Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গির ‘প্রমাণ’ কই, নড়ে বসতেই দেরি পুরসভার

ডেঙ্গি ছড়ানোর ‘লিখিত প্রমাণ’ না থাকলে কি পুরসভা নড়ে বসবে না, প্রশ্নটা তুলে দিল ৯৫ নম্বর ওয়ার্ড।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৯

ডেঙ্গি ছড়ানোর ‘লিখিত প্রমাণ’ না থাকলে কি পুরসভা নড়ে বসবে না, প্রশ্নটা তুলে দিল ৯৫ নম্বর ওয়ার্ড।

নভেম্বরেও যখন শহরের বিভিন্ন এলাকায় মরণ কামড় দিয়ে চলেছে ডেঙ্গি, বিভিন্ন এলাকায় হোর্ডিং লাগিয়ে যখন ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে ‘পাশে থাকা’র প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে কলকাতা পুরসভা, ঠিক তখনই পুরসভাকে ডেঙ্গির খবর দিতে গিয়ে বাসিন্দারা নাজেহাল হচ্ছেন বলে অভিযোগ।

৯৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় একের পর এক বাড়ির বাসিন্দা জ্বরে ভুগছেন। কেউ বাড়িতে, কেউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের ডেঙ্গি হয়েছে বলেই দাবি। এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আজাদগড়ে ডেঙ্গি আক্রান্ত এক শিশুর পরিবারের তরফে স্থানীয় কাউন্সিলর (যিনি বরো চেয়ারম্যানও বটে) তপন দাশগুপ্তর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়। অভিযোগ, তপনবাবু জানতে চান, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার লিখিত প্রমাণ আছে কি না। অর্থাৎ রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখলে তবেই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। পুরপ্রতিনিধির এ হেন প্রতিক্রিয়ায় হতবাক এলাকার বাসিন্দারা। তপনবাবুর বক্তব্য, তিনি নিয়ম মেনেই কাজ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুরসভার তরফে এটাই ঠিক হয়েছে। এলাকায় ডেঙ্গি ছড়ানোর খবর এলে আমরা আগে রিপোর্ট দেখে নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছি।’’

‘নিশ্চিত’ হয়ে কী করেছে পুরসভা? মঙ্গলবার খবর পাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার সকালে ওই শিশুটি যে আবাসনে থাকে, শুধুমাত্র সেই আবাসনের চারধারে স্প্রে করা হয়। বাসিন্দাদের দাবি, এলাকার আর কোথাও তা-ও হয়নি।

অর্থাৎ? তথ্য যাচাই করে তবে প্রতিরোধে নামতে গিয়ে এক প্রস্ত দেরি হচ্ছে। আবার তার পরেও নির্দিষ্ট একটি-দু’টি বাড়িতে স্প্রে করেই ক্ষান্ত হওয়ায় রো‌গের ব্যাপ্তি আটকানো যাচ্ছে না। চিকিৎসকদের মতে এই সব প্রবণতাই এ বার ডেঙ্গি পরিস্থিতিকে আরও লাগামছাড়া করে তুলেছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে গোড়া থেকেই সতর্ক হলে ডেঙ্গি এই চেহারা নিত না।

কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ কার্যত তপনবাবুকে সমর্থন করেই দাবি করেছেন, ‘‘নির্দিষ্ট ভাবে জানাটা জরুরি। আজাদগড়ের ওই শিশুটির পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শুধু তাদের বাড়িতে নয়, তাদের স্কুলেও যাবে পুরসভা। রোগের উৎসস্থলটা খুঁজে বার করার চেষ্টা হবে।’’ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও ‘নির্দিষ্ট’ তথ্যের ওপরে জোর দিয়ে বলেন, ‘‘বাম পুরপ্রতিনিধিদের তরফেও ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। আমি তাঁদেরও বলেছি, নির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ এলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। নিচ্ছিও। সেই জন্যই ডেঙ্গি আগের চেয়ে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’’

যদিও এই আশ্বাসে আতঙ্ক কাটছে না মানুষের। শহরের বিভিন্ন এলাকাতেই এ বার ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে সংক্রামক রোগের মতো করে। একই বাড়িতে, একই আবাসনে একই সঙ্গে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ দিনই ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডে রিজেন্ট প্লেস এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্ত আর একটি শিশুর বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন পুর প্রতিনিধিরা। এত দিন পুরসভার তরফে কেন হেলদোল ছিল না, প্রশ্ন তোলেন বাসিন্দারা। শিশুটি আপাতত বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-এ ভর্তি।

শহর ছেড়ে পঞ্চায়েত এলাকাতেও হানা দিয়েছে ডেঙ্গি। বৃহস্পতিবার নিউটাউনের পাথরঘাটা পঞ্চায়েত এলাকায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এক মহিলার মৃত্যু হয়। মৃতার নাম, রেণুবালা মণ্ডল (৪৫)। ওই এলাকায় এই প্রথম ডেঙ্গিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটল বলে পঞ্চায়েত সূত্রের খবর। এ দিন সকালে বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওই মহিলার মৃত্যু হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওই পঞ্চায়েত এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ যেমন হয় না, তেমনই সচেতনতার প্রসারে প্রচারও হয় না। সম্প্রতি ওই এলাকায় অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু পঞ্চায়েতের কোনও হেলদোল নেই।

অভিযোগটা এক রকম স্বীকারও করে নিয়েছেন পঞ্চায়েতের কর্তারা। তবে স্থানীয় পাথরঘাটা পঞ্চায়েতের প্রধান ইলা নস্করের দাবি, একেবারে কাজ না হওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। নিয়মিত না হলেও মাঝেমধ্যে ব্লিচিং ছড়ানো কিংবা মশার তেল স্প্রে করার কাজ চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতের তহবিল থেকেই স্বাস্থ্য পরিষেবায় খরচ করা হয়। ফলে সীমিত সাধ্যের মধ্যেই চেষ্টা চলছে।’’

Dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy