Advertisement
০২ মে ২০২৪
mukul roy

Mukul Roy: জোড়াফুলে যোগ দিয়ে পদ্মের বিধায়কপদ ছাড়তে পারেন রায়সাহেব, বলছে মুকুলের ঘনিষ্ঠমহল

বিধায়কপদ ছাড়লে কি মুকুল একেবারেই সংসদীয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন? মুকুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তেমন না-ও হতে পারে।

মুকুল রায়।-ফাইল চিত্র।

মুকুল রায়।-ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২১ ১৩:২৬
Share: Save:

তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর ‘নীতিগতপ্রশ্নে’ সদ্য-জেতা বিজেপি-র বিধায়কপদ ছেড়ে দিতে পারেন মুকুল। তেমনই দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠমহলের। বস্তুত, ৭৫ জন বিজেপি বিধায়কের মধ্যে মুকুল একা দল ছাড়লে স্বভাবতই তাঁর বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রযুক্ত হবে। সে ঝুঁকি মুকুলই বা কেন নিতে যাবেন, তৃণমূলই বা কেন ওই ‘অনৈতিক’ অবস্থানের দায় নিতে যাবে? বিধায়কপদ ছাড়লে কি মুকুল একেবারেই সংসদীয় রাজনীতি থেকে দূরে থাকবেন? মুকুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তেমন না-ও হতে পারে। মুকুলকে রাজ্যসভার সাংসদ করতে পারেন মমতা। সেই সম্ভাবনাও যথেষ্ট জোরাল। পাশাপাশিই, দলীয় সংগঠনে মুকুলকে দায়িত্বশীল পদও দেওয়া হতে পারে বলে জানাচ্ছে তাঁর ঘনিষ্ঠমহল।

মুকুল আগে একবার বিধানসভা ভোটে লড়লেও এই প্রথম তিনি জিতলেন। তা-ও নিজের যথেষ্ট অনীহা সত্ত্বেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে তিনি ভোটে লড়তে রাজি হন। কিন্তু ভোটের প্রচারপর্বে এবং তার পরেও তাঁকে যথেষ্ট নিস্পৃহই দেখিয়েছে। ঘটনাচক্রে, ভোটে বিজেপি-র বিপর্যয়ের পর থেকেই মুকুল-বিজেপি দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। সেই দূরত্বই শুক্রবার পাকাপাকি ভাবে রচিত হয়ে গেল। বস্তুত, দূরত্ব নয়, মুকুল বিচ্ছিন্নই হয়ে গেলেন বিজেপি-র থেকে। ২০১৭ সালে পদ্মশিবিরে যে যাত্রা মুকুলের শুরু হয়েছিল, তার অবসান ঘটল ২০২১ সালে এসে। মাঝখানের সময়টা মুকুল যে খুব স্বচ্ছন্দ ছিলেন গেরুয়াশিবিরে, তা তাঁর অতি বড় হিতৈষীও বলতে পারবেন না। লোকসভা ভোটে সাংগঠনিক সাফল্যের পরেও তাঁকে বিজেপি-র অন্দরে সে ভাবে ‘মর্যাদা’ দেওয়া হয়নি। মুকুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, ২০২০ সালের মাঝামাঝি মুকুল বিজেপি ছাড়ার বিষয়ে মনস্থির করে ফেলেছিলেন। কিন্তু শেষমুহূর্তে তিনি মতবদল করেন। তবে তার পর থেকে তিনি মমতা বা তৃণমূল সম্পর্কে একটিও কটূবাক্য উচ্চারণ করেননি। সেই সময় থেকেই মুকুল-তৃণমূল সমীকরণ বদলাতে শুরু করে।

শুক্রবার মুকুলের সঙ্গেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর পুত্র তথা বীজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়ও। যোগ দেওয়ার কথা মুকুল-ঘনিষ্ঠ ছাত্রনেতা সুজিত শ্যামও। মুকুলের পর তাঁর ঘনিষ্ঠ সব্যসাচী দত্তও তৃণমূলে যেতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। যা খুব একটা উড়িয়েও দিচ্ছেন না তৃণমূলের লোকজন। গত কয়েকদিন ধরেই অনুগামীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছিলেন মুকুল। যেখানে তিনি বলেছিলেন, আর তিনি বিজেপি-তে থাকতে চান না। তাঁর ঘনিষ্ঠদের উদ্ধৃত করতে গেলে মুকুল বলেছিলেন, ‘‘এই দলটা (বিজেপি) আর করা যাবে না!’’ সূত্রের খবর, মুকুলকে রাজ্যসভায় পাঠাতে পারেন মমতা। ঘটনাচক্রে, রাজ্যসভায় তৃণমূলের দু’টি আসন এখন খালি রয়েছে। প্রথমটি দীনেশ ত্রিবেদীর। দ্বিতীয়টি মানস ভুঁইয়ার। ওই দুই আসনের যে কোনও একটিতে মমতা চাইলে মুকুলকে পাঠাতে পারেন।

শুক্রবার পুত্র শুভ্রাংশু -সহ ঘনিষ্ঠদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন মুকুল। সেখানেই তাঁর সিদ্ধান্ত এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। সূত্রের খবর, সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। তৃণমূল শিবিরেও খবর চলে য়ায়। তখনই ঠিক হয়, তৃণমূল ভবনে দলীয় বৈঠক করবেন মমতা। সেখানেই মুকুল-সহ অন্যদের দলের নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়বে। দুপুরের আগেই ওই বৈঠকে দলের প্রথমসারির নেতাদের থাকতে বলা হয়েছে। সেই মতোই সাংগঠনিক স্তরবিন্যাসে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরেই মুকুল বিজেপি-র থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছিলেন। দলের বৈঠকেও যাননি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন বটে। কিন্তু তা-ও খানিকটা অনীহা নিয়েই। ভোটের আগে এবং পরে তাঁকে কোনও সাংগঠনিক ভূমিকায় সে ভাবে দেখাও যায়নি। বিধায়ক হয়েছেন বটে। কিন্তু শপথ নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও ভূমিকায় তাঁকে দেখা যায়নি। বরং স্ত্রী-র অসুস্থতা নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিজেপি-র দূরত্ব বাড়ছিল। তার পাশাপাশিই পাল্লা দিয়ে দূরত্ব কমছিল তৃণমূলের সঙ্গে। মমতা ভোটের আগে থেকে মুকুল সম্পর্কে প্রকাশ্যেই সহানুভূতিশীল থেকেছেন। মুকুলও প্রচারে নেমে মমতা-বিরোধী একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। ফলে অতীতের ‘বৈরিতা’ অনেকটাই কমেছে। তার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে সামগ্রিক ভাবে বিজেপি শিবিরের তরফে মুকুলের প্রতি ‘ঔদাসীন্য’। সব মিলিয়ে পদ্মশিবিরের খুব স্বচ্ছন্দে ছিলেন না মুকুল।

মুকুল বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এলে সাম্প্রতিক কালে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা দিতে পারবে তৃণমূল। কারণ, তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে ওজনদার নেতাদের যাওয়া শুরু হয়েছিল মুকুলকে দিয়েই। তাঁর পর একে একে জোড়াফুল থেকে পদ্মফুলে নাম লিখিয়েছিলেন অর্জুন সিংহ, সব্যসাচী দত্ত, শোভন চট্টোপাধ্যায়রা। আর ভোটের আগে শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। মুকুল তৃণমূলে ফিরে এলে তাঁদের কাছেও একটা বার্তা যাবে। যেমন রাজনীতিক মহলে জোরাল সঙ্কেত দেওয়া যাবে এই মর্মে যে, তৃণমূল থেকে গিয়ে বিজেপি-র সঙ্গে ঘর করা যায় না। তবে মুকুল আপাতত একাই তৃণমূলে ফিরে এলেন নাকি তাঁর অনুগামীরাও (পুত্র শুভ্রাংশু-সহ) দ্রুত ফিরবেন, সে প্রশ্নের নিষ্পত্তি এখনও হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC mukul roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE