Advertisement
E-Paper

শহরের পথে টোটোর ভবিষ্যৎ অন্ধকারে

কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া নিয়মের ফাঁসে আঁধারে মেদিনীপুর শহরে টোটো চালুর ভবিষ্যৎ। সম্প্রতি শহরে টোটো চালু করতে পুরসভা তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার আইন সংশোধন করে টোটো চালুর দায়িত্ব পরিবহণ দফতরের হাতে দেওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়। পরিবহণ দফতরের কাছেও কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকা এখনও এসে না পৌঁছনোয় তৈরি হয়েছে জটিলতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৩৬

কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া নিয়মের ফাঁসে আঁধারে মেদিনীপুর শহরে টোটো চালুর ভবিষ্যৎ।

সম্প্রতি শহরে টোটো চালু করতে পুরসভা তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার আইন সংশোধন করে টোটো চালুর দায়িত্ব পরিবহণ দফতরের হাতে দেওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়। পরিবহণ দফতরের কাছেও কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকা এখনও এসে না পৌঁছনোয় তৈরি হয়েছে জটিলতা। কবে টোটো চালু হবে, কোন কোন রুটে টোটো চলবে, পুরসভা ও পরিবহণ দফতর-কারও কাছে এ সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

কেন এই পরিস্থিতি? মাস খানেক আগে রাজ্যের পুর-দফতর থেকে মেদিনীপুর পুরসভায় আসা এক চিঠিতে জানানো হয়েছিল, টোটো চালুর ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন অর্থাৎ পুরসভাকেই পদক্ষেপ করতে হবে। পরবর্তী সময় এ নিয়ে পুরবোর্ডের বৈঠকে আলোচনাও হয়। গত মাসে পুরবোর্ডের বৈঠকে টোটো চালুর জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ছিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল কাউন্সিলর নির্মাল্য চক্রবর্তী ও নির্দল কাউন্সিলর অসিত মহাপাত্র। ওই কমিটি কাজও শুরু করে। পরে অবশ্য পুর-কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, আইন সংশোধন করে টোটোর দায়িত্ব রাজ্যের পরিবহণ দফতরের হাতে তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকেই ওই কমিটির কাজ থমকে! জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে হাওড়ার কিছু বাস-মালিক কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। পরবর্তী সময় হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থা টোটোর রেজিস্ট্রেশন দেবে। অর্থাৎ, পুরসভা ও পঞ্চায়েতের হাতেই দায়িত্বভার তুলে দেয় হাইকোর্ট। পুর- দফতর থেকে পুরসভায় যে চিঠি এসেছিল, সেখানে হাইকোর্টের এই নির্দেশের প্রতিলিপিও ছিল। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই নয়া নির্দেশের প্রতিলিপি এখনও জেলায় এসে পৌঁছয়নি। ফলে তৈরি হয়েছে সমস্যা।

টোটো চালুর জন্য গঠিত কমিটি যে আর কাজ করছে না, তা মানছেন পুর- কর্তৃপক্ষও। মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসুর কথায়, “আমরা জানতে পেরেছি, টোটোর দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার পরিবহণ দফতরের হাতেই তুলে দিয়েছে। তাই এ ব্যাপারে যা পদক্ষেপ করার পরিবহণ দফতরই করবে। পুরসভার তো কিছু করণীয় থাকছে না।” পরিবহণ দফতর এবং মহকুমা প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, এ নিয়ে লিখিত কোনও নির্দেশ এখনও জেলায় এসে পৌঁছয়নি। জেলার ভারপ্রাপ্ত পরিবহণ আধিকারিক সত্যব্রত হালদার বলেন, “টোটোর ব্যাপারে কোনও নির্দেশ আসেনি। নির্দেশিকা এলে তা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।” একই মত মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তর।

আড়ে-বহরে বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের সদর শহর। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যাও। শহরে সাইকেল রিকশার দাপটও রয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় রিকশা ঢুকে পড়ায় যানজট বাড়ে। একাংশ রিকশা চালক অনেক সময় বাড়তি ভাড়া হাঁকেন। ফলে, যাত্রীদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। অন্য দিকে, টোটো পরিবেশবান্ধব। দূষণ-বিরোধীও। ফলে টোটো চালুর জন্য উদ্যোগী হয় পুরসভা। ঠিক ছিল, সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে তিন সদস্যের কমিটি পুরসভায় রিপোর্ট জমা দেবে। রিপোর্ট খতিয়ে দেখে টোটো চালুর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন পুর- কর্তৃপক্ষ। কমিটির অন্যতম সদস্য নির্মাল্য চক্রবর্তী বলেন, “আমরা জেনেছি, টোটোর দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার পরিবহণ দফতরের হাতেই তুলে দিয়েছে। তাই আর কাজ এগোনো হয়নি। আশা করি, কোন কোন রুটে টোটো চলবে তা পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করেই পরিবহণ দফতর ঠিক করবে।” কমিটির অন্যতম সদস্য শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “মূলত প্রান্তিক পথে অর্থাৎ, শহরের মূল রাস্তার সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তায় টোটো চলার কথা। শহরে যেমন নতুনবাজার থেকে বল্লভপুর- মানিকপুর, জগন্নাথমন্দির থেকে বড়বাজার- মিরবাজার প্রভৃতি রুটে টোটো চলতে পারে। আশা করি, রুট ঠিক করার আগে পরিবহণ দফতর পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করবে।”

পরিবহণ দফতরের একাংশ কর্তা অবশ্য মনে করেন, পুরসভা যে কমিটি গঠন করেছে, সেই কমিটির কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত। সম্ভাব্য রুটের একটি তালিকা তৈরি করে রাখা উচিত। কারণ, দফতরের কাছে টোটোর ব্যাপারে কোনও নির্দেশই এখনও আসেনি। দফতরের এক কর্তার কথায়, “চালকের লাইসেন্স নেই, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নেই, ব্যাটারিতে চলে-এমন গাড়ি কে নিয়ন্ত্রণ করবে তা নিয়ে দীর্ঘ দিন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না রাজ্য সরকার। পরবর্তী সময় হাইকোর্ট এ নিয়ে এক নির্দেশ দেয়। কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া নির্দেশের কথা শুনেছি। তবে নির্দেশের প্রতিলিপি এখনও জেলায় এসে পৌঁছয়নি। তাই পুরসভার কমিটি কাজ চালিয়ে যেতেই পারে।” কেন পুরসভার কমিটি কাজ বন্ধ করে দিল? শহরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, এটা বলা ঠিক হবে না। সমস্যা সমাধানের একটা উপায় খোঁজার চেষ্টা করতেই হবে। যা হবে, পুরসভায় আলোচনার মাধ্যমে হবে। বুধবারই এ নিয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেব।”

medinipur toto rickshaw
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy