Advertisement
E-Paper

যৌথ সংস্থার পাট গোটাতে চাইছে নবান্ন

বাম আমলের বিপুল ঋণের বোঝার মতো সেই জমানার যৌথ অংশীদারির সিদ্ধান্তও দুর্বহ হয়ে উঠেছে নবান্নের কাছে। তাই ঠিক হয়েছে, যৌথ অংশীদারি আর নয়।

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০৩:৩৬
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বাম আমলের বিপুল ঋণের বোঝার মতো সেই জমানার যৌথ অংশীদারির সিদ্ধান্তও দুর্বহ হয়ে উঠেছে নবান্নের কাছে। তাই ঠিক হয়েছে, যৌথ অংশীদারি আর নয়। বেসরকারি শিল্প সংস্থার সঙ্গে পৃথক সংস্থা গড়ে (জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি) আর কোনও প্রকল্প তৈরি করবে না রাজ্য সরকার। এমনকী যৌথ উদ্যোগে যে-সব প্রকল্প চালু রয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথও খুঁজছে নবান্ন।

শুরুও হয়ে গিয়েছে সেই প্রক্রিয়া। সাপ মরবে অথচ লাঠি ভাঙবে না, এমন একটা ‘এগ্‌জিট রুট’ বা বেরিয়ে আসার পথ তৈরি করতে মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে অর্থ, শিল্প, আবাসন-সহ বিভিন্ন দফতরের সচিবদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। ৮ মে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে যৌথ উদ্যোগ থেকে সরকারের সরে আসার নীতিগত সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়তে চলেছে বলে নবান্নের খবর। সেই সরে আসাটা ঠিক কোন পথে হবে, আপাতত সেটাই চূড়ান্ত করার প্রস্তুতি চলছে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শিল্প, আবাসন, পুর ও নগরোন্নয়নের মতো দফতরের অধীন সংস্থার সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোগীদের চুক্তির ভিত্তিতে যে-সব যৌথ সংস্থা গড়ে উঠেছে, তার সব ক’টিরই শুরু বাম আমলে। অংশীদার হিসেবে তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জমি-জল-বিদ্যুৎ-রাস্তাঘাটের মতো পরিকাঠামো তৈরি করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু ধীরে ধীরে প্রকল্পগুলির নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছে বেসরকারি সংস্থার হাতে। সবিস্তার সমীক্ষায় নবান্নের কর্তারা দেখেছেন, অনেক যৌথ সংস্থার পরিচালন সমিতিতে খাতায়-কলমে সরকারের প্রতিনিধি থাকলেও কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যত তাঁদের কোনও ভূমিকাই নেই। অথচ যৌথ প্রকল্প বলে তার ক্ষতির দায়ভার নিতে হচ্ছে সরকারকে। ‘‘এই প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার প্রথম থেকেই যৌথ সংস্থা তৈরির ব্যাপারে উৎসাহ দেখায়নি। আর এখন সেখান থেকে পুরোপুরি সরে আসার পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে,’’ বলেন নবান্নের এক কর্তা।

কিন্তু চাইলেই যে সরে আসা যাবে না, তা মানছেন একাধিক দফতরের সচিবেরা। তাঁদের বক্তব্য, মূলত কোষাগারের অর্থ বাঁচাতে বেসরকারি সংস্থাকে জমি ও বিবিধ পরিকাঠামো তৈরি করে দিয়ে যৌথ প্রকল্পে নাম লিখিয়েছিল বিভিন্ন দফতর। এখন বেরিয়ে গেলে যে-পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিপূরণের বোঝা সরকারের ঘাড়ে চাপবে, তা সামলানো কঠিন। সেই কারণে তাদের আইনি উপদেষ্টার পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে।

প্রশাসনের এক কর্তা জানান, যৌথ উদ্যোগের সংস্থায় দু’ধরনের অংশীদারি ছিল সরকারের। কোথাও ৪৯%, কোথাও ১১%। কিন্তু সব মিলিয়ে এমন কত যৌথ সংস্থা তৈরি হয়েছিল, তার হিসেব এখনও স্পষ্ট নয়। তবে কিছু কিছু তথ্য হাতে পেয়েছে সরকার। যেমন, আবাসন শিল্পে ন’টি যৌথ প্রকল্পে সরকারের অংশীদারি ছিল ৪৯% করে। ১৯৯৩-’৯৪ সালে প্রকল্পগুলির সূচনা হয়। পরে একটি প্রকল্প থেকে হাত তুলে নেয় সরকার। আবার ১১% অংশীদারি নিয়ে বেশ কয়েকটি যৌথ আবাসন প্রকল্প তৈরি হয়েছিল। তার মধ্যে তিনটি থেকে অনেক আগে সরে দাঁড়িয়েছে আবাসন দফতর। আট-ন’টি প্রকল্পে অস্তিত্ব রয়েছে কাগজে-কলমে। এবং প্রকল্পগুলিও কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন চালু রয়েছে দু’টি।

একই ভাবে, ২০০৫-’০৬ সালে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ২৭টি প্রকল্প শুরু করেছিল শিল্প দফতর। বেশির ভাগই শিল্পতালুক ও পরিকাঠামো উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্প। উৎপাদনমুখী সংস্থা হাতে গোনা। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রস্তাবিত সাগরবন্দর তৈরির স্বার্থে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ সংস্থা তৈরি করেছিল শিল্প দফতর। সেটা ২০১৫ সালে। এই আমলে সেটাই একমাত্র যৌথ সংস্থা। তবে এখন সেখান থেকেও সরে আসতে চাইছে কলকাতা বন্দর।’’

এই সব মিলিয়ে পথ যে বেশ কঠিন, সরে আসার পথে নেমে তা বুঝতে পারছেন নবান্নের কর্তারা।

Nabanna Mamata Banerjee Partnership
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy