Advertisement
E-Paper

১০ প্রাণ বাঁচিয়ে পাগলা-সইদুলরা এখন হিরো

রেলিং ভেঙে সরকারি বাসটা জলে তলিয়ে যাওয়ার পরেই ওই মানুষগুলো নৌকা নিয়ে ছুটে যান জান কবুল করে। তাঁদের চেষ্টায় বেঁচে গিয়েছেন দশটি প্রাণ। আর সেই সেই দুপুর থেকেই সত্যিকারের ‘হিরো’র তকমা জুটে গিয়েছে তাঁদের।

শুভাশিস সৈয়দ

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৩
এখানেই ঘটে দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার বালিঘাট সেতু দিয়ে যাওয়ার সময়ে তা দেখছেন অন্য বাসের যাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

এখানেই ঘটে দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার বালিঘাট সেতু দিয়ে যাওয়ার সময়ে তা দেখছেন অন্য বাসের যাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

‘পাগলা’র হাত ধরে পুনর্জন্ম চার জনের। কিন্তু সোমবার সকালের আগে তা বুঝতে পারেননি বালির ঘাট পালপাড়ার বাসিন্দারা। যদিও তার একটা নাম আছে, সুকুমার হালদার। কিন্তু সমস্যা হল সুকুমারের ডাক নাম খ্যাপা। সেই সূত্রেই পাড়ার লোকজন তার গায়ে লেপ্টে দিয়েছিল নামটা, পাগলা। তবে বাস দুর্ঘটনার পরে ডুবতে থাকা মানুষগুলোকে বাঁচাতে ভাণ্ডারদহ বিলের জলে যাঁরা ঝাঁপ দিয়েছিলেন পাগলা সেই তালিকায় প্রথম দিকেই ছিলেন।

শুধু সুকুমার কেন? রবি হাজরা, সাইদুল শেখ, হরেন হালদার, সূর্য পাহাড়িয়া, নেপাল হালদার— এঁরা কেউকেটা নন। বাস দুর্ঘটনার আগে পর্যন্ত বালিরঘাট লাগোয়া দু’পাড়ের মানুষ তাঁদের সে ভাবে চিনতেনই না। কিন্তু রেলিং ভেঙে সরকারি বাসটা জলে তলিয়ে যাওয়ার পরেই ওই মানুষগুলো নৌকা নিয়ে ছুটে যান জান কবুল করে। তাঁদের চেষ্টায় বেঁচে গিয়েছেন দশটি প্রাণ। আর সেই সেই দুপুর থেকেই সত্যিকারের ‘হিরো’র তকমা জুটে গিয়েছে তাঁদের।

সোমবার অন্য আরও একটি দিনের মত ঘুম ভাঙে দৌলতাবাদের। শীতের সকালে ভাণ্ডারদহ বিল কুয়াশা মেখে তার গভীরতা নিয়ে স্থির হয়ে রয়েছে। শান্ত সেই জলে মাছের জাল ফেলে নৌকার হাল ধরে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন রবি হাজরা, হরেন হালদার, সাইদুল শেখ, নেপাল হালদারের মত বালির ঘাট হালদারপাড়ার মানুষগুলো। আচমকা বিকট শব্দ করে করিমপুর-মালদহ রুটের উত্তরবঙ্গ পরিবহণ দফতরের বাসটি গড়িয়ে পড়ে দহের জলে। বাসটি তলিয়ে যাওয়ার পরেই ভেসে ওঠে কয়েক জন বাসের যাত্রী। জলের উপর ভাসতে থাকা মানুষগুলোর আপ্রাণ আর্জি। তা দেখে জাল গুটিয়ে রেখে দ্রুত নৌকা নিয়ে সেখানে হাজির হন রবি হাজরা, সুকুমার হালদার।

সুকুমার বলেন, ‘‘আমি বাড়ির পাশেই বসে ছিলাম। খবর পেয়ে পাড়ে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখি বাসের মধ্যে মানুষগুলো ছটফট করছে। কষ্ট হচ্ছিল, অসহায় লাগছিল, কী করব বুঝতে না পেরে বাসের বন্ধ কাচের জানলায় মারলাম বাঁশের বৈঠার ঘা। ওরা বেরিয়ে আসতেই কয়েক জনকে নৌকায় তুলে নিলাম।’’ সুকুমার মনে করছেন, তেমন মহান কিছু করেননি তিনি। বলছেন, ‘‘আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে একই কাজ করত।’’

বালির ঘাট সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের বেণীদাসপুর, মহারাজপুর, হনুমন্তনগর, গৌরীপুর, পালপাড়া— অজস্র গ্রাম। তাঁরাই এককাট্টা হয়ে বিলের পাড়ে পাটকাঠি জ্বেলে আগুন পোহানোর ব্যবস্থা করেন। শেফালি পাহাড়িয়া জানান, এক জন মহিলাকে নৌকায় উদ্ধার করে পাড়ে নিয়ে আসার পরে ভিজে শাড়ি বদলে তাঁকে নিজের শাড়ি দিয়েই ঢেকে দেন তিনি। বলেন, ‘‘গামছা দিয়ে গা-মাথা মুছিয়েও দিই। কিন্তু ছটফট করে চোখের সামনে মারা গেল এক জন জানেন।’’

একই কথা বলেন, শিখা হাজরা। ‘‘বিল থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসার পরে মানুষগুলোকে আগুনে স্যাঁকার জন্য তখন মরিয়া এলাকার মানুষ। যে যেমন পারছেন বাড়ি থেকে পাটকাঠি-খড় নিয়ে এসে পাড়ে জমা করছেন। জলে ওঠার পরে আতঙ্কের পাশাপাশি ঠাণ্ডায় থরথর করে কাঁপছিলেন।’’ ওই মানুষগুলোর কথা কি প্রশাসনিক কর্তাদের মনে আছে? কে জানে! কিন্তু বেঁচে যাওয়া মানুষগুলো ওই গ্রামীণ মানুষগুলোকে কি ভুলতে পারেন?

Murshidabad Bus Accident Searching Dead Bodies
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy