তিন দিন হল, বর্ষা ঢুকে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গে। ‘সরকারি ভাবে’ তামাম রাজ্যই এখন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আওতায়।
তবে সে বুঝি শুধু খাতায়-কলমে।
অন্তত দক্ষিণবঙ্গের চেহারা তা-ই বলছে। উত্তরবঙ্গের তরাই-ডুয়ার্স তুমুল বৃষ্টিতে ভাসলেও দক্ষিণে তার নাম-গন্ধ নেই! বরং খাস কলকাতায় ঝকঝকে নীল আকাশ আর সাদা তুলোর মতো মেঘের বাহার দেখলে মনে হচ্ছে, শরৎ এসে গেল! প্যাচপ্যাচে গরম আর ঘামের স্রোতেও রীতিমতো ভরা ভাদ্রের আঁচ।
এমতাবস্থায় হাওয়া অফিসও আশার বাণী শোনাতে পারছে না। তাদের বক্তব্য: দক্ষিণবঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও বর্ষার সেই ‘ভারী’ বর্ষণ হচ্ছে না। আগামী ক’দিনের মধ্যে হবে, জোর গলায় তা-ও বলতে পারছেন না আবহবিদেরা। এমন অবস্থা কেন?
‘‘কারণ, ঘূর্ণিঝড়-নিম্নচাপ বাড়ন্ত।’’— ব্যাখ্যা দিচ্ছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, মৌসুমি বায়ুকে দক্ষিণবঙ্গে ধরে রাখতে হলে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় বা নিম্নচাপ প্রয়োজন। তা না-থাকায় মৌসুমি বায়ু উত্তরে চলে গিয়ে সেখানে ঝেঁপে
বৃষ্টি নামাচ্ছে।
বস্তুতই উত্তরে এখন পরিপূর্ণ বর্ষার আমেজ। রবিবার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতে বৃষ্টি হয়েছে যথাক্রমে ১২২ মিলিমিটার ও ৮৫ মিলিমিটার। আলিপুর হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানী গণেশকুমার দাসের কথায়, ‘‘আগামী দিন দুয়েক উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোয় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। কোথাও কোথাও অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।’’ যদিও দক্ষিণবঙ্গের জন্য আগামী কয়েকটা দিন বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনার বেশি সুখবর ওঁরা দিতে পারেননি। অনেকে অবশ্য এতে আশঙ্কার কিছু দেখছেন না। তাঁরা বলছেন, জোরালো বৃষ্টি না-নামলেও ১-১৫ জুন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ স্বাভাবিকের ১% বেশি। বর্ষার বেহাল দশাতেও এটা সম্ভব কী করে?
মৌসম ভবনের আবহবিদদের দাবি, এর পিছনেও রয়েছে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা। সনাতনী মরসুমি নির্ঘণ্ট অনুযায়ী, ৮ জুন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা ঢোকার কথা। কিন্তু গত ক’বছর ধরে জুন মাসে এখানে তেমন বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টির মানদণ্ডটাও নেমে গিয়েছে। তার উপরে এ বছর নিম্নচাপ-অক্ষরেখা, ঘূর্ণাবর্তের দৌলতে অসময়ে কিছু বৃষ্টি হয়েছে। যা কিনা বর্ষার আওতায় পড়ে না।
এবং বর্ষাকে চাঙ্গা করতে হলে এখনই সেই সব নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তের মাথা তোলা দরকার ছিল। অথচ এখন তাদের দেখা নেই। আবহবিদদের একাংশের পর্যবেক্ষণ— অসময়ের অতিথি হয়ে হানা দিয়ে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু সব হিসেব গুলিয়ে দিয়েছে। কেরল দিয়ে ঠিক সময়ে ভারতীয় ভূখণ্ডে বর্ষা ঢোকার জন্য বঙ্গোপসাগর ও আরবসাগরের আবহাওয়ায় যে ভারসাম্য দরকার হয়, রোয়ানু তা ছারখার করে দিয়েছে। পরিণামে এ বছর বর্ষা যে শুধু লেট করেছে তা-ই নয়, তার স্বাভাবিক ছন্দটাও
বিগড়ে গিয়েছে বলে আবহবিদদের অনেকের দাবি।
দক্ষিণবঙ্গের কপাল কি তা হলে পোড়াই থাকবে?
হাওয়া অফিসের খবর: বঙ্গোপসাগরে অন্ধ্র উপকূলের কাছে একটা ঘূর্ণাবর্ত দানা বাঁধার আভাস মিলছে। সেটি কোথায়, কী রূপে হাজির হয়, তার উপরে অনেকটা নির্ভর করছে দক্ষিণবঙ্গের বর্ষা-ভাগ্য। ‘‘ঘূর্ণাবর্তটি ওড়িশা উপকূল পর্যন্ত এলেও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের কপাল ভিজবে।’’— বলছেন আলিপুরের
এক বিজ্ঞানী।
ভরসা আপাতত এটুকুই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy