Advertisement
২৪ মার্চ ২০২৩

ফের মাদক পাচারে ধৃত ছাত্র, উদ্বেগ

লালগোলার পর এবার রঘুনাথগঞ্জ। মঙ্গলবার কৃষ্ণশাইল গ্রামে মাদক পাচারের সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ল দুই ছাত্র। ধৃত কবীর শেখ জঙ্গিপুর কলেজের কলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। অন্যজন দশম শ্রেণির পড়ুয়া। দু’জনেরই বাড়ি কৃষ্ণশাইল গ্রামে। মঙ্গলবার ভোর ৫টা নাগাদ মাথায় ঝুড়ি চাপিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামের সিভিক পুলিশ আটকায় তাদের। খবর যায় রঘুনাথগঞ্জ থানায়। ঝুড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মেলে ৪০০ বোতল কাশির সিরাপ, যা নেশার মাদক হিসেবে চড়া দামে বিক্রি হয় বাংলাদেশে।

বিমান হাজরা ও শুভাশিস সৈয়দ
রঘুনাথগঞ্জ ও বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১৩
Share: Save:

লালগোলার পর এবার রঘুনাথগঞ্জ। মঙ্গলবার কৃষ্ণশাইল গ্রামে মাদক পাচারের সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ল দুই ছাত্র।

Advertisement

ধৃত কবীর শেখ জঙ্গিপুর কলেজের কলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। অন্যজন দশম শ্রেণির পড়ুয়া। দু’জনেরই বাড়ি কৃষ্ণশাইল গ্রামে। মঙ্গলবার ভোর ৫টা নাগাদ মাথায় ঝুড়ি চাপিয়ে যাওয়ার সময় গ্রামের সিভিক পুলিশ আটকায় তাদের। খবর যায় রঘুনাথগঞ্জ থানায়। ঝুড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মেলে ৪০০ বোতল কাশির সিরাপ, যা নেশার মাদক হিসেবে চড়া দামে বিক্রি হয় বাংলাদেশে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃ্তরা জানিয়েছে, সুতির বাজিতপুর গ্রামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে এই সিরাপ এসেছে। এগুলি পদ্মা পাড়ে বিলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য চারশো টাকা করে পাওয়ার কথা ছিল তাদের। কবীরের দাবি, “গ্রামেরই এক জন ঝুড়ি পৌঁছে দিলে টাকা দেওয়ার কথা বলেছিল। ভেতরে কী আছে জানতাম না।”

গত রবিবার মুর্শিদাবাদেরই লাগোয়া লালগোলা থানার হাসনাবাদ থেকে ৫০০ গ্রাম হেরোইন-সহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল তিন স্কুল ছাত্র। পুলিশ ধৃতদের জেরা করে জানতে পেরেছেদারিদ্র নয়, বাড়তি অর্থ রোজগারের লোভেই তারা পাচারের মত সহজ পথ বেছে নিয়েছে। ওই তিন স্কুল পড়ুয়ার পরিবারিক ব্যবসা রয়েছে ট্রাঙ্ক তৈরির। গ্রেফতারের সময়েও পুলিশ ওই স্কুল পড়ুয়াদের কাছ থেকে দামি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে। এক জন স্কুল পড়ুয়ার গলায় সোনার চেনও ছিল। মাদক পাচারকারী হিসেবে এর আগেও স্কুল পড়ুয়া গ্রেফতারের ঘটনা লালগোলায় ঘটেছে। ২০০৮ সালে লালগোলার সীমান্তে হেরোইন পাচারের সময়ে বিএসএফ জওয়ানদের হাতে ধরা পড়ে ৮ ও ১০ বছরের দুই খুদে পড়ুয়া। গত বছর ২৫ ডিসেম্বর ৫৫০ গ্রাম হেরোইন-সহ রামচন্দ্রপুর এলাকা থেকে এক কলেজ ছাত্র ও এক স্কুল ছাত্রকে ধরেছিল পুলিশ। কৃষ্ণশাইলে ধৃত কলেজ পড়ুয়া কবীরও আগে মাদক পাচারের ঘটনায় বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে জেল খেটেছে।

মাদক চোরা-পাচারে ছাত্ররা জড়িয়ে পড়ছে কী ভাবে?

Advertisement

বহরমপুরের যে বিশেষ আদালতে মাদক মামলাগুলির বিচার হয়, তার সরকারি আইনজীবী উৎপল রায় কারণটা খোলসা করেন। তিনি জানান, মাদক পাচারের মামলা তিন ভাবে বিচার্যকম, মাঝারি ও বাণিজ্যিক। হেরোইনের ক্ষেত্রে ২৫০ গ্রাম, গাঁজার ক্ষেত্রে ২০ কিলোগ্রামের বেশি হলেই বাণিজ্যিক ভাবে পাচারের মামলা রুজু করা হয়। সেই মামলায় জামিনের ব্যবস্থা নেই। তবে, নাবালক হলে জুভেনাইল কোর্টে বিচার হয়। সেক্ষেত্রে ধৃতেরা জামিন পেয়ে যায় সহজে। মাদকের কারবারীরা এটা বুঝেছে বলেই ছোটদের বাহক বা ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে এখন। ছাত্রদের ক্ষেত্রে স্কুলের শংসাপত্র দাখিল করে নাবালক প্রমাণ করা আরও সহজ। তাই প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রদের ‘ক্যারিয়ার’ হিসাবে ব্যবহার করার প্রবণতা বাড়ছে। পাচারকারী হিসেবে নতুন মুখ কাজে লাগানোর পরিকল্পনা থেকেও স্কুল পড়ুয়াদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করছেন পুলিশ-কর্তারা।

কারণ যা-ই হোক না কেন এই প্রবণতায় উদ্বিগ্ন পুলিশ থেকে শিক্ষক, আইনজীবী সকলেই। ভগবানগোলা গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা আলপনা রায়চৌধুরী কিছুটা বাড়ির পরিবেশ, কিছুটা দারিদ্রকে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেন। তাঁর কথায়, “বাড়ির ছেলেমেয়েরা অসৎ ভাবে রোজগার করে আনলে অভিভাবকদের মধ্যেও ওই আয়ের উৎস জানার আগ্রহ থাকছে না। শিক্ষক হিসেবে আমাদের উচিত অসামাজিক কাজ থেকে থেকে বিরত থাকার জন্য ছাত্রদের সামনে বিভিন্ন উদাহারণ সৃষ্টি করা এবং অনুপ্রাণিত করা।” জঙ্গিপুর কলেজের অধ্যক্ষ অসীম মণ্ডল মনে করছেন, সীমান্ত এলাকার পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাব পড়ছে কিশোরদের উপরে। তিনি বলেন, “পাশের কাউকে যখন সে অসামাজিক কারবারে ফুলে-ফেঁপে উঠতে দেখছে, তখন নিজেও সেই জগতে জড়িয়ে পড়ছে।” এই সমস্যার সমাধানে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে জোর দেওয়ার কথা বলেন বহরমপুর জেএন অ্যাকাডেমির প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুহাসরঞ্জন চট্টরাজ। তিনি বলেন, “ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের মধ্যে কোথাও একটা শূন্যতা তৈরি হচ্ছে। সেই শূন্যতা পূরণ করা আশু প্রয়োজন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.