Advertisement
০১ মে ২০২৪

যুবকের মৃত্যু ঘিরে ধুন্ধুমার বোলপুরে

চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিজের বাড়ি থেকে গত বৃহস্পতিবার তাঁকে বোলপুর থানার পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। রবিবার সেই যুবকেরই দেহ মিলল বোলপুর হাসপাতালের সামনে!

বোলপুর থানার সামনে পড়ে রয়েছে নিথর দেহ। (ইনসেটে) রাজু থান্দার। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

বোলপুর থানার সামনে পড়ে রয়েছে নিথর দেহ। (ইনসেটে) রাজু থান্দার। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৮
Share: Save:

চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিজের বাড়ি থেকে গত বৃহস্পতিবার তাঁকে বোলপুর থানার পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ। রবিবার সেই যুবকেরই দেহ মিলল বোলপুর হাসপাতালের সামনে!

কী ভাবে মৃত্যু হল রাজু থান্দার (২৮) নামে ওই যুবকের, তা ধোঁয়াশায় ভরা। বোলপুর পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দর্জিপাড়ার বাসিন্দা রাজুর স্ত্রীর অভিযোগ, পুলিশ লক-আপে মারধরের জেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এমনকী, টানা তিন দিন রাজুকে থানায় আটকে রাখলেও পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার দেখায়নি। এ দিন বোলপুর হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে রাজুর দেহ এলাকায় ফিরতেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। ক্ষিপ্ত এলাকাবাসীর একাংশ থানায় ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। থানার ভিতরের একটি চায়ের দোকানেও ভাঙচুর হয়। পুলিশ প্রথমে লাঠি চালিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। তাতে কাজ না হওয়ায় পুলিশ রবার বুলেট চালায় বলে অভিযোগ। তাতে দুই মহিলা-সহ মৃতের পাঁচ আত্মীয় আহত হন। তাঁরা বোলপুর হাসপাতালেই ভর্তি। দুই পুলিশকর্মীও ইটের ঘায়ে জখম হন পুলিশের দাবি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আদতে দুর্গাপুরের বাসিন্দা, পেশায় রিকশা চালক রাজু বছর দশেকেরও বেশি সময় বোলপুর শহরের দর্জিপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। এ দিন সকালে তার দেহ বোলপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দেখতে পান স্থানীয়রা। সেখানেই হাজির ছিলেন বোলপুর থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ার। তিনি কিছুই বলতে চাননি। হাসপাতালের একটি সূত্রের খবর, সকাল ১০টা নাগাদ ওই দেহ হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। রাজুর মৃত্যুসংবাদ তাঁর বাড়িতে জানান এলাকাবাসী। খবর পেয়ে দুপুরে হাসপাতালে দেহ দেখতে আসেন মৃতের স্ত্রী, শাশুড়ি এবং অন্য আত্মীয়-পরিজন।

এখনও থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ করেনি মৃতের পরিবার। তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে রাজুর স্ত্রী অন্ন থান্দার দাবি করেছেন, ১১ তারিখ দুপুরে চোর সন্দেহে বাড়ি থেকে রাজুকে বোলপুর পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। শনিবার গভীর রাতে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে রাজুকে নিয়ে এসে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি চালায়। কী কারণে এত দিন তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে, কেনই বা তল্লাশি হচ্ছে, সে সব জানতে চাওয়ায় পুলিশ পরিবারের লোকেদের মারধরের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। থানায় রেখেছে, আর কি খুঁজতে এসেছে জানতে চাওয়ায় মারধর করার ভয় দেখায়। গোটা বাড়ি খুঁজে কিছু না পেয়ে, আবার তাঁকে নিয়ে চলে যায়। অন্ন বলেন, ‘‘আমার স্বামীর হাতের কনুইয়ে কালশিটে দাগ ছিল। আমাকে ও বলে, দিন দুয়েক ধরে পুলিশ খুব মেরেছে। খুব কষ্ট করে হাঁটছিল। হাতও তুলতে পারছিল না। এ দিন সকালে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে, হাসপাতালে দেখতে এলাম। শনিবার রাতেই ওকে পিটিয়ে মেরেছে পুলিশ।’’

রাজুর মৃত্যুর খবরে উত্তেজনা যে ছড়াবে, তা আগাম আঁচ করেছিল বোলপুর পুলিশ। তাই এ দিন থানার গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। বোলপুর লাগোয়া ইলামবাজার, পাড়ুই, নানুর এবং শান্তিনিকেতন থানার চার ওসি বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাফ দিয়ে গোটা থানা ঘিরে রাখেন। তবু গণ্ডগোল এড়ানো যায়নি। দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাজুর দেহ থানার সামনে রেখে শুরু হয় বিক্ষোভ। রাজুর পড়শিদের ক্ষোভ, থানার খুবই কাছে দর্জিপাড়া। তবু পুলিশ যাঁকে তুলে নিয়ে গেল, তাঁর মৃত্যুসংবাদ পর্যন্ত বাড়িতে দিলনা! শেষে পুলিশ জনতাকে হটিয়ে ভ্যানে চাপিয়ে দেহ সৎকারের জন্য পাঠায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE