জলের অভাবে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে চারার।—নিজস্ব চিত্র।
সেচের অভাবে সব্জি চাষে সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। এবার বৃষ্টির অভাবে জলদি জাতের সব্জি চাষ হয়েছে নামমাত্র। এখন শীতকালীন মরসুমি নানা সব্জি চাষের চারা তৈরির সময়। কিন্তু পর্যাপ্ত সেচের অভাবে চারা তৈরিতেই ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। এমনই ছবি গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে। জেলার উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক রণজয় দত্ত বলেন, “এবার অনেক এলাকাতেই সেচের অভাব। এখন মরসুমি সব্জি চাষের চারা তৈরি সময় চলছে। কিন্তু চারা তৈরিতেও জল ঠিকমতো পাচ্ছেন না চাষিরা। ফলে এ বার জেলার নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা দূর, আদৌও চাষ হবে কি না-তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।”
জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রে খবর, অগস্ট মাসের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত জলদি জাতের নানা সব্জি চাষের চারা তৈরি হয়। ওই চারা তৈরির পর জমিতে রোপন করা হয়। ফলে অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের গোড়া থেকেই ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, শশা, ঝিঙে-সহ নানা ধরনের সব্জি বাজারে বিক্রি শুরু হয়ে যায়। মরসুমের গোড়াতেই টাটকা সব্জি কেনার জন্যেও ফি বছর ক্রেতারাও সাত সকালেই ভিড় করেন বাজারে। ওই সব্জি শেষ হতে না হতেই বাজারে চলে আসে মরসুমি সব্জি। কিন্তু চলতি বছরের ছবিটা পুরো উল্টো। জলদি সব্জি চাষে যেমন সমস্যায় পড়েছিলেন চাষিরা, মরসুমি সব্জি চাষেও সেই একই সমস্যা। অথচ, সরকারি নিয়মানুযায়ী অক্টোবরের গোড়া থেকে চারা তৈরি হয়ে তা রোপণ হওয়ার কথা। কিন্তু এবার জলের অভাবে চারা রোপণ দূর, এখনও চারাতলাই শুরু করতে পারেন নি চাষিরা। কেন এমন অবস্থা?
উদ্যান পালন দফতর সূত্রে খবর, সব্জি চাষ সেচ নির্ভর। বর্ষাকালে বৃষ্টির জল জমানো হয় জলাশয়, পুকুরে। সেখান থেকে পাম্পের মাধ্যমে জল তুলে সেচের কাজে ব্যবহার করেন চাষিরা। এ বছর বৃষ্টির অভাবে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে জেলায় খারিফ শস্য চাষ হয়েছে। এমনকী, যেখানে জলাশয়ের ব্যবস্থা নেই সেখানে অগভীর নলকূপ থেকেও জল তুলে চাষে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন সেচের জলের অভাবের কারণে ফের সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। কারণ, সাধারণত সেচ প্লাবন এলাকাতেই সব্জি চাষ হয়। সেচের জলের চলে সব্জির চারা তৈরি থেকে রোপণের কাজ। এছাড়াও চারা রোপণের পরপর সব্জিতে দশ দিন অন্তর সেচ দিতে হয়। সেচের জল না পাওয়ায় শীতকালীন সব্জি চাষ নিয়ে উদ্বিগ্ন চাষিরা।
উদ্যানপালন দফতর সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুরের ডেবরা, খড়্গপুর-২, ঘাটাল, দাসপুর, গড়বেতা, গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা, চন্দ্রকোনা রোড, লালগড়-সহ দশ-বারটি ব্লকে প্রতি বছরই পর্যাপ্ত সব্জি চাষ হয়। ফি বছর ৪০-৫০ হাজার হেক্টর জমিতে নানা প্রকারের শীতকালিন সব্জি চাষ হয়। চলতি বছরে সব সব্জি প্রধান এলাকাতে একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেচের অভাবে পোকামাকড়ের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। দাসপুরের কৃষ্ণপুর, রাজনগর, সরবেড়িয়ার চাষি শ্যামল মণ্ডল, মানিক মণ্ডলের কথায়, “এ বারও চাষের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সেচের জল না মেলায় চাষে সমস্যা হচ্ছে।”
সমস্যা মেটে কবে, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy