E-Paper

অরুণাচলের দুর্গম গিরি আরোহণ বর্ষীয়ান বসন্ত ও সঙ্গীদের

গত ২১ অক্টোবর চিন সীমান্তের কাছে থাকা ওই শৃঙ্গের শীর্ষে পৌঁছন কৃষ্ণনগরের একটি পর্বতারোহণ ক্লাবের দলনেতা বসন্ত, রুম্পা দাস, প্রশান্ত সিংহ, সুব্রত ঘোষ এবং পার্থসারথি লায়েক।

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:১১
গোরি চেন শৃঙ্গের শীর্ষে বসন্ত সিংহরায় ও অন্যরা।

গোরি চেন শৃঙ্গের শীর্ষে বসন্ত সিংহরায় ও অন্যরা। ছবি: সংগৃহীত।

দুর্গম অরুণাচল প্রদেশের হিমালয়ের অন্দরে আরোহীদের প্রবেশের সুযোগ ও অনুমতি মেলে না সহজে। রয়েছে শেরপা, মোটবাহক, পরিকাঠামোগত সমস্যাও। তবে সব বাধা জয় করে এ বার অরুণাচলের ছ’হাজারি গোরি চেন শৃঙ্গে (৬৪৮৮ মিটার) সফল আরোহণ করলেন বর্ষীয়ান পর্বতারোহী বসন্ত সিংহরায় ও তাঁর সঙ্গীরা। গত ২১ অক্টোবর চিন সীমান্তের কাছে থাকা ওই শৃঙ্গের শীর্ষে পৌঁছন কৃষ্ণনগরের একটি পর্বতারোহণ ক্লাবের দলনেতা বসন্ত, রুম্পা দাস, প্রশান্ত সিংহ, সুব্রত ঘোষ এবং পার্থসারথি লায়েক। সঙ্গী দার্জিলিঙের তিন শেরপা— পেম্বা ছেরিং, মিংমা তেনজিং ও মিংমা দোরজে শেরপা।

ইতিহাস বলছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে ১৯৬৬ সালে পূর্ব ভারতের তৃতীয় উচ্চতম গোরি চেন শৃঙ্গে প্রথম আরোহণ করা হয়। এর পরে ১৯৮৯ সালে ভারতীয় সেনার অসম রাইফেলস, ১৯৯৪ সালে দার্জিলিঙের হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, ১৯৯৬ সালে ভারতীয় সেনা, ১৯৯৭ ইন্দো-ব্রিটিশ সেনার যুগ্ম অভিযানে সফল আরোহণ হয় এই শৃঙ্গে। তবে এই প্রথম কোনও অসামরিক পর্বতারোহী দল এই শীর্ষে পৌঁছল বলে দাবি অভিযাত্রীদের।

রবিবার বাসে গুয়াহাটি ফেরার পথে বসন্ত বলেন, ‘‘অরুণাচলে পর্বতারোহণের অনুমতি সহজে মেলে না। গাড়োয়াল-কুমায়ুন হিমালয়, নেপাল হিমালয়ে সারা জীবনে একাধিক অভিযানে গেলেও অরুণাচলে অভিযানের ইচ্ছে ছিল বহু দিন। গত বছর এই শৃঙ্গে
অভিযান চালালেও ক্যাম্প ১-এর কিছুটা আগে থেকে আর পথ খুঁজে না পেয়ে ফিরতে হয়েছিল। তবে হাল ছাড়িনি। ৬৪ বছর বয়সেও, আরও বেশি প্রস্তুতি নিয়ে এ বার ফের অভিযানে গিয়েছিলাম।’’

অরুণাচলের শৃঙ্গের উদ্দেশ্যে পুজোর আগেই পাড়ি দেন এভারেস্ট জয়ী বসন্ত ও তাঁর সঙ্গীরা। ১৪ তারিখ বেসক্যাম্পে পৌঁছন। ২০ তারিখ মাঝরাতে সামিটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তাঁরা। পরের দিন সকাল সাড়ে ৬টা-৭টা নাগাদ পাঁচ পর্বতারোহীই পৌঁছে যান গোরি চেনের মাথায়। দলনেতা বসন্তের কথায়, ‘‘বেসক্যাম্প পৌঁছতেই অনেক ঝকমারি।
সামিটের আগে এক জায়গায় ফিক্সড রোপ খুলে যাওয়ার মতো আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। খাড়াই গিরিশিরা ধরে গিয়ে তবেই পৌঁছতে হয়েছে শীর্ষে, যেটা এতটাই বিপজ্জনক ও
অপ্রশস্ত যে, একসঙ্গে কয়েক জন মিলে দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও নেই। তাই আমাদের সকলকে একটু আগে-পরে সামিটে পৌঁছতে হয়েছে।’’

তবে এই সফল অভিযানের পরে অরুণাচলের দরজা যে পর্বতারোহীদের কাছে সহজে খুলে যাবে, এমনটা মনে করছেন না ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের (আইএমএফ) পূর্বাঞ্চলীয় শাখার চেয়ারম্যান ও পর্বতারোহী দেবরাজ দত্ত। তাঁর মতে, ‘‘সীমান্ত এলাকায় পর্বতারোহণে সরকারি অনুমতি পাওয়াটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। তাই এর পরেই দলে দলে আরোহীরা অরুণাচলে শৃঙ্গাভিযানে যেতে পারবেন, এমনটা না-ও হতে পারে। তবে বাংলার পর্বতারোহণের পক্ষে এটা খুবই ভাল খবর। এই অভিযান অনেক নবীন পর্বতারোহীকে আরও উৎসাহী করবে।’’

তবে শুধু অরুণাচলই নয়, পুজোর পরে নেপাল ও হিমাচলের পাহাড় থেকেও সফল আরোহণের খবর এসেছে বাঙালি আরোহীদের হাত ধরে। গত ২১ তারিখে নেপালের অামা দাবলাম (৬৮১২ মিটার) শৃঙ্গের সামিটে পৌঁছেছেন সল্টলেকের বাসিন্দা সূর্য চৌধুরী। চলতি মাসেই সোনারপুরের পর্বতারোহণ ক্লাবের তরফে শেরপা ও গাইড ছাড়া অভিযানে গিয়ে ১৮ তারিখ হিমাচলের শিনকুন ওয়েস্ট শৃঙ্গের চুড়োয় (৬১২৭ মিটার) পৌঁছন রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী (জুনিয়র), নৈতিক নস্কর ও তুহিন ভট্টাচার্য। ২০ তারিখ পাশের একটি অনামা শৃঙ্গে (৬০৩০ মিটার) সফল অভিযান করেন রুদ্র ও নৈতিক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mountaineer Mountaineers Arunachal Pradesh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy