সিপিএম নেতা জ্যাঠাকে পাশে নিয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন ঘাটালের তৃণমূল প্রার্থী দেব। সিপিএম প্রার্থী সন্তোষ রাণার বাড়ির চায়ের আমন্ত্রণ রাখতেও গিয়েছিলেন তিনি। এ বার সৌজন্যের সেই ধারা দেখা গেল দেবের প্রতিপক্ষ ঘাটালের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়ার প্রচারে। প্রচারে বেরিয়ে প্রাক্তন সিপিএম জোনাল সম্পাদকের বাড়িতে ঢুকে গেলেন মানসবাবু। তাঁকে বুকে জড়িয়েও ধরলেন।
শুক্রবার খড়্গপুর-২ ব্লকের বুড়ামালা বাজার দিয়ে প্রচার শুরু করেন কংগ্রেসের এই প্রার্থী। কখনও হুড খোলা জিপে, কখনও হেঁটে, আবার কখনও নিজেই মোটরসাইকেল চালিয়ে প্রচার সারেন তিনি। শুক্রবার সকাল থেকেই মানসবাবুর সভার জন্য বুড়ামালা বাজারে প্রস্তুত ছিলেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। মানসবাবু পৌঁছন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ। গোটা বাজার এলাকায় হেঁটে জমসংযোগ সারেন তিনি। সাধারণ মানুষের নানা অভাব-অভিযোগের কথাও শোনেন তিনি। পথে চিকিৎসার জন্য কটকে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আর্জি জানান এক ব্যক্তি। হাত তুলে তাঁকেও আশ্বাস দেন মানসবাবু।
পরে জাতীয় সড়ক পেরিয়ে এগোনোর পথে চোখে পড়ে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছেন ডেবরা হরিমতি হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত সহ-শিক্ষক তথা খড়্গপুর-২ সিপিএম জোনাল কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক নগেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম। নগেন্দ্রবাবু জানান, এ বছরও তিনি সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করিয়েছেন। সটান বাড়িতে ঢুকে মানসবাবু তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। দুই দলের নেতরা সৌজন্য দেখে তখন হতবাক গ্রামের মানুষ। মানসবাবু ভোট দেওয়ার আর্জি জানালে মুচকি হেসে নগেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “এক সময় বসন্তপুরে হস্টেলে একসঙ্গেই থাকতাম তো। চিনি ওঁকে। চিরকাল ভাল স্বভাবের ছেলে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু মানুষ ভাল কি না সেটাই সবচেয়ে বড় কথা।”
ভোট প্রার্থনা। মানস ভুঁইয়ার প্রচারের পথে বুড়ামালায়।
পাশের গ্রাম এতবারপুরে তখন সাজ সাজ রব দলীয় সমর্থকদের মধ্যে। মানসবাবু পৌঁছাতেই শঙ্খধ্বনি দিতে শুরু করেন গ্রামের মহিলারা। অনুন্নত এই গ্রামের জলসঙ্কট, পথঘাট নিয়ে নানা অভাব-অভিযোগও জানাতে থাকেন তাঁরা। মানসবাবুও বলেন, “কেন্দ্রীয় নানা প্রকল্পে এই গ্রামে কেন কাজ হয়নি নির্বাচনের পরে আমি তদন্ত করাব। আমি জিততে পারি বা হারতে পারি। কিন্তু আপনাদের ভুলব না।” প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতাদের চোখ রাঙানিকে ভয় না পেয়ে তাঁকে ফোন করার পরামর্শও দেন তিনি। গ্রামের রাস্তা পেরোতে নিজেই মোটরসাইকেল চালিয়ে পৌঁছালেন জাতীয় সড়কের ধারের একটি রাইস মিলে। সেখানের কর্মীদের অভিযোগ শুনে এ বার পাড়ি হুড খোলা জিপে। জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়াকে নিয়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বসন্তপুরের দিকে রোড-শোর করেন মানসবাবু।
এ দিন প্রচার শেষে মানসবাবু সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাম ও তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বলেন, “আমি মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এই নির্বাচন দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে রক্ষা করার নির্বাচন। বামপন্থীরা তৃতীয় ফ্রন্টের কথা বলেছিলেন। তা বেলুনের মতো চুপসে গিয়েছে। এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী ফেডারাল ফ্রন্টের কথা বলেছিলেন, তিনি এখন নিঃসঙ্গ।” একদা সিপিএমের ‘দুর্গ’ আবার তাঁর অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দীপক অধিকারী তথা অভিনেতা দেবের পিতৃভূমি কেশপুরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বদের নিয়ে জনসভার ইচ্ছে প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, “সনিয়া গাঁধীকে ও রাহুল গাঁধীকে আমি ইতিমধ্যেই অনুরোধ পাঠিয়েছি।” কেশপুর কেন? মানসবাবুর জবাব, “মমতার সঙ্গে জোট করে কেশপুরে শান্তি ফেরাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেশপুর সেই তিমিরেই।”
সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।