Advertisement
E-Paper

এত কম লিড, মুকুলের ধমক অসীমকে

নির্বাচনী প্রচারে ঘুরে ফিরেই উড়ে এসেছিল বার্তাটা— ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়া হবে। কখনও দলনেত্রী, কখনও বা তাঁর পারিষদেরা বার বারই ছুঁড়ে দিয়েছিলেন প্রচ্ছন্ন শাসানি। লক্ষ্য ছিল, বিরোধীরা। ফল প্রকাশের পরে সেই ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে’তেই বুঝে নেওয়া শুরু হয়েছে তৃণমূলে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০২:০৩
মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে পুরপ্রধান অসীম সাহা। — ফাইল চিত্র

মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে পুরপ্রধান অসীম সাহা। — ফাইল চিত্র

নির্বাচনী প্রচারে ঘুরে ফিরেই উড়ে এসেছিল বার্তাটা— ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়া হবে।

কখনও দলনেত্রী, কখনও বা তাঁর পারিষদেরা বার বারই ছুঁড়ে দিয়েছিলেন প্রচ্ছন্ন শাসানি। লক্ষ্য ছিল, বিরোধীরা। ফল প্রকাশের পরে সেই ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে’তেই বুঝে নেওয়া শুরু হয়েছে তৃণমূলে। তবে লক্ষ্য বিরোধীরা নয়, বরং স্রোতের মতো জয়ের মাঝেও দু-একটি বিচ্ছিন্ন এলাকায় দলের ভরাডুবির কারণই এখন মেপে মেপে বুঝে নিতে চাইছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

আর, সেই কাটাছেঁড়া করতে গিয়েই, বিরোধীদের দাপট নয়, বরং উঠে আসছে দলের কিছু নেতা-নেত্রীর নাম, শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন— ওই সব ‘স্বার্থান্বেষী’, ‘গোষ্ঠীবাজ’ নেতাদের জন্যই কিছু জায়গায় ভরাডুবি হয়েছে দলের।

দিন কয়েক আগেই রানাঘাটের দু’টি আসনে দলের ভরাডুবির জন্য কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল নদিয়ার জেলা সভাধিপতি বাণীকুমার রায়কে। কালীঘাটে নিজের বাড়িতে ডেকেই যাঁকে পদত্যাগের ‘নোটিস’ ধরিয়ে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জোট প্রার্থীদের সঙ্গে দহরমমহরমের কারণেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল নদিয়ার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তাপস ঘোষকেও।

এ বার সেই তালিকায় উঠে এলেন কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান অসীম সাহা। তবে তাঁকে ওই পদ থেকে অপসারণ করা হয়নি। দলীয় সূত্রে খবর, এক ঘর লোকের মাঝেই তাঁকে ‘তীব্র ভর্ৎসনা করা হয়েছে মাত্র’। দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘‘কৃষ্ণনগর শহরে দল যে ভাবে পিছিয়ে পড়েছিল তাতে ওঁকে (অসীম সাহা) ওর চেয়ে ভদ্র ভাবে কথা বলা সম্ভব ছিল না।’’

দলের অন্দরের খবর— কৃষ্ণনগর পুর এলাকায় ভোটের ফল কেন এমন হতাশাজনক, তা নিয়ে মুকুল রায়ের কাছে রীতিমত ধমক খেয়েছেন তিনি।

বুধবার সন্ধ্যায় তৃণমূল ভবনে মুকুলবাবু রীতিমত ভর্ৎসনার সুরেই অসীমবাবুর কাছে জানতে চান, কেন কৃষ্ণনগরের ফল এত খারপ হল? শুধু তাই নয় মুকুলবাবু তাঁকে এমন কিছু না করতে বলেন যাতে দলের ভবমূর্তি নষ্ট হয়। মানুষ দল থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে অসীমবাবুকে স্পষ্টই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনওক্রমে গ্রাম থেকে ‘ম্যানাজ’ করেই মান রক্ষা করা হয়েছে ওই আসনগুলিতে। এক শীর্ষ নেতার কতায়, ‘‘মুকুল সরাসরি কৃষ্ণনগরের পুর প্রধানের কাছে জানতেও চান, ‘শহরে কেন এমন খারাপ ফল হল? তুমি কি তাহলে আদৌ কোনও কাজ করতে পার নি।’’

অসীম সাহা অবশ্য এমন ভর্ৎসনার কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল ভব‌নে গিয়েছিাম। মুকুলদার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথাও হয়েছে। তবে একটা সুন্দর পরিবেশের মধ্যে। মুকুলদা আমাকে বলেছিলেন যে, পুরসভা এলাকায় ফল আরও ভালো হওয়া উচিৎ ছিল।’’

নির্বাচনের আগে থেকেই অভিযোগ উঠছিল অর্ন্তঘাতের। ভোটের ফল প্রকাশের পরে কৃষ্ণনগর পুরসভার পুর প্রধান-সহ বেশ কিছু কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ আরও প্রকট হয়। দলের ভিতর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে অসীমকে ডেকে মুকুল রায়ের এই ধমক যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। প্রসঙ্গত, ভোটের আগে কৃষ্ণনগরে প্রচারে এসেও দলনেত্রী অসীমকে সতর্ক করেন বলে দলের একাংশের দাবি।

অভিযোগ তারপরও পরিস্থিতির বিশেষ বদলায়নি। শেষ পর্যন্ত এই শহর থেকে মাত্র ১৭১ ভোটে ‘লিড’ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় দলীয় প্রার্থী অবনীমোহন জোয়ারদারকে। আর এর পিছনে অসীম ও তাঁর অনুগানমীদের আবছা হাতই দেখছেন দলের অনেকে।

নির্বাচনে কৃষ্ণনগর পুরসভার যে ক’জন কাউন্সিনর আবনীবাবুর হয়ে ভোটের ময়দানে লড়াই করেছিলেন তাদের অন্যতম ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শিশির কর্মকার। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার অনেক কাউন্সিলরই এ বারের ভোটে অন্তর্ঘাত করেছেন। তারা সরাসরি জোটের হয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু মানুষ এদের ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে অবনীবাবুকেই জিতিয়েছেন।’’ ফল প্রকাশের পরের দিন, কালীঘাটে বিজয়ী বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে দলনেত্রী ফিরাদ হাকিমকে বলেছিলেন, ‘‘কোন কোন পুরসভার পুরপ্রধানরা বে-লাইন ছিল। সেটা দেখতে হবে।’’ সেই পরিপ্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে মুকুলবাবুর এই ধমক অবনীবাবুর অনুগামীদের বাড়তি অক্সিজেন দিচ্ছে বলেই মনে করছেন দলের একাংশ।

mukul roy TMC election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy