E-Paper

ধমনীর প্রাণঘাতী অসুখ রুখতে মডেল, বাঙালির হাত ধরে গবেষণা

নিউ টাউনের বাসিন্দা, বর্তমানে বস্টনের হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলে পোস্ট ডক্টরেট গবেষণারত, বছর পঁয়ত্রিশের অপাবৃত অয়ন দাস ওই গবেষকদের মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছেন।

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৫ ০৭:৪০
অপাবৃত অয়ন দাস।

অপাবৃত অয়ন দাস। ছবি: সংগৃহীত।

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরের কোষে বিভিন্ন রাসায়নিক যৌগ জমতে থাকে, যা কোষে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই রাসায়নিক যৌগ বা ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ কোষের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং উচ্চ রক্তচাপ ও অ্যারোটিক অ্যানিউরিজ়মের মতো অসুখের আশঙ্কা বাড়ায়। সম্প্রতি আমেরিকার গবেষকেরা এই দুই অসুখ রুখে দেওয়ার উপায় খুঁজতে গিয়ে একটি মডেল তৈরি করে ফেলেছেন। আর সেই গবেষণা সাফল্যেরমুখ দেখেছে খাস কলকাতার ছেলের হাত ধরে।

নিউ টাউনের বাসিন্দা, বর্তমানে বস্টনের হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলে পোস্ট ডক্টরেট গবেষণারত, বছর পঁয়ত্রিশের অপাবৃত অয়ন দাস ওই গবেষকদের মধ্যে সামনের সারিতে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই ‘দ্য জার্নাল ফর ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন’-এ প্রকাশিত হয়েছে অপাবৃতদের এইগবেষণাপত্রটি। ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’-এর কারণে কোষে তৈরি হওয়া এক প্রকার প্রোটিনকে তার কাজ করতে বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ এবং এয়োর্টিক অ্যানিয়োরিজ়মের (ধমনীর প্রাচীর পাতলা হয়ে গিয়ে, তা ফুলে ফেটে যাওয়া) মতোপ্রাণঘাতী অসুখকে রুখে দেওয়া যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে ওই গবেষণাপত্রে।

নয়া এই মডেল কী ভাবে রুখবে প্রাণঘাতী ওই অসুখ? আমেরিকা থেকে ফোনে অপাবৃত বলছেন, ‘‘এয়োর্টিক অ্যানিয়োরিজ়মের মতো অসুখ আগে থেকে ধরা যায় না। এতে ধমনীর প্রাচীর পাতলা হয়ে ফুলে এক সময়ে ফেটে যায়। আমেরিকায় তো বটেই, ভারতেও বহু মানুষই এইঅসুখে মারা যান। ভারতে হার্টের অসুখ রয়েছে, এমন প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষেরই ধমনীর এই সমস্যা থাকে, যা পরীক্ষা না করালে ধরাও পড়ে না। এর কোনও চিকিৎসা বা ওষুধ, কিছুই নেই। তাই মৃত্যু অবধারিত। কর্কট রোগের মতো প্রাণঘাতী এইঅ্যানিয়োরিজ়ম রোগ নিয়েই তাই কাজ শুরু করি বছর তিনেক আগে।’’ অপাবৃত জানাচ্ছেন, ধমনীর এই সমস্যাযুক্ত কোনও রোগীর উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এই রোগেরআশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এই দুই রোগের সঙ্গে সম্পর্করয়েছে কোষে থাকা ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’-এর।

গবেষণা করতে গিয়ে অপাবৃত ও তাঁর সহ-গবেষকেরা ইঁদুরের উপরে পরীক্ষা চালিয়ে খোঁজ পেয়েছেন ডিইউএসপি-৩ নামে একটি প্রোটিনের। শরীরের কোষে থাকা এই প্রোটিন ওইরাসায়নিক যৌগের মাধ্যমে চালিত হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ এবং এয়োর্টিক অ্যানিয়োরিজ়মের মতো অসুখের সূত্রপাত ঘটাতে সাহায্য করে। তাই গবেষণায় অপাবৃতেরা মনোনিবেশ করেছেন ওই প্রোটিনের উপরেই। ‘‘আমাদের গবেষণার মডেল অনুযায়ী, জিন থেরাপি অথবা ইনহিবিটর দিয়ে এই প্রোটিনকে যদিতার কাজ করা থেকে বিরত রাখা যায় অথবা কোষ থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া যায়, তবে ওই দুই রোগের আশঙ্কাও অনেকটা কমতে পারে।’’— বলছেন অপাবৃত। তবে এই রোগসারাতে ওষুধ আবিষ্কারের পথ এখনও অনেকটাই লম্বা। তাই আপাতত ওই ইনহিবিটরের উপরেইপেটেন্টের দরখাস্ত করেছেন গবেষকেরা।

বোলপুরের হাইস্কুল পড়াশোনা করে প্রাণিবিদ্যা নিয়ে বিশ্বভারতী এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরেরপড়াশোনা করেছেন অপাবৃত। এর পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ ডি করে পাড়ি জমিয়েছেন সুদূর বস্টনে। নিউ টাউনের বাড়িতে মা, বাবা ও বোনকে রেখে মার্কিন মুলুকে আপাতত ‘ডিইউএসপি-৩’-কেই মন দিয়েছেন অপাবৃত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Disease Medical treatment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy