবহৃত স্কুলের ব্যাগ, পড়ার বই। মেয়ের মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন মেয়েটির মা। পেশায় সরকারি ঠিকাদার মেয়েটির বাবা বললেন, “আমার মেয়েটার তো কোনও দোষ ছিল না।” অভিযুক্ত কিশোরীর বাড়ি এই বাড়ির কয়েকটি বাড়ি পরেই। বাড়ির একমাত্র মেয়ে প্রেমিকের সঙ্গে পরিকল্পনা করে বান্ধবীকে খুন করিয়েছে এ কথাটা বিশ্বাসই করতে পারছেন না বাড়ির লোকেরা। মেয়েটির বাবা কৃষিজীবী। তাঁর কথায়, “আমাদের দুই পরিবারের মধে আর্থিক বৈষম্য ছিল ঠিকই। কিন্তু, সম্পর্ক খুব ভাল। যাতায়াতও ছিল। কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল!’’ তিনি জানান, স্থানীয় স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী তাঁর মেয়ে ছোট থেকেই শান্ত। সারা দিন পড়া নিয়েই থাকত।

একটু থেমেই বললেন, “যে দিন জেনেছি এই ঘটনায় আমার মেয়ে অভিযুক্ত, সেদিন থেকেই আমার মেয়ে আমাদের কাছে মৃত! মেয়েকে আইনি সাহায্য তো দূর, কোনও সম্পর্ক রাখার কথাই ভাবছি না।”

পুলিশের দাবি, জেরার মুখে অভিযুক্ত কিশোরী জানায়, সহপাঠিনীর দাদার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়েছিল। এর পর ওই যুবক সম্পর্ক ভেঙে দেয়। সেই আক্রোশেই বান্ধবীর উপরে বদলা নেওয়ার পরিকল্পনা করে সে। মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিল তার বর্তমান প্রেমিক বছর কুড়ির রফিজুলকে। সেই মতো বান্ধবীকে রফিজুলের সঙ্গে গাড়িতে তুলে দিয়েছিল অভিযুক্ত তরুণী। বলেছিল ‘শিক্ষা দিতে’। পুলিশের দাবি, জেরায় রফিজুল জানিয়েছে, ধর্ষণের পর ওই কিশোরীকে সে ছেড়ে দিতে চাইলেও তার প্রেমিকাই তাকে খুনের পরামর্শ দেয়। তবে নিহত কিশোরীর পরিবারের তরফে পরিবারের ছেলের সঙ্গে এই সম্পর্কের কথা স্বীকার করা হয়নি।

অভিযুক্ত কিশোরী, রফিজুল এবং তার দুই শাগরেদ গ্রেফতার হয়েছে। রফিজুলকে মঙ্গলবার মেদিনীপুর জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। খুনের সঙ্গে ধৃতের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের ধারা যুক্ত করার আবেদনও জানিয়েছে বেলদা থানার পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

potashpur murder case rafizul subrata guha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE