হাতে একে ৪৭ নিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছেন এক যুবক। ছবির উপরে লেখা ‘পাকিস্তানি ভাই’! সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে এমন কিছু ছবির বিষয় পুলিশের গোচরে আসে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানতে পারে, আদতে নদিয়ার বাসিন্দা এক যুবক তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিগুলি পোস্ট করেছেন। তার পরেই এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে তদন্তে নামে নদিয়ার কোতোয়ালি থানার পুলিশ। পহেলগাঁও কাণ্ডের পর এমনিতেই দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটসাঁট করা হয়েছে। এই আবহে নদিয়ার যুবকের ফেসবুক পোস্টে সশস্ত্র ‘পাকিস্তানি ভাইদের’ ছবি শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে ওই যুবকের নাম রানা বিশ্বাস। কৃষ্ণনগর শহর লাগোয়া ভান্ডারখোলা এলাকায় তাঁর পরিবার থাকে। রানার বাবা মুজিবুর বিশ্বাস জানান, ছেলে ১২-১৩ বছর আগে কর্মসূত্রে সৌদি আরব চলে যায়। পরে সেখান থেকে যায় কাতারে। ছেলের সঙ্গে বছর দুয়েক কোনও যোগাযোগ নেই বলেও দাবি করেন মুজিবুর। প্রতিবেশীদের দাবি অবশ্য অন্য। স্থানীয়দের কেউ কেউ জানান, গত ইদেও গ্রামের বাড়িতে ফিরেছিলেন রানা। সেই সময় নাকি প্রচুর পয়সা খরচ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
যাঁকে ঘিরে এই বিতর্ক এবং শোরগোল, সেই রানার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। ‘পাকিস্তানি ভাইদের’ ছবি পোস্ট করা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রানা বলেন, “ভাল লাগে, তাই ছবি পোস্ট করেছি।” কিন্তু কী ভাবে যোগাযোগ হল ‘পাকিস্তানি ভাইদের’ সঙ্গে? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মেলেনি রানার কাছ থেকে। বরং ঘুরে ফিরে তাঁর মুখে বার বার শোনা গিয়েছে একই কথা— “ভাল লাগে, তাই ছবি পোস্ট করেছি।” পুলিশ যে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে, সে কথাও তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন রানা।
আরও পড়ুন:
পুলিশ সূত্রে খবর, যে সমস্ত যুবককে নদিয়ার ওই যুবক ‘পাকিস্তানি ভাই’ বলে উল্লেখ করেছেন, তাদের মধ্যে দু’জন সন্দেহভাজন জঙ্গি। বহু দিন ধরেই ওই দু’জনের নাগাল পেতে চাইছে পুলিশ। কিন্তু কী ভাবে ওই যুবকদের সঙ্গে নদিয়ার যুবকের আলাপ হল, সেই রহস্যের জট এখনও খোলেনি। তবে বিভিন্ন সূত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে, রানা নামের ওই যুবক উর্দু ভাষায় বিশেষ ভাবে দক্ষ। প্রথমে সৌদি আরব, পরে কাতারে গিয়ে তিনি কী কাজ করতেন বা বর্তমানে করেন, সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই তাঁর পরিবারের কারও। এই বিষয়টিও ভাবাচ্ছে পুলিশকে। ওই যুবক ইদে বাড়ি ফিরেছিলেন বলে প্রতিবেশীরা যে দাবি করেছেন, তার সত্যতাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ওই সময়ে এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের গতিপ্রকৃতি জানানো হচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকেও।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার কে অমরনাথ বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি ওই যুবক গত জানুয়ারি মাসে নদিয়ায় ফিরেছিলেন। ওই মাসেই তিনি দুবাই ফিরে যান। সেখানে গিয়ে পশতুন উপজাতির দুই যুবকের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। তাঁদের কথায় ওই যুবক ফেসবুকে ছবিগুলি পোস্ট করেন। প্রাথমিক ভাবে ওই যুবকের জঙ্গি-যোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে দেশের নিরাপত্তার বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত। তাই তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”