মোর্চার সুরে সুর না মিললেই হয় হামলা, নয়তো হুমকি। পাহাড়ে গত এক মাস ধরে এটাই নাকি দস্তুর। সে জন্যই মাথায় রডে়র আঘাত নিয়ে শিলিগুড়িতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন এক ৭৬ বছরের বৃদ্ধ। এ বারে সেই তালিকায় যুক্ত হলেন এক অন্তঃসত্ত্বা তরুণীও।
পাহাড়ে ঘরদোর পুড়িয়ে দেওয়াও ওই তরুণী গত এক মাস ধরে সপরিবার শিলিগুড়িতে রয়েছেন। সম্প্রতি ওই তরুণীর স্বামীকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, ২০ জুলাইয়ের মধ্যে দার্জিলিঙে না ফিরলে আর ঢুকতেই দেওয়া হবে না। ফলে, আতঙ্কে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওই তরুণী। বাধ্য হয়েই মঙ্গলবার তাঁকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আতঙ্কের কারণেই প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আগামী অগস্টে তাঁর প্রসব হতে পারে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন। পরিস্থিতি দেখে তাঁরা এখন দ্রুত অস্ত্রোপচার করে প্রসবের কথাই ভাবছেন। তরুণীর স্বামী জানিয়েছেন, তাঁরা তৃণমূল ছাড়তে রাজি না হওয়ায় তাঁদের ঘরদোর ভেঙে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন অন্তত শতাধিক পরিবার ঘরছাড়া হয়ে শিলিগুড়িতে নানা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের সকলের কাছেই বার্তা গিয়েছে, দ্রুত না ফিরলে আর এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না।
মোর্চার পক্ষ থেকে অবশ্য এ ধরনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। মোর্চার সহকারী সম্পাদক জ্যোতিকুমার রাই বলেছেন, ‘‘আমরা গোর্খাল্যান্ডের দাবি আদায়ের জন্য গণতান্ত্রিক পথে লড়ছি। কোনও জোরাজুরির ব্যাপার নেই। এ সব মিথ্যে রটনা।’’
তবে পাহাড়ের ভুক্তভোগীরা অনেকেই জানান, অতীতে জিএনএলএফের আন্দোলনের সময়েও সিপিএম সমর্থকদের পাহাড় ছাড়তে হয়েছিল। তাঁদের একটা বড় অংশ শিলিগুড়ির নানা এলাকায় কলোনি গড়ে পাকাপাকি ভাবে রয়ে গিয়েছেন। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পরে বেশির ভাগই পাহাড়ে গিয়ে জলের দরে জমি-বাড়ি বেচে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাই এ বারে শিলিগুড়িতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলির অনেকেই দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমোতে পারছেন না।
তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেবও বিষয়টি জানেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই অন্তঃসত্ত্বা তরুণীর যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য শিলিগুড়ি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা চেষ্টা করছেন। শিলিগুড়িতে আশ্রয় নেওয়া কারও সমস্যা হবে না।’’ প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এই মুহূর্তে জোর করে কাউকে পাহাড়ে ফেরানোর প্রশ্ন নেই। তবে পাহাড় ছেড়ে সমতলে থাকা কারও ঘরদোর যাতে বেহাত না হয়, সে জন্য পুলিশ-প্রশাসন তৎপর বলেও তিনি দাবি করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy