Advertisement
E-Paper

বিপণনেও মোহ বাড়ছে সেলফি-র

ভারতে বাজার দখলের লড়াইয়ে মোবাইল নির্মাতাদের অন্যতম বাজি নিজস্বী তোলার নিত্যনতুন প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির টানে নিজস্বী তোলার নেশায় মজছে ‘জেনারেশন নেক্সট’। সমীক্ষা বলছে প্রতি তিন জন ক্রেতার এক জন ‘সেলফি’ বা নিজস্বী তোলার মান বিচার করে ফোন কেনেন।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৫৪
বেপরোয়া: সেলফির নেশায় বৃহস্পতিবার রেললাইনে দুর্ঘটনার পরেও হুঁশ ফেরেনি। শুক্রবার, ব্যারাকপুরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বেপরোয়া: সেলফির নেশায় বৃহস্পতিবার রেললাইনে দুর্ঘটনার পরেও হুঁশ ফেরেনি। শুক্রবার, ব্যারাকপুরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

ভারতে বাজার দখলের লড়াইয়ে মোবাইল নির্মাতাদের অন্যতম বাজি নিজস্বী তোলার নিত্যনতুন প্রযুক্তি।

এই প্রযুক্তির টানে নিজস্বী তোলার নেশায় মজছে ‘জেনারেশন নেক্সট’। সমীক্ষা বলছে প্রতি তিন জন ক্রেতার এক জন ‘সেলফি’ বা নিজস্বী তোলার মান বিচার করে ফোন কেনেন।

আর এই নিজস্বী তোলার ক্রমশ প্রবণতা তৈরি করছে ঝুঁকি। বেড়াতে গিয়ে, আড্ডা গিয়ে সেলফি। দুর্ঘটনাস্থলেও নিজস্বী! যেন তেন প্রকারে নিজের ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দেওয়া। তার পরে অসংখ্য ‘লাইক’ ও ‘কমেন্ট’-এর বন্যা। সেলফির নেশায় নদীতে ডুবে, ট্রেনে কাটা পড়ে মারাও যাচ্ছেন অনেকেই।

নিজস্বী তোলার হিড়িকে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও মানুষের হুঁশ ফিরছে না তা বৃহস্পতিবার ফের প্রমাণ করল লিলুয়ার ঘটনা। যেখানে রেল লাইনে নিজস্বী তোলার জেরে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ গেল চার যুবকের।

প্রশ্ন উঠছে, বিপণনের তুরুপের তাস যে কখনও কখনও মৃত্যুঘণ্টা বাজাচ্ছে, তা নিয়ে কী ভাবছে মোবাইল নির্মাতারা? আদৌও কিছু ভাবছে কি? সিগারেটের প্যাকেটে লেখা থাকে – ‘টোব্যাকো কিলস’। এই ধরনের বিধিসম্মত সতর্কীকরণ মোবাইল ফোনের বাক্সে লেখা থাকবে না কেন, এ প্রশ্নও উঠছে।

সামাজিক দায়বদ্ধতার কথাও উঠছে। যেমন ২০১৩ সালে মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে বিজ্ঞাপন শুরু করতে বাধ্য হয় বিশ্বের প্রথম সারির ঠান্ডা পানীয় নির্মাতা সংস্থা। এই ধরনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও মোবাইল সংস্থারা সচেতনতা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন ক্রেতাদের একাংশ।

তবে সেলফি নেওয়ার ঝুঁকিকে বিশেষ আমল দিচ্ছে না মোবাইল নির্মাতারা। এই নিয়ে সচেতন করার কর্মসূচি নেই তাদের। ভবিষ্যতেও এ থাকবে কি না, তা নিয়েও মুখ
খোলেনি কেউ।

একমাত্র ব্যতিক্রম কলকাতার একটি সংস্থা। এই মোবাইল নির্মাতা গত দু’বছর ধরে নিজস্বী নেওয়ার বিপদ নিয়ে সচেতনতা কর্মসূচি চালাচ্ছে। মূলত পুজোর সময় ‘সেফ সেলফি’ নামে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়। সংস্থার এক কর্তার দাবি, এ বার থেকে মোবাইল ফোনের বাক্সের উপরেও এ ধরনের লেখা রাখার পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।

বিপণনের হাতিয়ার যাই হোক, তা মানুষের বিপদ ঘটালে অবশ্যই চিন্তার বিষয় হয়ে ওঠে বলে মনে করেন বিপণন বিশেষজ্ঞ রাম রায়। এ প্রসঙ্গে মতামত দিতে গিয়ে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন। গত মাসে শহরের একটি পাঁচ তারা হোটেলে নৈশভোজ সেরে সবে লাউঞ্জে পা রেখেছেন। তখনই সেলফি তুলতে মগ্ন এক ভদ্রলোকের ধাক্কায় রাম রায় পড়ে যান। তাঁর হাতের হাড় ভেঙে যায়। সেই ভাঙা হাড়ের চিকিৎসা এখনও চলছে। তিনি বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে বলা যেতেই পারে যে সেলফি তোলা ক্ষতিকারক।’’

উইকিপিডিয়ার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৫ সালে গোটা পৃথিবীতে সেলফির কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০। ভারতে ১৮। এক বছর পরেই সেই সংখ্যা যথাক্রমে ৮৮ এবং ৬২। অর্থাৎ ২০১৬ সালে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশের বেশি ঘটেছে ভারতে।

আরও পড়ুন:‘দুঃখ’ সফরে পীড়িত পতি

আর এই সেলফি নেওয়ার হুজুগকে পুঁজি করে ব্যবসা বাড়াতে ঝাঁপাচ্ছে ছোট-বড় মোবাইল নির্মাতা। এখন গান শোনা, ফিল্ম দেখা এবং অবশ্যই ছবি তোলার জন্য মোবাইলের কদর সবচেয়ে বেশি। শুধু স্মার্টফোনে নয়, এখন কম দামি ফিচার ফোনেও সেলফি তোলার সুবিধা থাকছে।

মোবাইল নির্মাতাদের দাবি, ক্রেতাদের একটি বড় অংশ ফোনের ক্যামেরার মান বিচার করে কেনার সিদ্ধান্ত নেন। কমবয়সী ক্রেতা টানতে বিজ্ঞাপনে ‘সেলফি এক্সপার্ট’ বলে দাবি করছে একটি চিনা মোবাইল সংস্থা। চলতি বছরের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে আর এক চিনা মোবাইল নির্মাতা ঘোষণা করেছে নিজস্বী তোলার উপর জোর দিয়েই মোবাইল তৈরি করবে তারা।

Selfie
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy