Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

৫ লক্ষ কোটির বেঙ্গল প্যাকেজ চাইছে নবান্ন

অন্ধ্রপ্রদেশকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবি চতুর্দশ অর্থ কমিশন মানেনি। তার জেরেই নরেন্দ্র মোদীর সরকার ছেড়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নায়ডু।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ০৫:২২
Share: Save:

ফের বে‌ঙ্গল প্যাকেজের দাবি!

অর্থ মূল্যে যা প্রায় পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে খোলা বাজার থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ বাবদ ৭৫ হাজার কোটি টাকার অনুদান। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কাছে এমনই দাবি পেশ করেছে রাজ্য সরকার।

২০১৯-এর অক্টোবরে পঞ্চদশ অর্থ কমিশন তাদের রিপোর্ট পেশ করবে। তা চালু হবে ২০২০-এর এপ্রিল থেকে। মেয়াদ পরবর্তী ৫ বছর। প্রশ্ন হল, এমন আর্থিক প্যাকেজের দাবি অর্থ কমিশন মানবে কি? অন্ধ্রপ্রদেশকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবি চতুর্দশ অর্থ কমিশন মানেনি। তার জেরেই নরেন্দ্র মোদীর সরকার ছেড়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নায়ডু।

কোনও একটি রাজ্যের জন্য ঋণমুক্তি প্রকল্প দেওয়াও সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। অতীতে কোনও অর্থ কমিশনই একটি রাজ্যের জন্য এমন কোনও অনুদান দেয়নি। দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন সব রাজ্যের জন্যই ‘ডেট রিলিফ স্কিম’ ঘোষণা করেছিল। রাজ্যগুলির আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরানোর শর্তেই তা দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ তখন বাজেট নিয়ন্ত্রণ আইন চালু করেনি, ফলে তার লাভও ততটা পায়নি। ইউপিএ-২ আমলে অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন প্রণব মুখোপাধ্যায় রাজ্যের পিছিয়ে পড়া এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পে ৮৫০০ কোটি টাকার বিশেষ অনুদান দিয়েছিলেন। চতুর্দশ অর্থ কমিশন চালু করেছিল রাজস্ব ঘাটতি প্রকল্প। সেই খাতে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত রাজ্য পাচ্ছে ১১ হাজার কোটির বেশি। কিন্তু পুরোপুরি ঋণমুক্তি প্রকল্প কখনও মেলেনি।

দাবিদাওয়া

• বাজার থেকে নেওয়া ঋণ শোধে ৭৫ হাজার কোটির বিশেষ অনুদান

• ৬৮৪৯ কোটির কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণ সম্পূর্ণ মকুব

৭৫৮০১ কোটির স্বল্প সঞ্চয় ঋণ মাফ, অথবা ৭% সুদে তার অর্ধেক শোধের সুযোগ

• পরিকাঠামো প্রকল্পে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার কোটির বিশেষ অনুদান

• ৯০ হাজার কোটির রাজস্ব ঘাটতি অনুদান

• পুরসভা গুলির জন্য ২২,০০০কোটি

• পঞ্চায়েতের জন্য ৪২ হাজার কোটি

• অন্যান্য প্রকল্পে আরও ৩১ হাজার কোটি

কমিশন রাজ্যের দাবি না-মানলে ২০২১-এ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা নির্বাচনে নামতে পারেন বলে মনে করছেন নবান্নের কর্তারা। কারণ, তাঁদের দাবি, রাজ্যের পরিস্থিতি একেবারেই ব্যতিক্রমী। ২০১১-এ তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার সময় রাজ্যের ঘাড়ে ২ লক্ষ কোটির ঋণ ছিল। ২০১০-১১-তে ধার করা টাকার ৮৮ শতাংশ সরকারের দৈনন্দিন খরচ চালাতেই লেগে যেত। ফলে বেড়েছে রাজস্ব ঘাটতি। তা থেকে বেড়ে চলা রাজকোষ ঘাটতি আর ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছে রাজ্য। রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (এসজিডিপি) সাপেক্ষে ঋণের পরিমাণ ২৫%-এর কম হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বলে ধরা হয়। ২০১৮-১৯-এর শেষে রাজ্যের ক্ষেত্রে এই হার
দাঁড়াবে ৩৩.৮৫%। আর সেই কারণেই ঋণমুক্তি প্রকল্প দরকার বলে যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে এন কে সিংহের নেতৃত্বাধীন কমিশনের কাছে।

নবান্নের বক্তব্য, ২০১১-১২ থেকে ১০ বছরের মেয়াদি যে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তা শুধতে হবে ২০২০ সাল থেকে। ২০২৫ পর্যন্ত ৯৫,০৯০ কোটি টাকা ঋণ শোধ করতে হবে। এই খাতে ৭৫ হাজার কোটি বিশেষ অনুদান চাওয়া হয়েছে। রাজ্যের ঘাড়ে এখনও ৬৮৪৯ কোটির কেন্দ্রীয় ঋণ রয়েছে। যা মকুবের দাবি করা হয়েছে। ২০১৮-এর ১৮ মার্চ পর্যন্ত রাজ্যের ঘাড়ে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প থেকে নেওয়া ঋণের বোঝা ৭৫ হাজার ৮০১ কোটি। এই ঋণও মকুব, বা অন্তত অর্ধেক ঋণ যাতে মাত্র ৭% সুদে পরিশোধ করা যায়, তার দাবি তুলেছে নবান্ন। এ ছাড়াও রাজস্ব ঘাটতি অনুদান বাবদ ৯০ হাজার কোটি, পরিকাঠামো প্রকল্পে ১ লক্ষ ৪৭ হাজার কোটি, পুরসভাগুলির জন্য ২২ হাজার কোটি, পঞ্চায়েতের জন্য ৪২ হাজার কোটি, আরও নানাবিধি প্রকল্পে ৩১ হাজার কোটি অনুদান চেয়েছে রাজ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna Govt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE