Advertisement
E-Paper

রাজনীতি মানে তো দায়িত্ব! নেতারা দেশের প্রতি কতটা অনুগত, তা নিয়ে আমার সংশয় আছে

চলতি নির্বাচনকে মাথায় রেখে শুরু হয়েছে আনন্দবাজার অনলাইনের বিশেষ বিভাগ ‘ভোটের দিব্যি’। এ বার নিজের রাজনৈতিক মতামত ভাগ করে নিলেন অভিনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায়।

সুদীপ মুখোপাধ্যায়

সুদীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ ১১:২৬
Sudip Mukherjee

গ্রাফিক-শৌভিক দেবনাথ।

রাজনীতি আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। কিন্তু বর্তমানে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, তাঁদেরকে সহজে বিশ্বাস করা যায় না। রাজনীতি মানে তো দায়িত্ব! আমাদের দেশের প্রতি তাঁরা আসলে কতটা অনুগত, তা নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে। আমরা দেশকে ভালবাসি, না কি কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে ভালবাসি? জনগণের জন্যও একই প্রশ্ন রাখব। আমরা দেশ, না কি নির্দিষ্ট কোনও নেতাকে ভালবাসি?

আমরা স্বাধীন হয়েছি ঠিকই, কিন্তু ব্যক্তিপুজোটা ছাড়তে পারিনি। চারদিকে এত দুর্নীতি। অথচ মানুষের কোনও হেলদোল নেই। তারা কোনও এক জন ব্যক্তিকে পুজো করে চলেছে। এক জন রাজনৈতিক নেতা নিজেই বলছেন, তিনি নেতাজির সমকক্ষ, আর তাঁর চ্যালাচামুণ্ডারা সেটা নিয়ে হ্যা-হ্যা করছে।

প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের দেশের মনীষীদের বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিটি জায়গায়। মনীষীদের নামে যা যা রাস্তা, দোকানপাট রয়েছে, গোটা বিশ্বে এমন আর কোথাও নেই। সভ্য দেশে পণ্য বিক্রি করার মতো নিজেদের দলকে বিক্রি করার প্রবণতাটা বন্ধ হওয়া উচিত। আমাদের দেশে ৮০ শতাংশ মানুষ ‘দিন আনা দিন খাওয়া’। তাঁদেরকে পেশির জোরে রাজনৈতিক মিছিলে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতাটাও বন্ধ হওয়া উচিত।

রাজনৈতিক নেতারা কাজ করুন। বাকিটা মানুষ বুঝে নেবে। প্রত্যেক জায়গায় প্রতিনিধিরা প্রচারে যাবেন। ভদ্র ভাবে মানুষ বুঝবে, তারা কাকে ভোট দেবেন। রাজনৈতিক নেতাদের ‘এই করেছি, সেই করেছি’ এই বিজ্ঞাপনটা বন্ধ করতে হবে। তাঁরা নিজেদের পকেটের টাকায় কিছু করছেন না। জনগণের করের টাকায় করছেন। তাঁদের বোঝা উচিত, মানুষের সেবা করাটা তাঁদের কাজ। তাঁরা মানুষকে দয়া করছেন না। কিন্তু এঁরা নিজেদের জমিদার বা সম্রাট মনে করেন।

আমি একদিন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। আমায় আটকানো হল এবং বলা হল, একটি রাজনৈতিক মিছিল যাবে। আমি তার পর যেতে পারব। কেন আমি মিছিলের জন্য দাঁড়িয়ে থাকব? এটা তো আমার অধিকারের মধ্যে পড়ে। এক জন রাজনৈতিক নেতা যত সহজে সরকারি হাসপাতালে বেড পেয়ে যান, সাধারণ মানুষ কেন সেই সেবা পান না? কেন তাঁদের পশুর মতো শুয়ে থাকতে হয় সরকারি হাসপাতালের মাটিতে? কেন পুরসভার শংসাপত্র পাওয়ার জন্য মানুষকে আগের রাত থেকে লাইনে দাঁড়াতে হয়?

কেন রাজনৈতিক নেতারা সেবা না করে শাসন করবে? শাসকদল বলে তো গণতন্ত্রে কিছু হয় না। এটা তো সংবিধান-বিরুদ্ধ। সরকার শাসন করে না। সরকার পরিষেবা দেয়। কিন্তু আমরা বলি শাসকদল। আমার কাছে রাজনৈতিক নেতাদের কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই।

প্রথমেই রাজনীতির সংজ্ঞাটা বদলে দেওয়া দরকার। রাজনীতিতে এলেই যে ক্ষমতা ও সুবিধা পাওয়া যায়, সেগুলি প্রথমেই খর্ব করে দেওয়া উচিত। জীবনে এক বার বিধায়ক হলে সারা জীবন বিনামূল্যে ট্রেনে যাতায়াত করবে, এটা বন্ধ হওয়া দরকার। এই ধরনের সুবিধাগুলি বন্ধ হলেই দেখবেন, মানুষের সেবা করার ইচ্ছে বা প্রবণতা কত কমে যায়!

প্রশাসন ভুলে যায়, আমরা স্বাধীন হয়ে গিয়েছি। তারা মনে করে, তারা ব্রিটিশ আর মানুষ তাদের ভৃত্য। কেন মানুষ পুলিশকে ভয় পাবে? কেন মানুষ পুলিশের সামনে নিরাপদ বোধ করবে না?

রাজনৈতিক নেতাদের অতিরিক্ত সুবিধা, ক্ষমতা, নিরাপত্তা এগুলি তুলে দেওয়া উচিত। রাজনীতির ময়দানে বিতর্কসভা (ডিবেটের কনসেপ্ট) নিয়ে আসতে হবে। এখন মঞ্চে উঠে যে যা পারছে, বলছে। নিজেদের ভাষণের দায়িত্ব নিতে হবে। মানুষকে ভুল দিকে চালিত করাও এক প্রকারের প্রতারণা। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে। ভুল প্রোপাগান্ডা ছড়ানো, মিথ্যে বলা বন্ধ করতে হবে। আমি আমাদের দেশের জন্য একটা সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ চাই।

আমার নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রসঙ্গে বলব, ছোটবেলা থেকে দেখেছি পরিবারের সকলে কংগ্রেস করতেন। আমি সরাসরি ছাত্র রাজনীতি না করলেও এসএফআই-এর সদস্য ছিলাম। আমি সমাজতন্ত্রের মতাদর্শে বিশ্বাস করি। কিছু মতাদর্শ আমি মেনে চলি। আমাদের ধর্মের থেকে কিছু মতাদর্শ হয়তো মানি। আবার স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণের কিছু মতাদর্শে আমি বিশ্বাসী। আমি মানুষকে সম্মান দেওয়ার মতাদর্শে বিশ্বাসী।

আমাদের এখানে ‘পুতুলপুজোর’ চল বেশি। যা কিছুতে প্রাণ নেই, সেগুলিকে বেশি সম্মানিত করা হয়। কিন্তু আমি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের সম্মান দিই। এটাই আমার রাজনৈতিক মতাদর্শ। কমিউনিস্ট পার্টি আমার কাছে একটা নস্টালজিয়া। এসএফআই করে যে হেতু আমি বড় হয়েছি। আমায় অন্য কোনও পার্টি সেই ভাবে তাদের মতাদর্শ দিয়ে প্রভাবিত করতে পারেনি।

Sudip Mukherjee Lok Sabha Election 2024 Lok Sabha Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy