Advertisement
E-Paper

মনোনয়নের প্রথম দিনেই বিক্ষিপ্ত অশান্তি পূর্বে

ছাত্রভোটের মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমা শুরুর প্রথম দিন, শুক্রবার দুই মেদিনীপুরের বেশ কিছু কলেজে বিক্ষিপ্ত ছাত্র সংঘর্ষে আহত হলেন এসএফআই, এবিভিপি-সহ বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির বেশ কিছু পড়ুয়া। তাদের অভিযোগ, পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ, নন্দকুমার, মহিষাদল এবং কাঁথির দেশপ্রাণ কলেজে মারমুখী টিএমসিপি কর্মীদের আক্রমণে তাঁরা প্রথম দিনে মনোনয়ন দিতে পারেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২৫
এগরা কলেজ গেটে পুলিশের পাহারা (বাঁ দিকে)। পাঁশকুড়া কলেজে তৃণমূল ও ডিএসও-র হাতাহাতি(ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

এগরা কলেজ গেটে পুলিশের পাহারা (বাঁ দিকে)। পাঁশকুড়া কলেজে তৃণমূল ও ডিএসও-র হাতাহাতি(ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

ছাত্রভোটের মনোনয়ন পত্র তোলা ও জমা শুরুর প্রথম দিন, শুক্রবার দুই মেদিনীপুরের বেশ কিছু কলেজে বিক্ষিপ্ত ছাত্র সংঘর্ষে আহত হলেন এসএফআই, এবিভিপি-সহ বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির বেশ কিছু পড়ুয়া। তাদের অভিযোগ, পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ, নন্দকুমার, মহিষাদল এবং কাঁথির দেশপ্রাণ কলেজে মারমুখী টিএমসিপি কর্মীদের আক্রমণে তাঁরা প্রথম দিনে মনোনয়ন দিতে পারেনি।

মনোনয়ন জমা নিয়ে গণ্ডগোলের আঁচ করে আগে থেকেই ডিএসও-সহ বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি পুলিশ-প্রশাসনের কাছে পুলিশি নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছিল। অভিযোগ, তা সত্বেও এ দিনের সংঘর্ষের অধিকাংশ ঘটনা পুলিশের উপস্থিতিতে হলেও কার্যত নীরব দর্শক ছিল তারা।

পাঁশকুড়া কলেজে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে টিএমসিপি-র আক্রমণে দুই ছাত্রী-সহ আট ডিএসও কর্মী আহত হন বলে অভিযোগ। তাঁরা পাঁশকুড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে আক্রমণের প্রতিবাদে পাঁশকুড়া-ঘাটাল রাজ্য সড়ক অবরোধ করে ডিএসও সমর্থকরা। প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধ চলে। পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে।

সকাল এগারোটা নাগাদ ডিএসও-র হয়ে মনোনয়ন জমা দিতে যান জনা চল্লিশেক পড়ুয়া। কলেজ ইউনিট সম্পাদক সৃঞ্জন মান্নার অভিযোগ, মনোনয়ন জমা দিতে গেলে টিএমসিপি-র কর্মীরা দল বেঁধে লাঠি-সোটা নিয়ে হামলা চালায়। উপস্থিত পুলিশ কর্মীদের তা জানানো হলেও হেলদোল দেখায়নি বলে সৃঞ্জনের অভিযোগ। ইউনিট সম্পাদকের কথায়, “দ্বিতীয় বার সকলে মিলে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার চেষ্টা করলে ফের মারধর করে হঠিয়ে দেওয়া হয়।”

ডিএসও-র জেলা সম্পাদক অনুপ মাইতির অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অনুপের নালিশ। তিনি বলেন, “পুলিশের সামনেই টিএমসিপি-র সমর্থকেরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে, লাঠি-সোটা নিয়ে দাপিয়ে বেড়াল, সংগঠনের কর্মীদের আক্রমণ করলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

মনোনয়নে নিয়ে গোলমালের আশঙ্কায় পাঁশকুড়া-সহ জেলার অনেক কলেজ চত্বরের একশো মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ছিল পুলিশও। কিন্তু, অশান্তি ঠেকানো গেল না কেন? পূর্বের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন-এর জবাব, “মনোনয়ন পর্বে গোলমালের বিষয়ে কোনও ছাত্র সংগঠনের তরফ থেকে অভিযোগ আসেনি।” পুলিশের সামনেই তো গোলমাল হয়েছে? সদুত্তর এড়িয়ে তিনি বলেন, “যে কলেজেই বাধা দেওয়ার অভিযোগ এসেছে, সেখানেই পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। বড় গোলমাল কিছুই হয়নি।”

মনোনয়ন তোলাকে কেন্দ্র করে মহিষাদল রাজ কলেজে এবিভিপি-র তিন কর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। টিএমসিপি-র কর্মীরা এবিভিপি-র ভোটার তালিকা কেড়ে নেয় বলেও অভিযোগ। কলেজের সামনে পুলিশের সঙ্গে এবিভিপি কর্মীদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এবিভিপি-র রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ বক্সীর অভিযোগ, “টিএমসিপি-র বহিরাগত লোকজনই এমনটা করেছে। ঘটনাটি অধ্যক্ষ এবং পুলিশকে জানানো হয়েছে।” মহিষাদল গার্লস কলেজেও মনোনয়নে বাধার অভিযোগ তুলেছে এবিভিপি। অধ্যক্ষ উৎপল উত্থাসনীর দাবি, মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়া শান্তিপূর্ণ ভাবেই হয়েছে।

মহিষাদল রাজ কলেজের অধ্যক্ষ অসীমকুমার বেরা অশান্তি প্রসঙ্গে বলেন, “মারধরের অভিযোগ আসেনি। তবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। নতুন ভোটার তালিকা দেওয়াও হয়েছে।” রাজ কলেজে এসএফআই-এর দুই কর্মীকে টিএমসিপি কর্মীরা মনোনয়ন তুলতে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ। সংগঠনের জেলা সম্পাদক পরিতোষ পট্টনায়কের অভিযোগ, “দেশপ্রাণ কলেজে দলীয় সমর্থকের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে টিএমসিপি-র ছেলেরা। হলদিয়া গভর্মেন্ট কলেজেও বাধা দেওয়া হয়েছে। কোলাঘাটের মডেল পলিটেকনিক কলেজে দু’জনকে মারধর করেছে টিএমসিপি-র ছেলেরা।” যদিও টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি দীপক দাস বলেন, “এবিভিপি এবং এসএফআই-এর সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। শান্তিপূর্ণ ভাবে মনোনয়ন তুলেছে, জমাও দিয়েছে।”

মনোনয়ন জমা নিয়ে টিএমসিপি-র দু’গোষ্ঠীর মারামারিতে উত্তেজনা ছড়ায় রামনগর কলেজেও। অধ্যক্ষের ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চলে। পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ অবশ্য লাঠিচার্জের অভিযোগ মানেনি। টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সম্পাদক সুরজিৎ পাত্রের অভিযোগ, প্রাক্তন সম্পাদক মনোজিৎ মান্নার নেতৃত্বে জনা দশেক বহিরাগত পুলিশের উপস্থিতিতেই কলেজে ঢুকে তাঁদের আক্রমণ করে। তারাই অধ্যক্ষের ঘরে ভাঙচুর চালায় বলে সুরজিতের দাবি। মনোজিতের পাল্টা দাবি, ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ছেলেরাই বহিরাগতদের কলেজে এনে রেখেছিল। তারাই মারধর করেছে। অধ্যক্ষ অনন্ত মোহন মিশ্র মানছেন, “একটি ছাত্র সংগঠনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে কম্পিউটার, আসবাব ভাঙচুর করা হয়েছে।” কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য রাত অবধি অভিযোগ দায়ের করেনি।

তৃণমূলের কোন্দলের জেরেও আশান্তি হয়েছে। কেমন? তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, পাঁশকুড়ার তৃণমূল নেতা জাইদুল খানের অনুগামী টিএমসিপি-র প্রায় ৫০ জন কর্মী-সমর্থক এ দিন কলেজ চত্বরে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। অভিযোগ, ডিএসও সমর্থকদের উপর আক্রমণের পরে দুপুর দু’টো নাগাদ পাঁশকুড়ার আরেক তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমানের অনুগামী টিএমসিপি-র কিছু সমর্থক মনোনয়ন জমা দিতে কলেজ চত্বরে ঢুকলে তাঁদেরও জোর করে হটিয়ে দেয় জাইদুল অনুগামীরা। আনিসুরের ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা সমীরুদ্দিনের অভিযোগ, যাতে অন্য কেউ মনোনয়ন জমা দিতে না পারে, সে জন্য কলেজের ভিতরে দলেরই একাংশ নেতা কিছু লোক জড়ো করে রেখেছিলেন। তাঁর দাবি, “পুলিশের সামনেই এই ঘটনা ঘটেছে।”

এ দিন পাঁশকুড়া কলেজে জাইদুল খানের অনুগামী টিএমসিপি-র সমর্থক প্রার্থীরা ছাড়া অন্য কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। জাইদুল খান অবশ্য কোনও বাধার অভিযোগ মানেননি। নন্দকুমার কলেজেও তৃণমূলের দ্বন্দ্বের জেরে উত্তেজনা ছড়ায়। কুড়ি মিনিট দিঘা-মেচেদা সড়ক অবরুদ্ধ থাকে।

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে সরগরম জেলার ছাত্র রাজনীতি। পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা থাকায় মনোনয়ন পর্বের প্রথম দিনে কোনও রকমে উতরে গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। পূর্বে অবশ্য প্রশ্নাতীত নয় পুলিশের ভূমিকা। আজ শনিবারের পরীক্ষায় ফল কী হয় দেখার সেটাই!

medinipur chatra sansad tmcp dso college vote nomination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy