মেদিনীপুরে দেবকে পাশে নিয়ে জনতার সামনে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
‘জো হামসে টাকড়ায়েগা ওহ্ চুড় চুড় হো জায়েগা’ মিশ্র ভাষাভাষির শহর ‘মিনি ইন্ডিয়া’ খড়্গপুরের এসে এমনই বার্তা দিয়ে গেলেন মূখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেল শহরে বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষের কাছে সহজে পৌছাতে এ দিন তাঁর মাধ্যম ছিল হিন্দি ভাষা। শহরের অদূরে সালুয়ার মানুষদের কাছে টানতে তিনি সঙ্গী করে এনেছিলেন ফুটবল তারকা পাহাড়ের প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া। জেলায় দলের তিন সাংসদ পদপ্রার্থী ছাড়াও এ দিন হাজির ছিলেন পরিচালক রাজ চক্রবর্তী ও অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে খড়্গপুর কলেজের ময়দানে নির্বাচনী সভায় উপস্থিত ছিলেন। রেলের বিকাশের সঙ্গেই এই খড়্গপুর শহরে নানা ভাষার মানুষের বসবাস শুরু হয়েছে। বিভিন্ন প্রদেশের অধিবাসীদের বাসস্থান এই শহরে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই প্রভাব রয়েছে। এ দিন তৃণমূলের ডাকে এই সভাতেও হাজির ছিলেন শহরের বিভিন্ন ভাষাভাষির মানুষ। তবে মঞ্চে যেখানে উপস্থিত দেব-সহ একঝাঁক তারকা তখন কলেজ পড়ুয়া থেকে গৃহবধূদেরই উন্মাদনা বেশি। তাঁদের মধ্যেই একটা বড় অংশের মানুষ ছিলেন শহরের অদূরে সালুয়ার ইস্টার্ন ফ্রন্টেয়ার রাইফেলের(ইএফআর) পরিবারের লোকেরা। তাই জেলায় তিনটি সভার মধ্যে একমাত্র খড়্গপুরেই সেই নেপালি ভাষাভাষির মানুষদের ভোট টানতে এ দিন হাজির ছিলেন ফুটবল তারকা পাহাড়ের প্রার্থী ভাইচুং।
এ দিন দুপুরেই খড়্গপুরে এসে পৌঁছান ভাইচুং। তখন মঞ্চের সরাসরি সামনের দিকে বসে ছিলেন সালুয়ার নেপালি মহিলারা। তাঁদের কারো হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘গোর্খাল্যাণ্ড ভাগ নয়, চাই উন্নতি, ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া নয়, চাই শুধু শান্তি’। ওই উদ্দীপনা দেখে একসময় ভাইচুং মঞ্চ ছেড়ে এগিয়ে গেলেন সালুয়াবাসীর দিকে। কথা বললেন তাঁদের মাতৃভাষা নেপালিতেই। তৃণমূলের সমর্থনে সন্ধ্যা রায়কে ভোট দেওয়ার আবেদন জানালেন। পরে মঞ্চে কিছুটা বাংলায় কিছুটা হিন্দি আর নিজের মাতৃভাষায় ভাইচুং বললেন, “আমি ২০ বছর খেলছিলাম। আড়াই বছরে তৃণমূল যে কাজ করেছে তা ২০ বছরে সিপিএম করতে পারেনি।” বাংলা-হিন্দিতে সন্ধ্যা রায়ের জন্য দেব ভোট প্রার্থনা করেন।
খড়্গপুর কলেজ ময়দানে জেলার তিন প্রার্থী, ভাইচুং ভুটিয়া,
রুদ্রনীল ঘোষ-সহ এক ঝাঁক তারকার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
শেষ মুহূর্তে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাইক ধরতেই খড়্গপুরের আকাশে সূর্যকে কিছুটা ঢেকে স্বস্তি আনতে হাজির হয়েছে মেঘ। তাই হেলিকপ্টারে ফেরায় বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কার সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক বক্তব্য সেরেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর ৯মিনিটের বক্তব্যের অধিকাংশ অংশ জুড়েই হিন্দিতেই তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার বার্তা জানিয়েছেন তিনি। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি যে খড়্গপুর রেলের সঙ্গে আইআইটির চুক্তি করে উন্নয়নে সচেষ্ট হয়েছেন তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন। শহরের কংগ্রেসের প্রভাব ভাল। তাই কংগ্রেসকে বিঁধে বাংলার মূখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, “আমাদের সব টাকা কেন্দ্র কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। সরকার আমরা পেয়েছি, কিন্তু সব টাকা ওঁরা নিয়ে চলে যাচ্ছে।”
২০১৩ সালের ৫ অগস্ট অনাস্থা ভোটে তৃণমূলকে হারিয়ে পুরসভার ক্ষমতা দখল করেছে কংগ্রেস। গ্রীষ্মে খড়্গপুর শহরের জলসঙ্কট দেখা দেয় ফি-বছরই। তাই পুরসভায় তৃণমূলের সময়ে পরিকল্পিত জলপ্রকল্প এখনও বাস্তবায়িত না হওয়ার কথাও তুলে ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা ৮৬ কোটি টাকা এখানকার জলপ্রকল্পের জন্য দিয়েছিলাম। এখানকার কর্পোরেশন করতে পারেনি। নির্বাচন হয়ে গেলে আমরা এটা দেখে নেব।”
এই শহরে বহু গুজরাতি, রাজস্থানী লোকের বসবাস থাকায় বিজেপিরও প্রভাব রয়েছে তাই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর নাম না করে এ দিন তৃণমূল নেত্রী বলেন, “কেউ কেউ চায় বাংলায়-বাংলায়, হিন্দু-মুসলিমে ভাগাভাগি হয়ে যাক। আমি জানি আপনারা বঙ্গভঙ্গ চান না।”
এ দিন মেদিনীপুর শহরের কলেজ-কলেজিয়েট মাঠে সন্ধ্যা রায়ের সমর্থনে সভা করেন মমতা। সেখানে অভিনেত্রী প্রার্থী ছাড়াও ছিলেন দেব, রুদ্রনীল ঘোষ ও রাজ চক্রবর্তী। প্রায় ৩৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথম থেকেই অবশ্য আক্রমণের লক্ষ্য ছিল বিজেপি। তারই সঙ্গে কখনও কংগ্রেস ও সিপিএমকেও আক্রমণ করেছেন। এমনকি বর্তমানে বামফ্রন্ট কংগ্রেস ও বিজেপি-র ভোট কাটাকাটির আশায় রয়েছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সে গুড়ে বালি।” এমনকী দিল্লিতে বিজেপিও সরকার গড়তে পারবে না বলে দাবি করেন মমতা। তাঁর কথায়, “কেউ কেউ গ্যাস বেলুন ফোলাচ্ছে। শিশু জন্মানোর আগে তার বৌভাতের দিন ঠিক করে দিচ্ছে। এ সব হবে না। আমাদের কাছেও খবরাখবর আসছে। অনেকেই যোগাযোগ করছে।”
বিরোধীররা তৃণমূলের নামে কুৎসা করছে বলেও মমতার অভিযোগ। তাঁর কথায়, “যাঁদের উন্নয়ন নিয়ে কিছু বলার থাকে না, তাঁরাই কুৎসা ও অপপ্রচার করে। সহ্য করে এসেছি, করছি।” এ দিনও ঘাটালের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়াকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “ভাবছে মঙ্গলকোট-মঙ্গলঘোঁট হয়েছে। ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না।” এ দিনও দেবও রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেন। পরোক্ষে নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গাঁধীকেও বেঁধেন। কেশপুরের অশান্তি প্রসঙ্গ টেনে দেব বলেন, “কেশপুরে আগে প্রচুর অশান্তি হত। তাই মিনি কার্গিল বলা হত। সন্ধের পর কেউ বাইরে বেরোতে পারতেন না। এখন নিশ্চিন্তে ঘুরতে পারি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy