নবদ্বীপের চেনা যানজট। ছবি: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
পদে পদে অব্যবস্থা
আজ থেকে ৫৩০ বছর আগে শ্রীচৈতন্যদেব জন্মেছিলেন নবদ্বীপে। কালের নিয়মে অনেক কিছু পাল্টে গিয়ে সেই প্রাচীন জনপদ আজ কারও কাছে মহাতীর্থ আবার কারও কাছে সস্তার প্রসাধনী মাখানো ক্রমশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাওয়া এক অন্ধকার শহর। ১১.৬৬ বর্গ কিলোমিটারের নবদ্বীপ শহরের জনসংখ্যা ১ লক্ষ ২৫ হাজার। শহর লাগোয়া নদিয়া ও বর্ধমান জেলার তিন তিনটে পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার আরও লাখ চারেক মানুষ নিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের চাপ এই শহরের উপর। নবদ্বীপ ধাম এবং বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট রেল স্টেশন আর গঙ্গার পশ্চিমপাড়ের খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে আসেন। দিনের শেষে আবার ফিরেও যান। নবদ্বীপ ধাম রেল স্টেশনের অবস্থা ভাল হলেও, নবদ্বীপের খেয়াঘাট এবং বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনের অব্যবস্থার ছবি প্রতিদিন পর্যটকদের ক্যামেরাবন্দি হচ্ছে। গণতন্ত্রে জনসাধারণের সংখ্যাই নাকি প্রধান ‘ফ্যাক্টর’। কিন্তু খেয়াঘাট এবং বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে বেড়ে চলা যাত্রী সংখ্যা তা মানছে কই? এখানে যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা, স্বাচ্ছন্দের অভাব। নেই শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা। দেখা মেলে না নিরাপত্তারক্ষীরও।
শহরের প্রধান সমস্যা পথের সঙ্কীর্ণতা। বিকেলবেলা বা সন্ধ্যাবেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র পোড়ামাতলায় যাওয়া শহরবাসীর কাছে আতঙ্কের বিষয়। সাইকেল, মোটরসাইকেল, টোটোর পাশাপাশি হরেক কিসিমের গাড়িতে ছয়লাপ শহরের পথঘাট। এ শহরের রাস্তা চওড়া করা কি আদৌ সম্ভব? একমাত্র উপায় পোড়ামাতলায় যা পাওয়া যায়, তা অন্যত্র পাওয়ার ব্যবস্থা করা। পোড়ামাতলার প্রতিষ্ঠিত দোকানগুলি যদি শহরের অন্যত্র শাখা খোলে তাহলে পোড়ামাতলার ভিড় কমতে পারে। সঙ্গে সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত পোড়ামাতলার মোড়ে যান নিয়ন্ত্রনের জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করাও খুব জরুরি।
এখন এই শহরে ‘যেমন খুশি চলো’ প্রতিযোগিতার মতো যেমন খুশি নির্মাণ করা যায়। পুরনো বাড়িগুলোর কথা বাদ দিলেও নতুন তৈরি হওয়া তিন, চার বা পাঁচ তলা বাড়িগুলো নির্মিত হচ্ছে পুর-আইনের তোয়াক্কা না করেই। আট মিটার পর্যন্ত উচ্চতা বিশিষ্ট বাড়ির পিছন দিকে ২ মিটার এবং বাকি তিনদিকে ১.২ মিটার জায়গা ফাঁকা রাখা বাধ্যতামূলক। আর বেশি উচ্চতার বাড়িতে ফাঁকা জায়গা রাখার পরিমাণ আরও বেশি। নিয়মমাফিক জায়গা ফাঁকা না রাখার কারণে বাড়িগুলো অন্ধকার, আলো-বাতাস বর্জিত। শহরে এক কর্মচঞ্চল পুরসভা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে এখানে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ হয়ে চলেছে তা ভাবার বিষয়। হাজার বছরের প্রাচীন শহর নবদ্বীপে এইসব বেআইনি নির্মাণ যে শহরের সৌন্দর্যের হানি ঘটাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।
সায়নি সাহা, ওলাদেবীতলা
শৌচাগার চাই
ইতিহাসের শহর নবদ্বীপে মেয়েরা খুব একটা ভয়ের মধ্যে বাস করেন না। বরং এ শহরের কর্মরত মহিলারা প্রতিদিন কাজ সেরে বাড়ি ফেরেন নিরাপদেই। বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত মহিলারা দিনরাতের যে কোন সময়ে শহরের যে কোনও প্রান্তে নির্ভাবনায় অনায়াসে যাতায়াত করেন। এজন্য বাড়ির লোককে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় না। দোলের মতো উত্সবে দেশ-বিদেশের বহু মহিলা এ শহরে পরিক্রমায় আসেন। তাঁরা নিশ্চিন্তে পরিক্রমা করেন শহরের আনাচ কানাচ। তবুও প্রিয় শহর নবদ্বীপকে আরও সুন্দর করতে কয়েকটি জিনিস ভালবেসে দাবি করছি। প্রতিদিন এই শহরের বহু পর্যটক আসেন, যাঁদের একটা বড় অংশ মহিলা। তাঁদের অবশ্য গন্তব্যস্থানগুলির মধ্যে থাকে উত্তরে প্রাচীন মায়াপুর এবং দক্ষিণে মণিপুর ও কোলেরডাঙা। ওই দুই এলাকায় পোড়ামাতলার মতো সুলভ শৌচাগার জরুরি। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে থাকার দরকার এমন একটি ‘হেল্পলাইন নম্বর’ যেখান থেকে আপদকালীন সময়ের সাহায্য পাওয়া যাবে। শহরের পথে ক্রমশ বাড়ছে অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন। সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন পোড়ামাতলা, রাধাবাজার, রেলগেটের মতো স্থানে স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাফিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা। একদা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নবদ্বীপে আরও বেশি সংখ্যায় ‘কো-এডুকেশন’ স্কুলের ব্যবস্থা হলেও খুব ভাল হয়। কারণ বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের নানা সামাজিক সমস্যা যা থেকে কখনও অপরাধের জন্ম হয়। সামাজিক মেলামেশা সহজ হলে সেই অপরাধ প্রবণতা কমবে। একে অপরের সম্পর্কে রহস্যাবৃত ধারনাগুলি কমাতে সাহায্য করে সহশিক্ষা। আবর্জনা সাফাই করার গাড়ি যেন নিয়মিত ভাবে প্রতিদিন শহর পরিচ্ছন্ন রাখে। আসুন আমরা এই শহরের সাধারণ নাগরিক, পুলিশ এবং মানবাধিকার সংগঠনের সদস্যরা মিলিত ভাবে একটি ফোরাম গড়ে তুলি। যে ফোরাম শহরের অত্যাচারিত, বঞ্চিত মানুষ, বিশেষ করে মহিলাদের পাশে দাঁড়াবে তাঁদের যে কোনও সমস্যায়।
বনানী দাস, বাঁধরোড
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy