Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সিপিএম কর্মী খুনে ধৃত বিধায়কের আত্মীয়

সিপিএম কর্মী প্রহ্লাদ রায়কে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগে সাত তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের দুই আত্মীয়ও রয়েছেন। এফআইআর-এ নাম থাকা শঙ্করবাবুর আর এক আত্মীয় ফেরার।

প্রহ্লাদ রায়।

প্রহ্লাদ রায়।

অভিজিত্‌ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০২:১৯
Share: Save:

সিপিএম কর্মী প্রহ্লাদ রায়কে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগে সাত তৃণমূল কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের দুই আত্মীয়ও রয়েছেন। এফআইআর-এ নাম থাকা শঙ্করবাবুর আর এক আত্মীয় ফেরার। রবিবার ধৃতদের ঘাটাল মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তিন জনকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজত এবং বাকি চার জনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

সিপিএম-কর্মীর মৃত্যুতে বিধায়কের আত্মীয়দের নাম জড়ানোয় লোকসভা ভোটের মুখে স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। বিধায়ক শঙ্করবাবু আবার পুলিশের বিরুদ্ধে তল্লাশির নামে আত্মীয়ের বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর, মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন। রবিবার ফ্যাক্স মারফত জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচন কমিশন ও মহিলা কমিশনে ঘাটাল থানার ওসি সুদীপ ঘোষাল এবং ডিএসপি (ক্রাইম) দেবজ্যোতি চক্রবর্তীর নামে অভিযোগ জানিয়েছেন ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের কনভেনার তথা পরিষদীয় সচিব শঙ্করবাবু। তাঁর অভিযোগ, “শনিবার রাতে শ্বশুরবাড়ির দরজা ভেঙে বাড়িতে ঢোকে ঘাটাল থানার পুলিশ। বাড়ি ভাঙচুর, মারধর ছাড়াও মহিলা সদস্যদের শ্লীলতাহানি করা হয়।” পুলিশি অত্যাচারের হাত থেকে শঙ্করবাবুর শ্বশুর বৃদ্ধ প্রফুল্ল দিয়াসীও রেহাই পাননি বলে অভিযোগ। মারধরে জখম আত্মীয়া উর্মিলা দিয়াসীকে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর হাতে চোট লেগেছে।

শোকাহত পরিজনেরা।

পুলিশের বিরুদ্ধে বিধায়কের আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার শিসরাম ঝাঝোরিয়া। রবিবার তিনি শুধু বলেন, “ঘাটালে এক সিপিএম কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।”

শনিবার বিকেলে ঘাটাল শহরে সভা ছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের। চন্দ্রকোনার পুড়শুড়ি গ্রামের বাসিন্দা সিপিএমের শাখা কমিটির সদস্য রঞ্জিত রায় ছেলে প্রহ্লাদকে নিয়ে ওই জনসভায় এসেছিলেন। সভা শেষে পিক-আপ ভ্যানে ফিরছিলেন তাঁরা। রঞ্জিতবাবু বলেন, “আমরা ছাড়াও গ্রামের অনেকেই গাড়িতে ছিলেন। বরদা চৌকানে আচমকা গাড়ি লক্ষ করে ইট ছোড়ে তৃণমূলের লোকজন। প্রথম ইটটাই প্রহ্লাদের মাথায় লাগে। ও গাড়ি থেকে পড়ে যায়। তারপর ওরা প্রহ্লাদের মাথায় আঘাত করে। মারের চোটেই আমার ছেলে মারা যায়।”

পুলিশ সূত্রের খবর, রাতেই রঞ্জিতবাবু ২৮ জনের নামে খুনের লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে রাতেই বিধায়ক শঙ্করবাবুর দুই আত্মীয় বাপি দিয়াসী ও সুকুমার দিয়াসী-সহ সাত জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনায় বিধায়কের অন্য এক আত্মীয় সন্তোষ দিয়াসীও অভিযুক্ত। তিনি আবার ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। তবে তিনি পলাতক।। শঙ্করবাবুর দাবি, “আমার যে দুই আত্মীয়কে পুলিশ ধরেছে, তাঁরা সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। আর যাঁকে ফেরার বলা হচ্ছে, তিনি সক্রিয় রাজনীতি করলেও ঘটনাস্থলে ছিলেন না।” পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার সন্তোষ রাণা নির্বাচন কমিশন, পুলিশ সুপার এবং জেলাশাসকের কাছে দ্রুত বাকি দোষীদের ধরার দাবি জানান। নিহতের পরিবারের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা, এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দাবি জানান।

ঘাটালে নিহত প্রহ্লাদ রায়ের মরদেহ নিয়ে বামেদের মিছিল।

তৃণমূলের ঘাটাল ব্লকের সাধারণ সম্পাদক বিকাশ কর সিপিএম কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় দল যুক্ত নয় বলে দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “ভোটের আগে দল এবং বিধায়ককে হেয় করার জন্যই আত্মীয়দের নাম জড়ানো হয়েছে।” সিপিএম কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন ঘাটালের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া। এ দিকে, প্রহ্লাদের আকস্মিক মৃত্যুতে পুরশুড়ি গ্রামের বাড়িতে এখন শোকের ছায়া। সভা থেকে ফেরার পথে ছেলের জন্য ঘুগনি-চপ আর মেয়ের জন্য বিস্কুট নিয়ে আসবেন বলেছিলেন প্রহ্লাদ। আট বছরের বাদশা এবং বছর পাঁচেকের কোয়েল এখনও বাবার অপেক্ষায় রয়েছে। বারবার মা আর দাদুকে প্রশ্ন করছে, “কখন বাবা ফিরবে?”

রবিবার সকালে গ্রামের রায়পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল স্থানীয়েরা ভিড় করেছেন প্রহ্লাদের বাড়িতে। ছেলে আর নেই জানার পর থেকেই মা লক্ষ্মীদেবীর মুখে রা নেই। ঘন ঘন জ্ঞান হারাচ্ছেন স্ত্রী রমা। এ দিন সন্ধ্যায় তরুণ সিপিএম কর্মী প্রহ্লাদের নিথর দেহ ফেরার পর গোটা গ্রামই কান্নায় ভেঙে পড়ে।

এ দিন ঘাটাল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর প্রহ্লাদের দেহ নিয়ে ঘাটাল শহরের ময়রাপুকুর মোড় থেকে বরদা চৌকান পর্যন্ত মৌনমিছিল করে সিপিএমা। পুরোভাগে ছিলেন বামপ্রার্থী সন্তোষ রাণা। চন্দ্রকোনা এলাকা আরামবাগ লোকসভার অধীন হওয়ায় প্রহ্লাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই কেন্দ্রের বামপ্রার্থী শক্তিমোহন মালিকও।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cpm worker murder case avijit chakraborty ghatal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE