বছর পাঁচেকের ছেলেটি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছিল সোমবার কাকভোরেই। বাবার কাছে বায়না করেছিল, ‘‘আব্বু, আজ কিন্তু গরম গরম জিলিপি আনবে।’’
দৌলতাবাদে বালিরঘাটে সেতু থেকে পড়া বাসের চালক সেন্টু বিশ্বাস ছেলেকে কথা দিয়েছিলেন, ‘‘সন্ধ্যায় করিমপুর থেকে ফেরার পথে জিলিপি নিয়ে আসব।’’ রাত বেড়েছে। কিন্তু বাড়ি ফেরেননি সেন্টু। মায়ের কাছে সুভা বারবার জানতে চেয়েছে, ‘‘আব্বু কখন আসবে?’’ কোনও উত্তর দিতে পারেননি সাজিরা বিবি। সেন্টু ফিরেছেন অনেক রাতে। তবে ছেলের জন্য আর জিলিপি কেনা হয়নি। বাড়ির সামনে শববাহী গাড়িটা থামতেই জলঙ্গি নদীর পাড়ে বক্সীপুরের বাড়িতে ভিড় জমান পাড়া-পড়শি-আত্মীয়েরা।
সেন্টুর সঙ্গে ওই বাসেই ছিলেন তাঁর ভাই বাসের কন্ডাক্টর মিন্টু বিশ্বাস। সোমবার সেন্টুর দেহ উদ্ধার হয়েছে। মঙ্গলবার খুঁজে পাওয়া গিয়েছে মিন্টুর দেহ। প্রায় বছর ১২ ‘লাইনে’ থাকলেও কয়েক মাস আগে বাসের স্টিয়ারিং ধরেছিলেন সেন্টু। তাঁর হাত ধরেই বাসে উঠেছিলেন ভাই মিন্টুও। পরিবারের রোজগেরে সদস্য বলতে এই দু’জনই। বৃদ্ধা মা ও পরিবারের আট সদস্য তাঁদের উপরেই নির্ভরশীল। দুই ভাই হলেও সম্পর্ক ছিল একেবারে বন্ধুর মতো। আর তাঁদের এই জুটি দেখে মা রাসেদা বেওয়া বলতেন, ‘‘রোজ ভোরে আমার জোড়ামানিক বেরতো। রাতে বাড়িও ফিরত এক সঙ্গেই। বুক জুড়িয়ে যেত। চলেও গেল একই সঙ্গে।’’
সোমবার ঘটনার পরেই চায়ের দোকানের টিভিতে ভিড় জমেছিল। গ্রামের সকলেই বলাবলি করে সেন্টুর বাস সেতু থেকে জলে পড়েছে। তখন থেকেই ভেঙে পড়ে বিশ্বাস পরিবার। এই বড় সংসার কী ভাবে চলবে বুঝতে পারছেন না কেউ। এক দিকে, পরিবারের দুই ছেলে মারা গিয়েছে। অন্য দিকে, বাসের ৪২ জন যাত্রীর মৃত্যুর পরে আঙুল উঠেছে সেন্টুর দিকেও। বাস চালক সাত্তার বিশ্বাস বলছেন, ‘‘আমার হাত ধরেই সেন্টু লাইনে এসেছিল। প্রায় বছর দশেক বাস চালাচ্ছে। ও এতটা কাঁচা কাজ করতে পারে বলে বিশ্বাস হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy