Advertisement
E-Paper

শিক্ষা দিয়েই আকাশ ছুঁতে চায় বিজয়

ষোলোটা বসন্ত পেরিয়েও বিনপুরের উদ্ধবপুর গ্রামের বিজয় মাহালি-র উচ্চতা থমকে রয়েছে তিনফুট-এ। দেখলে মনে হবে এখনও শৈশব কাটে নি। বামন হওয়ার জন্য অনেকেই তাকে নিয়ে রঙ্গ-তামাসা করে। অভাবের জন্য সার্কাস দলে জোকার সাজার প্রস্তাবও দেয় কেউ কেউ। কিন্তু বিজয়ের মনের জোর আর জেদের কাছে হার মেনেছে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। মাধ্যমিকে ভাল ফল করে উপেক্ষা আর ব্যঙ্গের যোগ্য জবাব দিতে চায় এই আদিবাসী কিশোর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:২৩
ভাইয়ের হাত ধরে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে বিজয় মাহালি (বাঁ দিকে)। বিনপুরের উদ্ধবপুর গ্রামে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

ভাইয়ের হাত ধরে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে বিজয় মাহালি (বাঁ দিকে)। বিনপুরের উদ্ধবপুর গ্রামে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

ষোলোটা বসন্ত পেরিয়েও বিনপুরের উদ্ধবপুর গ্রামের বিজয় মাহালি-র উচ্চতা থমকে রয়েছে তিনফুট-এ। দেখলে মনে হবে এখনও শৈশব কাটে নি। বামন হওয়ার জন্য অনেকেই তাকে নিয়ে রঙ্গ-তামাসা করে। অভাবের জন্য সার্কাস দলে জোকার সাজার প্রস্তাবও দেয় কেউ কেউ। কিন্তু বিজয়ের মনের জোর আর জেদের কাছে হার মেনেছে তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। মাধ্যমিকে ভাল ফল করে উপেক্ষা আর ব্যঙ্গের যোগ্য জবাব দিতে চায় এই আদিবাসী কিশোর। উচ্চ শিক্ষিত হয়ে প্রশাসনিক পদে চাকরি করার স্বপ্ন দেখে সে। বিনপুরের দহিজুড়ি মহাত্মা বিদ্যাপীঠের ছাত্র বিজয় এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ঝাড়গ্রাম অশোক বিদ্যাপীঠ স্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে। বিজয়ের বসার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থা করতে হয়েছে। কম উচ্চতার জন্য হাই বেঞ্চ-এর নাগাল পায় না বিজয়। তাই নিচু বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছে সে।

দহিজুড়ি মহাত্মা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক মৃন্ময় হোতা জানালেন, পঞ্চম শ্রেণি থেকে দেখছি বিজয় একই রকম রয়েছে। স্কুলে বসার ও পরীক্ষার সুবিধার জন্য বিজয়ের জন্য স্কুলে এতদিন নিচু বেঞ্চের ব্যবস্থা ছিল। আবেদনের ভিত্তিতে ঝাড়গ্রামের পরীক্ষা কেন্দ্রেও বিজয়ের জন্য নিচু বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মৃন্ময়বাবুর কথায়, “বিজয়ের মনের বিকাশে কোনও সমস্যা নেই। পড়াশোনার ব্যাপারে স্কুল থেকে আমরা যতটা পেরেছি ওকে সাহায্য করেছি। সব ধরনের ফি মকুব করে দেওয়া হয়েছিল। ওর শিশুসুলভ চেহারারা জন্য সকলেই কৌতুহল দেখান। এতে বিজয় খুবই বিব্রত বোধ করে।”

উদ্ধবপুর গ্রামে এক ডাকে সবাই বিজয়কে চেনে। বিজয়ের বাবা নলিনীকান্ত মাহালি-র পেশা চাষবাস। বিঘে পাঁচেক জমিতে চাষবাস করে সংসার চলে। মাহালি পরিবারে বেশিদূর লেখাপড়া করার চল নেই। সেই দিক থেকে বিজয়ই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা দিচ্ছে। ছোট বেলা থেকেই পড়াশুনার প্রতি অসম্ভব ঝোঁক বিজয়ের। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর পরে দহিজুড়ির হাইস্কুলে ভর্তি হয় সে। বিজয়ের আরও এক ভাই ও বোন রয়েছে। তারা দু’জনেই অবশ্য সুস্থ-স্বাভাবিক।

কেন বিজয়ের উচ্চতা বাড়ে নি। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক প্রসূন ঘোষ বলেন, “হাড়ের জন্মগত ত্রুটির (স্কেলিট্যাল ডিসপ্লেসিয়া, রাইজোমেলিক টাইপ) কারণে শরীরের সমস্ত হাড়ের সমানুপাতিক বৃদ্ধি না হলে এমন বামনত্ব দেখা যায়।”

নলিনীকান্তবাবু বলেন, “বিজয় যে বামন তা আমরা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারি নি। উচ্চতা না বাড়ায় চিকিৎসকে দেখাই। তখনই বিষয়টি ধরা পড়ে।” বিজয়ের ছোট ভাই বছর চোদ্দর সঞ্জুর উচ্চতা পাঁচ ফুটের বেশি। সঞ্জু বলে, “দাদা উচ্চতায় খাটো হলেও ওর বুদ্ধি যথেষ্ট। ভাল ক্যাসিও বাজাতে পারে।”সোমবার ছোট ভাইয়ের সাইকেলের পিছনে চেপে পরীক্ষা কেন্দ্রে আসে বিজয়। ছোট্ট বিজয়কে দেখে পরীক্ষাকেন্দ্রের সকলেই অবাক চোখে দেখতে থাকেন। বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে ফেরার সময় বিজয় বলে, “আমাকে দেখে অনেকেই ঠাট্টা করে। আমি পড়াশুনো করে শিক্ষার উচ্চতায় বড় হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাই।”

madhyamik exam 2015 binpur uddhabpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy